Modi Opposition

দলীয় সাংসদদের প্রতি উদ্বিগ্ন মোদীর ‘শক্তিশালী লড়াই’র জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ

জাতীয়

Modi Opposition


আদানিকাণ্ড এবং রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল করা নিয়ে পরিস্থিতি যে তাদের অনুকূলে নয়, তা অনুমান করেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করলেন। আগামী কয়েক মাসের জন্য পরপর কর্মসূচীও স্থির করে দেওয়া হল মঙ্গলবার সংসদীয় দলের বৈঠকে। মূলত সাংসদদের নিজেদের এলাকায় গিয়ে প্রচার করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মোদীর সরকারের ৯ বছরের সাফল্যের প্রচার করতে বলা হয়েছে। এদিনের সভায় আদানিকাণ্ড বা রাহুল গান্ধীর বিষয় নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও মোদী বলেছেন, একটি শক্তিশালী লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন। বিরোধীরা যে শক্তিশালী হচ্ছে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগও এদিন প্রকাশ পেয়েছে মোদীর কণ্ঠে। এদিন সংসদ চত্বরেই সংসদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, বিজেপি যত সাফল্য পাবে বিরোধীরা ততই বিজেপি’র বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি দাবি করেছেন, উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যে বিজেপি’র সাফল্যের পর বিরোধীরা এই আক্রমণ করছে। গুজরাট জয়ের পরেও বিরোধীরা এমন কাজ করেছিল বলে তিনি দাবি করেছেন। উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্যের ‘সাফল্যে’র কৃতিত্বও প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে এদিনের সভা থেকে। যদিও ত্রিপুরায় পাঁচ বছর সরকার চালানোর পরে বিজেপি’র ভোট এবং আসন দুই কমেছে। কোনোক্রমে সরকার হয়েছে। গুজরাট ভোটের সঙ্গেই যে হিমাচলে বিজেপি হেরেছে, সেকথাও চেপে যাওয়া হয়েছে। নাগাল্যান্ডে সরকারে থাকা দলের সঙ্গে জোট করে কিছু আসন অতিরিক্ত পেয়েছে গতবারের তুলনায়। তাছাড়া নাগাল্যান্ডে অন্যান্য স্থানীয় দল সকলেই সরকারে যোগ দিয়ে দিয়েছে। ফলে বিরোধী বলতেই কার্যত কিছু নেই। মেঘালয়ে বিজেপি জিতেছে দুটি আসনে। ভোটপ্রচারে যে করনাড সাংমার সরকারকে দেশের সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলেছিলেন অমিত শাহ, ফলপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই ফোন করে তাঁর সঙ্গে গেছেন শাহ। খোদ মোদী ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ সরকারের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন।

এহেন মোদী এদিন সন্ধ্যায় দলীয় দপ্তরের ‘সম্প্রসারিত’ অংশের উদ্বোধন করতে গিয়ে বিরোধীদের আক্রমণ করে বলেছেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্তদের বাঁচাও অভিযান’ শুরু করেছে বিরোধীরা। তারজন্য সবাই এক মঞ্চে আসছে। উল্লেখ্য, আদানিকাণ্ডের পরে বিরোধী দলগুলি সর্বাধিক একজোট হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল হওয়ার পরে শুধু বিরোধী দলগুলির বিষয় নয়, জনমনেও একটা প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে বিজেপি আশঙ্কা করছে। বিশেষ করে আদানি- মোদীর যোগসাজশের বিরুদ্ধে সরব হওয়াতেই তাঁকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে বলে মনে করছেন মানুষ। এই পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদীর উদ্বেগ প্রকাশ হয়ে পড়েছে। লোকসভা ভোটের আর এক বছর বাকি। তার আগে বেশ কিছু রাজ্যে ভোট। এরমধ্যে কর্ণাটকের ভোট দ্বারপ্রান্তে। অধিকাংশ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায়। সরকার হাতছাড়া হলে তার প্রভাব পড়বে লোকসভা ভোটে। সব মিলিয়ে এদিন বিজেপি’র রণকৌশল স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে সাংসদদের বৈঠকে।

বিজেপি প্রধান কর্মসূচি নিয়েছে ওবিসি ভোটারদের দিকে লক্ষ্য রেখে। দেশের জনসংখ্যার অধিকাংশ ওবিসি। ৬-১৪ এপ্রিল সামাজিক ন্যায় সপ্তাহ পালনের জন্য সাংসদদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভীমরাও আম্বেদকরের জন্মদিন ১৪ এপ্রিল। কিন্তু সামাজিক ন্যায় সপ্তাহ পালনের নির্দেশের পিছনে আসল মতলব অন্য। ললিত মোদী-নীরব মোদীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীকে জুড়ে ২০১৯ সালের ভোটের আগে রাহুল গান্ধীর যে মন্তব্য, তা নিয়ে রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ খারিজ করলেও বিষয়টি নিয়ে বিজেপি’র উদ্বেগ আছে। প্রথমে এই লুটেরারা কিভাবে দেশ থেকে পালিয়ে গেল নিরাপদে, মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। দ্বিতীয়ত আদানিকাণ্ডে আরও স্পষ্ট মোদীর আসল চেহারা। ফলে বিজেপি এই ‘মোদী’ মন্তব্যকে জাতিবাদী আবেগে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। নিজের জাতিকে গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে ওবিসি তালিকাভুক্ত করে নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। রাজনৈতিক সুবিধাই এর লক্ষ্য ছিল। এখন উত্তর প্রদেশ-বিহারে ভোটের সময়ে যে পরিচয়ের বহুল ব্যবহার করেন মোদি।

ফলে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে নজর ঘোরাতে তার জাতি পরিচয়কে সামনে এনে বিজেপি গোটা দেশে এই প্রচারে নামছে, মোদীদের চোর বলে আসলে রাহুল গান্ধী ওবিসিদের অপমান করেছেন। এই লক্ষ্যে এদিন রাতেই পৃথক করে ওবিসি সাংসদদের নৈশভোজে ডেকেছেন বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা। জাতভিত্তিক পরিচয়ের ভিত্তিতে যে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানানো যায় সাংসদদের, সেটাও দেখালো বিজেপি। যাই হোক, সেই বৈঠকেই ওবিসি সাংসদদের এই নিয়ে প্রচারের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হবে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গেছে।

আদানির লুট, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ বাতিল, সংসদ চলতে না দেওয়া, গণতন্ত্র বিপন্ন সহ মোদী সরকারের নানাবিধ জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে গোটা দেশেই বিরোধী দলগুলি জোরালো প্রচারে নামছে। সেই প্রচারের মোকাবিলায় ওবিসি আবেগকে ব্যবহার করার কৌশল নিয়ে প্রচারে নামছে বিজেপি। এরপরে মে মাসে সাংসদদের নিজের এলাকায় গিয়ে মোদী সরকারের সাফল্যের প্রচারে নামতে বলা হয়েছে। 

Comments :0

Login to leave a comment