Budget Agricultural and Rural Job

বাজেটে বরাদ্দ ছাঁটাই কৃষিতে গতবারের প্রকল্প এবার বেমালুম উধাও

জাতীয়

Budget Agricultural and Rural Job


নির্মলা সীতারামনের পঞ্চম বাজেটে গ্রামীণ দুর্দশার প্রতি কোনও দৃষ্টিই পড়ল না। উলটে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ কমে গেল। ২০২২-২৩’র বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১,২৪,০০০ কোটি টাকা। তা এবারের বাজেটে কমে দাঁড়িয়েছে ১,১৫,৫৩১ কোটি টাকা। গত বছরে মোট বাজেটের ৩.৮৪ শতাংশ ছিল বরাদ্দ ছিল কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে। তা এবারে কমে দাঁড়িয়েছে ৩.২০ শতাংশে। 
ছাঁটাই প্রায় সব ক্ষেত্রেই। প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধিতে এক টাকাও বাড়ানো হয়নি। সরকারের নিজেরই হিসাবে যদি ১২ কোটি উপভোক্তার কাছে পৌঁছাতে হয় তাহলে ৭২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনায় ২০২২-২৩-এ ছিল ১৫,৫০০ কোটি টাকা। এবছরে তা করা হয়েছে ১৩,৬২৫ কোটি টাকা। বেজায় ঢাক পেটানো হয়েছিল ‘সবুজ বিপ্লব’ যোজনা নিয়ে। ২০২১-২২-এ বরাদ্দ ছিল ৬৭৪৭ কোটি টাকা। গত বছরে এক পয়সাও বরাদ্দ করা হয়নি, এ বছরেও না। ধরে নেওয়া যায় নিঃশব্দেই এই প্রকল্প তুলে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। 

কৃষকরা মার খাচ্ছেন সারের দামে। কেন্দ্রীয় বাজেটে সারে ভরতুকিতে বড় মাপের ছাঁটাই করা হয়েছে। ২০২২-২৩-এর সংশোধিত হিসাবে সারে ভরতুকি ছিল ২,২৫,০০০ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪-এর বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে ১,৭৫,০০০ কোটি টাকা। কমেছে ২২ শতাংশ, টাকার অঙ্কে ৫০ হাজার কোটি টাকা। কৃষি উৎপাদন, উৎপাদনশীলতায় এই বরাদ্দে ছাঁটাইয়ের বড় প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা। প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই তথাকথিত ‘প্রাকৃতিক কৃষি’ নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। বরাদ্দের সময়ে মাত্র ৪৫৯ কোটি টাকা। অথচ নির্মলা সীতারামন দাবি করেছেন, ১ কোটি কৃষককে এর আওতায় আনা হবে। এমনকি ১০ হাজার জৈব সম্পদ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে ওই টাকাতেই! রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনায় বরাদ্দ গত বছরের ১০,৪৩৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে করা হয়েছে ৭১৫০ কোটি টাকা। সেচ সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রী কিষান সিঞ্চাই যোজনায় বরাদ্দ কমেছে। গত বছরের ১২,৯৫৪ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে এ বছরের বাজেটে করা হয়েছে ১০,৭৮৭ কোটি টাকা।  

ফসলের লাভজনক মূল্যের জন্য এবারের বাজেটেও কোনও পদক্ষেপ নেননি সীতারামন। ন্যূমতম দামের আইনি নিশ্চয়তা দেবার যে দাবি কৃষকরা করে চলেছেন, তা আবারও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। স্বামীনাথন কমিশন ফসলের উৎপাদন খরচের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ যুক্ত করে সহায়ক মূল্য নির্ধারণের যে সূত্র সুপারিশ করেছিল, আবারও তা উপেক্ষিত হয়েছে। উলটে বাজারে হস্তক্ষেপ ও সহায়ক মূল্যের যে প্রকল্প ছিল, যেখানে গত বছরও ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল তা তুলে দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে পিএম-আশা নামে সহায়ক মূল্যের আরেকটি প্রকল্পও কার্যত বিলোপ করে দেওয়া হয়েছে। 
সরকারের শস্য সংগ্রহের কাজও যে কমবে, এ বাজেটে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। খাদ্যে ভরতুকি কমানো হয়েছে ৩১ শতাংশ। গণবণ্টনে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে। জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনে খাদশস্য সংগ্রহের জন্য ২০২২-২৩ সালের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৭২,২৮২ কোটি টাকা। এবার তা কমিয়ে করা হয়েছে ৫৯,৭৯৩ কোটি টাকা। প্রায় ১২ শতাংশ ছাঁটাই। টাকার মূল্যে ১২,৫০০ কোটি টাকা। খাদ্য নিরাপত্তায় সমস্যা তৈরি করার সঙ্গে সঙ্গে কৃষকের আয়ও দারুণভাবেই অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। 

গ্রামীণ দুর্দশার একটি বড় কারণ গ্রামে কাজ নেই। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের বিন্দুমাত্র হেলদোলও যে নেই তা প্রতিফলিত হয়েছে বাজেটে। ২০২২-২৩’র সংশোধিত বাজেটে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের জন্য বরাদ্দ ছিল ১,৫৩,৫২৫ কোটি টাকা। বিপুল ছাঁটাই করে এ বছর তা করা হয়েছে ১,০১,৪৭৪ কোটি টাকা। রেগায় বরাদ্দ ছিল ৮৯,০০০ কোটি টাকা। তাকে এক ধাক্কায় নামিয়ে আনা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকায়। অথচ গ্রামে যদি নিয়ম অনুযায়ী ১০০ দিনেরই কাজ দিতে হয় তাহলে প্রয়োজন ২.৭২ লক্ষ কোটি টাকা। গতকালই পেশ করা অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, রেগার চাহিদা প্রাক-মহামারী পর্ব থেকে বেশি। প্রায় সর্বত্র রেগার কাজের মজুরি বকেয়া রয়েছে। কোনো কোনো রাজ্যে চার থেকে ছ’মাস বকেয়া। এর ফলে কাজের দিন কমছে। আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনার বরাদ্দ গত বছরের ৫৭৫৮ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২২৭৩ কোটি টাকা হয়েছে। গ্রাম ভারতের কাজের সন্ধান দেবার বদলে এই বাজেট হয়ে উঠেছে কাজ কেড়ে নেবার বাজেট। 

গতবারে বাগাড়ম্বর করা হয়েছিল কৃষি পরিকাঠামো তহবিল নিয়ে। ২০২২-২৩—এ বরাদ্দ করা হয়েছিল মাত্র ৫০০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা আরও কমিয়ে করা হয় ১৫০ কোটি টাকা। এবারে আর ওই প্রকল্পের নামোচ্চারণও করা হয়নি। তার বদলে এগ্রিকালচার অ্যাকসেলেরটর তহবিল নিয়ে ঢাক পেটানো হয়েছে। একই পরিণতি হবে, এমন আশঙ্কাই করছেন পর্যবেক্ষকরা। 
সারা ভারত কৃষকসভা এই বাজেটের তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, কর্পোরেটের কথা শুনে বানানো বাজেট। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় যা বলএছেন আর বরাদ্দ যা তাতে বলতেই হয় তিনি অসত্য বলছেন। গ্রাম ভারত এবং কৃষক ও শ্রমিক বিরোধী এই বাজেট। সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন বলেছে, গ্রামীণ মানুষ ও খেতমজুরের জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করা হয়েছে এই বাজেটে।  

Comments :0

Login to leave a comment