Ssc Scam

‘সবটা কি আমি করি’, রক্ষণাত্মক মমতা

কলকাতা

  ‘‘সবটা কি আমি করি!’’ কেলেঙ্কারির  ‘কুকর্ম’ স্বীকার করে বলছেন মমতা ব্যানার্জি!
২০১৬ সালে মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রীসভার সতীর্থ ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। নিজেকে আড়াল করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কুকর্ম মেনে দায় চাপিয়েছেন বিরোধী দলনেতার দিকে। শুভেন্দু অধিকারীকে ‘গদ্দার’ বলে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘সবচেয়ে বড় কুকর্মটা যে করেছে তার নাম বড় গদ্দার।’’ দুর্নীতির দায় নিজের ওপর থেকে সরাতে তাঁর বক্তব্য,‘‘সবটা আমি করি না।’’ 
শিক্ষক নিয়োগের যে দুর্নীতি ঘিরে রাজ্য রাজনীতি এখন তোলপাড় সেই ২০১৬ সালেই সামনে এসেছিল নারদ ঘুষকাণ্ড। রাজ্য বিধানসভা ভোটের আগে সেবার নারদ ঘুষকাণ্ড থেকে দলকে বাঁচাতে ‘আগে জানলে প্রার্থী করতাম না’, বলেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ২০১৬ সালের ভোটে জেতার পর নারদ ঘুষকাণ্ডে জড়িতদের প্রত্যেককে রাজ্য মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়ে ফিরিয়ে এনেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ঘুষকাণ্ডে তখন অভিযুক্ত ছিলেন আজকের বিরোধী দলনেতাও। এখন সামনে লোকসভার ৩৯টি আসনে এখনও ভোট বাকি আছে। তাই মমতা ব্যানার্জি আমি কিছু করি না বলে দায় এড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় নামতে বাধ্য হয়েছেন। 
শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির রায় বের হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভোল বদলে ফেললেন মমতা ব্যানার্জি। গত সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিসন বেঞ্চে রায় প্রকাশ্যে এসেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনের নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ, গ্রুপ সি-গ্রুপ ডি নিয়োগের মামলায় সীমাহীন দুর্নীতি। ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি চলে যাওয়ার পর উত্তর দিনাজপুরের দুটি জনসভা থেকে বিচারব্যবস্থাকে আগ্রাসী আক্রমণে নেমেছিলেন মমতা ব্যানার্জি।
কিন্তু এদিন পূর্ব বর্ধমানের ভাতাড়ে নির্বাচনী প্রচারসভায় নিয়োগ দুর্নীতির দায় নিজের ওপর থেকে সরাতে শুরু করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘সবটা কী আমি করি। আমি করি না। শিক্ষা দপ্তর আলাদা আছে। এসএসসি আলাদা আছে। প্রাইমারি বোর্ড, মাধ্যমিক বোর্ড আলাদা। কলেজ কমিশনও আলাদা আছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যে আসলে সোমবারের রায়ের প্রতিফলন বলে মনে করছেন প্রশাসনিক মহল। নিয়োগ দুর্নীতিকে আড়াল করতে অতিরিক্ত পদ তৈরি করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল রাজ্য মন্ত্রীসভা থেকে। দুর্নীতি করে নিয়োগ করা আড়াল করতেই যে অতিরিক্ত পদ তৈরি হয়েছিল তা এখন স্পষ্ট। আর রায়ে সেটাই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অতিরিক্ত পদ তৈরি করার জন্য কারা যুক্ত তাদের তদন্তের আওতায় আনবে সিবিআই। ফলে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গোটা মন্ত্রীসভাই এখন দুর্নীতির দায়ে যুক্ত হয়ে পড়েছে। তার ফলশ্রুতিতে মমতা ব্যানার্জি এই মন্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে। 
এসএসসি’র শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির সময়কাল ২০১৬। সেই সময় বহাল তবিয়তে মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রীসভায় আছেন এখনকার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে শুভেন্দু অধিকারী সমানভাবে দায়ী বলে মনে করলেও তাঁর নাম উচ্চারণ করতে ভরসা পাননি মুখ্যমন্ত্রী। দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত জেনেও সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীর নাম উচ্চারণ করতে আসলে তিনি যে ভয় পাচ্ছেন সেটাও ভালো জানেন  মমতা ব্যানার্জি। ‘‘লোকগুলো ভয় পায় বলে মরে। না হলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে পড়তো’  জানিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘ সেদিন পুরুলিয়াতে কে চাকরি বিক্রি করেছিল? নামটা আমি বলবো না। আপনারা খুঁজে নিন। আমার ইশারাই কাফি। সবচেয়ে বড় কুকর্মটা করেছে যে, তার নাম বড় গদ্দার।’’ 
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই মমতা ব্যানার্জি থেকে তৃণমূলের তাবড় নেতারা শুভেন্দু অধিকারীকে ‘গদ্দার’ বলেই সম্বোধন করেন। কিন্তু মমতা ব্যানার্জির মুখ্যমন্ত্রিত্বে নিয়োগ দুর্নীতির শিকড় এতটাই গভীরে যে নিজেকে এবং ভাইপোকে বাঁচাতে এখন নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত জেনেও বিরোধী দলনেতার নাম পর্যন্ত নিতে ভরসা পান না। আসলে আশঙ্কা, এরপর শুভেন্দু অধিকারী মুখ খুলে আরও দুর্নীতির আরও কিছু গোপন বিষয় সামনে এনে ফেলেন। তাই বিরোধী দলনেতাকে এদিন ভাতাড়ের সভা থেকে মমতা ব্যানার্জি তীব্র আক্রমণ করে বলেছেন,‘‘প্রচুর টাকা করেছিস না! বিজেপিতে গিয়ে দালালি করছিস কেন? পাছে সিবিআই ধরে। পাছে ইডি ধরে। পাছে এনআইএ ধরে।’’ 
গত সোমবার যেভাবে নিয়োগ দুর্নীতির রায় নিয়ে আক্রমণাত্মক ছিলেন মমতা ব্যানার্জি এদিন তাঁর থেকে সরে গেছেন। দুর্নীতিকে আড়াল করতে তাঁর মুখ থেকে ভুল হয়ে যাওয়ার কথা পর্যন্ত শোনা গেছে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি এদিন মমতা ব্যানার্জির মন্তব্য,‘‘ চাকরিগুলো না খেয়ে নিয়ে বলতেন, এখানে অসুবিধা আছে। এটা তোমার ভুল হয়েছে। আমরা করে দিতাম। ভুল তো যে কোনও কেউ করতে পারে। তা বলে এক কলমের খোঁচায় ২৬ হাজার ছেলেমেয়ের চাকরি চলে যাবে।’’ 
আসলে গতকালের রায় বের হওয়ার পর থেকে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে বিশেষ কিছু হবে না, এটা মমতা ব্যানার্জি বুঝেছেন। আবার নিয়োগ দুর্নীতির রায় বের হওয়ার প্রভাব ভোটে কী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সেটাও মমতা ব্যানার্জির অজানা নেই। তাই এদিন শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে ‘কুকর্ম হয়েছে’ মেনে নিয়ে এবার নিজেকে সরিয়ে রাখার কৌশল নিয়ে রাখলেন মমতা ব্যানার্জি। এদিন বীরভূমের হাসনের সভা থেকেই মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘আট বছর ধরে যারা চাকরি করছে তাদের চার সপ্তাহের মধ্যে বেতন আট বছরের বেতন সুদ সহ ফেরত দিতে। পারে তারা দিতে ? তাদের অপরাধ কি তারা জানল  না। আমি এদের পাশে আছি, থাকব।’’ 
দুর্নীতির দায়ও এড়াতে হবে। আবার বেআইনি নিয়োগ হওয়া শিক্ষকদের পাশেও দাঁড়াতে হবে। চরম সঙ্কটে রাজ্যের শাসকদল ও সরকার।
 

Comments :0

Login to leave a comment