বিজেপি সরকারের সময়ে দেশে সরকারি উদ্যোগে একটাও নতুন আন্তর্জাতিক মানের বন্দর ও রাস্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র গড়ে ওঠেনি। উলটে দেশের লাভজনক বন্দর ও রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলিকে আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। জওহরলাল নেহরু বন্দর বেসরকারিকরণ করেছে দেশের বিজেপি সরকার। কলকাতা বন্দরকেও সেই দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই আদানি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নে মিটিং করেছে। তাজপুরে নতুন বন্দর আদানিকে বরাত দেওয়া উপলক্ষ মাত্র। আসলে হলদিয়া বন্দরকে আদানির হাতে তুলে দিতেই এমন পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। বৃহস্পতিবার হলদিয়ায় জলপথ পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের দশম সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে একথা বলেছেন গণআন্দোলনের নেতা মহম্মদ সেলিম।
সমাবেশে তৃণমূল ও বিজেপি’র সম্পর্কে এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন, মমতা ব্যানার্জি নিজের ভাইপো ও পরিবারের লোকেদের রক্ষার জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা করেছে বিজেপি’র সঙ্গে। ওপরে লড়াইয়ের কথা বললেও আসলে সবটাই সমঝোতার উপর টিকে রয়েছে। উত্তরবঙ্গে বিভাজনের খেলা খেলছে এই দুটি দল। রাজবংশী, গ্রেটার কোচবিহারের নামে রাজ্যভাগের চক্রান্ত চলছে। হলদিয়া প্রসঙ্গে সেলিম বলেন,শুভেন্দু অধিকারী এতদিন মমতা ব্যানার্জির ছবি দেওয়া ঝান্ডার তলায় থেকে হলদিয়া শিল্পাঞ্চল থেকে শিল্প কলকারখানা তাড়িয়েছে। তৃণমূলের জামা গায়ে নিয়ে এতদিন তোলাবাজি ও সিন্ডিকেট চালিয়ে এখন সাধু হওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিনই জলপথ পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের দশম সর্বভারতীয় সম্মেলন শেষ হয়েছে। সম্মেলন শেষে হলদিয়ার টাউনশিপ এলাকায় সমাবেশ হয়। এই সমাবেশে মহম্মদ সেলিম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন, ক্যালকাটা পোর্ট অ্যান্ড শোর মজদুর ইউনিয়নের সভাপতি রবীন দেব, সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখার্জি, জলপথ পরিবহণ শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক টি নরেন্দ্র রাও, সিআইটিইউ নেতা সমর মণ্ডল, বিমান মিস্ত্রি। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সি ডি নন্দকুমার। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন গণআন্দোলনের নেতা হিমাংশু দাস, ইব্রাহিম আলি, সুব্রত পন্ডা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এই সমাবেশে মহম্মদ সেলিম বলেন, আধুনিক শহরের উন্নয়নম, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। দেশের অর্থনীতির মূল ক্ষেত্র বন্দর। সমস্ত মুনাফা দেশের কোষাগারে আসে। সেইরকম অর্থনীতির চালিকাশক্তি বন্দরকে ব্যক্তি মালিকানাধীন করার লক্ষ্য নিয়েছে দেশের সরকার। মোদী সরকার দেশের সমস্ত জনসম্পদের টাকা নিয়ে একপেশে নীতি অবলম্বন করে বেনারসকে সাজিয়ে তুলছে। তিনি আরও বলেন, দেশের প্রতিটি বন্দরসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলিকে রক্ষা করার তাগিদ একমাত্র বামপন্থীদের আছে। দেশের প্রতিটি বন্দরের নাব্যতা বাড়ানোর জন্য ক্যাপিটাল ডেইজিংয়ের পরিকল্পনা বামপন্থী সাংসদরাই দাবি করে সংসদে। কলকাতা বন্দরকে আধুনিক রুপ দেওয়ার কারিগর বামফ্রন্ট।
সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলেন, এরাজ্যে বিগত বামফ্রন্ট সরকারের লক্ষ্য ছিল বন্দরকে কেন্দ্র করে শিল্পতালুক গড়ে উঠবে। হলদিয়া শিল্পাঞ্চল তার উদাহরণ। তৃণমূলের সময়ে হলদিয়া এখন কী অবস্থায় তা উপলব্ধি করছেন হলদিয়াবাসী। তিনি বলেন, বন্দরে ঠিকাদার আগেও ছিল। তখন বন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ ছিল। বর্তমান সময়ে কোনও নিয়ন্ত্রণ তো নেই বরং পুরো বন্দরকেই ঠিকাদারের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। তপন সেন বলেন, বন্দর ধ্বংস হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শ্রমিকরা। সাধারণ মানুষের অনুসারী আয় কমবে। সরাসরি আক্রান্ত হবে দেশের অর্থনীতি। দেশের সরকারের বিকৃত অর্থনৈতিক পরিকল্পনার দ্বারা আদতে অনিবার্য ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে দেশ। সিআইটিইউ পরিচালিত বন্দর শ্রমিকরাও ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বন্দর রক্ষা করতে হবে।
সভায় রবীন দেব বলেন, কলকাতায় বন্দর হাসপাতালকে বেসরকারিকরণ করার চক্রান্ত করেছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিআইটিইউ’র আন্দোলনে সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। ২৭বছর আগে বন্দর শ্রমিকদের সম্মেলন হয়েছিল এরাজ্য তথা হলদিয়ায়। তখন সরকার শ্রমিকদের স্বার্থবাহী ছিল। বর্তমান সময়ে মালিকপক্ষের স্বার্থ নিয়ে সরকার শোষণ করছে শ্রমিকদের উপর। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করেছিল। তৃণমূল মানুষের সেই অধিকার হরণ করছে প্রতিমুহূর্তেই। তৃণমূল ও বিজেপি’র এই দলবদলের রাজনীতি আসলে মানুষের উন্নয়নেরই পরিপন্থী। হলদিয়া শিল্পতালুক শেষ হচ্ছে। মানুষ উপলব্ধি করছেন। বামপন্থীরা সাধারণ মানুষের স্বার্থবাহী তা শ্রমিক, কর্মচারী থেকে কৃষিজীবী ও শ্রমজীবী মানুষেরা প্রতিটি মুহূর্তেই নিজেদের জীবনযন্ত্রণা থেকে উপলব্ধির মধ্যে এনেছেন।
সুভাষ মুখার্জি এদিন বলেন, হলদিয়ার শ্রমিকরাও জানেন সিআইটিইউ একমাত্র তাঁদের স্বার্থবাহী। রাজ্যের শাসকদলের ভয়ভীতি, হুমকি,,সন্ত্রাসের কারণে একটু আড়ালে হয়তো আছেন। কিন্তু সমর্থন সিআইটিইউ’র প্রতি আছে। তাই শাসক দল কোনও গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী নয়। দেশের সরকার একদিকে যেমন ব্যাঙ্ক, বিমা বেসরকারিকরণের পথে অগ্রসর হয়েছে, তেমনি রাজ্যের সরকারও শিল্পাঞ্চলগুলিতে তোলাবাজি সিন্ডিকেট চালিয়ে ধ্বংস করার পথে রয়েছে।
Comments :0