গ্রামের সাধারণ মানুষ পাচার করেন না, চোরাচালান করেন না। কারা করে দেখছেন রাজ্যবাসী। বিএসএফ সাধারণ গ্রামবাসীকে গুলি করে মারে, মিথ্যা মামলা দেয় রাজ্যের পুলিশ। আসল অপরাধীরা কালীঘাটে, আমেদাবাদে। রাজ্যের মানুষ জেগেছেন। বামপন্থীদের আন্দোলনে ঘুম উড়েছে মমতা ব্যানার্জির। তাই দিল্লি থেকে অমিত শাহকে পাঠানো হয়েছে। মমতা ব্যানার্জি, অমিত শাহের মধ্যে কী আলোচনা হলো, তাই সেটা বাইরে আনা যাচ্ছে না। মানুষ বুঝে নিচ্ছেন, মানুষ বুঝে নেবেন। লড়াইয়ের রাস্তাতেই তৃণমূল, বিজেপি বিরোধী মানুষের ঐক্য তৈরি হবে।
রাজ্যের তৃণমূল সরকার আর কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে এই ভাষাতেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মঙ্গলবার ডোমকলে রবীন্দ্র মোড়ে থানা ডেপুটেশনের বিশাল সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি। মাঠে জমায়েতের সকলের জায়গা হয়নি। মাঠ ছোট হয়ে গিয়েছে। ডেপুটেশনের আগে ডোমকল জনকল্যাণ ময়দান থেকে শুরু হয় মিছিল। ডোমকল বাজার, পুরানো বিডিও অফিস পরিক্রম করে মিছিল রবীন্দ্র মোড়ে সভা হয়।
নভেম্বর মাস জুড়ে পদযাত্রা হয়েছে ডোমকলে। জুগিন্দা থেকে কুপিলা, ডোমকলের মানুষ অতিষ্ঠ পুলিশের অত্যাচারে। থানায় অভিযোগ না নিয়ে নাগরিকদের হয়রান করছে পুলিশ। বাইক ধরে হেনস্থা করা হচ্ছে গ্রামের মানুষকে। হেনস্থার প্রতিবাদে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকার দাবিতে ডোমকল থানায় এদিন ডেপুটেশন দেয় সিপিআই(এম)। কার্যত রাস্তায় বসেই মিটিং শোনেন মানুষ। আশেপাশের বাড়ির ছাদ থেকে নির্মিয়মান বাড়ির বারান্দ। চারদিকেই ছিল মানুষের ভিড়।
সেলিম বলেছেন, পুলিশ আর বিএসএফ’র ওপরমহল, রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী, কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর মধ্যে গাঁটছড়া না থাকলে আন্তর্জাতিক চোরাচালান চলে না। কোচবিহার, মালদা, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম থেকে ২৪ পরগনা জুড়ে চলছে চোরাচালান।
দুবরাজপুরের থানায় অনুব্রত মণ্ডলের নামে অভিযোগ দায়ের করিয়ে তাঁর দিল্লিতে জেরা আটকানোর প্রসঙ্গ টেনে আনেন সেলিম। তিনি বলেন, আদালতে জেরা আটকাতে গিয়েছিল হয়নি। দিল্লিতে গেলে অনুব্রত যদি বলে দেয় আসল চোররা কালীঘাটে!
সমাবেশে সিপিআই(এম) ডোমকল এরিয়া কমিটির সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পৌরসভা লুট চলছে। ডোমকলের জন্য কিছুই করেনি তৃণমূল কংগ্রেস। লুটের বিরুদ্ধে জাগছেন মানুষ। গডাঙা কমিটির সম্পাদক রেজাউল করিম বলেন, পুলিশকে বলতে হবে তারা কাদের হয়ে কাজ করবে। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী হয়ে কাজ করা বন্ধ করতে হবে। সমাবেশে অংশ নেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম, পার্টির জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা, রাজ্য কমিটির সদস্য ধ্রুবজ্যোতি সাহা, শেখ হাসিনা, পার্টি নেতা সচ্চিদানন্দ কাণ্ডারী, ইকবাল হক।
মহম্মদ সেলিম বলেন, আরএসএস দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধানকে শেষ করে দেশকে বিরোধীশূন্য করতে চাইছে। মমতাও একই পথে হাঁটছেন। রাজ্যের সংস্কৃতি, সম্প্রীতি নষ্ট করতে আরএসএসের কাছে ঠিকা নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তিনি বলেন, রাজ্যজুড়ে লাল ঝান্ডা শক্তিশালী হচ্ছে। অমিত শাহ উদ্বিগ্ন হয়ে মমতা ব্যানার্জির কাছে জবাব চাইতে এসেছেন। কিন্তু লালঝান্ডাকে শেষ করা যাবে না।
আবাস যোজনায় তুমুল কারচুপি রোখার আহ্বান ধ্বনিত হয়েছে সমাবেশে। বিডিও’দের উদ্দেশ্য করে সেলিম বলেন, আবাস প্লাসের তালিকা মানুষকে দেখাতে হবে। সব তথ্য গ্রাম সভায় জানাতে হবে। গ্রামে গ্রামে নিয়ম মেনে গ্রামসভা করতে হবে। পঞ্চায়েত থেকে নবান্ন সব টাকা আদায় করা হবে। পুলিশ অনুমতি না দিলে রাস্তায় নেমেই মানুষ আন্দোলনে শামিল হবেন।
সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূল, বিজেপিকে নিশানা করেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নের টাকা নিয়ে নয়ছয় হচ্ছে। দশ বছর ধরে সব টাকা মেরেছে তৃণমূল। সংখ্যালঘু উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ থেকে হাসপাতাল, পলিটেকনিক কলেজ কিছুই হয়নি। কেন্দ্রে বিজেপি বসে আছে বলেই তৃণমূল এতো চুরি, বাটপারি করতে পারছে। ধর্মের নামে, জাতের নামে, ভূগোলের নামে ভাগের কারসাজি আর সফল হবে না। গ্রামের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
মহম্মদ সেলিম সমাবেশে বলেন, নির্মাণ শ্রমিকদের সেসের দুশ কোটি টাকা লুট করেছে তৃণমূল নেতার। বিড়ির সেসের টাকা শ্রমিকদের কল্যাণে কাজে লাগানো হচ্ছে না। রাজ্যে কাজ নেই। শিল্প নেই৷ শ্রমিকরা পরিযায়ী হয়ে ভিনরাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রামকে বাঁচাতে, দেশকে বাঁচাতে লালঝান্ডাকে শক্তিশালী করতে হবে।
এদিন সমাবেশের আগে বহরমপুরে সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, আবাস যোজনা স্বজনপোষণের উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পঞ্চায়েত নিজেদের কাজ করছে না। আশা কর্মী, আইসিডিএস কর্মীদের উপর আক্রমন নিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, প্রকল্পকর্মীদের জেনেশুনে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। গ্রামনোন্নয়ন দপ্তরের এই কাজ করার জন্য কর্মী রয়েছে। দুর্নীতি আড়াল করতে সেই কর্মীদের পঞ্চায়েতে কাজের মধ্যে ঢুকতে দেওয়া হয় নি। অন্য কাজ করানো হয়েছে।
এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের গাফিলতির কারণেই আলিগড় মুসলিম বিশ্ব বিদ্যালয়ের শাখা বেহাল। বামপন্থীদের উদ্যোগেই আহিরণ শাখা চালু হয়েছিল। কেন্দ্র আর্থিক বরাদ্দ কমিয়েছে। তৃণমূলের বিধায়ক, সাংসদরা চুপ, তারা ওই জমি দখলের ছক কষছেন। এদিন জ্যোতি বসু রিসার্চ সেন্টারের কাজের জন্য মহম্মদ সেলিমের হাতে দশ হাজার টাকার চেক তুলে দেন বলরামপুর হাইস্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রঞ্জিত কুমার দত্ত।
Comments :0