ভাস্কর দাসগুপ্ত, পুরুলিয়া
পুরুলিয়ার ছৌ নাচ জগৎখ্যাত। ছৌ নাচের পাশাপাশি বাঘমুন্ডির চড়িদা গ্রামেই মুখোশও তৈরি হয়। গ্রামের প্রতিটি ঘরেই আছেন ছৌ মুখোশ শিল্পী এবং ছৌ নৃত্যশিল্পী। একদিকে রয়েছে পেশার বিভিন্ন সমস্যা। তাঁর মধ্যেও টিকে রয়েছে ওই শিল্প। চলতি বছর ভিলেন হয়েছে বৃষ্টি।
ছোট থেকে বড়, পুরুষ থেকে মহিলা সকলেরই জীবন ও জীবিকা হচ্ছে মুখোশ তৈরি করা। উৎসবের আগে সব শিল্পীদের, মুখোশ শিল্পীদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। শুধুমাত্র মন্ডপ সজ্জার কাজে নয়। অনেক সময় এখানকার মুখোশ শিল্পীরা প্রতিমাও তৈরি করেন। আবার উৎসবের সময় ছৌ মুখোশের একটা আলাদা চাহিদা থাকে। এবারও আছে। পরিবারের প্রত্যেকে এই সময় কাজে হাত লাগান। কিন্তু অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সমস্যায় পড়তে হয়েছে শিল্পীদের। টানা আড়াই মাসের বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমনটাই দাবি করছেন চড়িদার মুখোশ শিল্পীরা।
উৎসবের আগে পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের ছৌ গ্রাম চড়িদার মুখোশ শিল্পীদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। কারোর মুখোশ যাচ্ছে দিল্লি, কারো বা কলকাতা। এবার অবশ্য অনেকেই প্রতিমার কোনো বরাত পাননি। শুধুমাত্র মন্ডপ সজ্জার জন্য মুখোশের বরাত পেয়েছেন। সেই নিয়ে আপাতত সন্তুষ্ট তাঁরা। নতুন করে আবার যে বরাত পাবেন তারও কোন গ্যারান্টি নেই। কারণ আবহাওয়া এবার বাদ সেধেছে। ছৌ মুখোশ শিল্পী বান্টি সূত্রধর জানিয়েছেন এবার দিল্লির ভান্ডারা রোডে মুখোশ যাচ্ছে। ছোট এবং বড় বড় ছৌ মুখোশ যাবে। উৎসবের কয়েকদিন আগে তারা ট্রেনে করে মন্ডপ সজ্জার কাজ করতে যাবেন। কাজ চললেও এবার প্রচুর মুখোশ নষ্ট হয়েছে। বৃষ্টি ক্ষতি করে দিচ্ছে ব্যবসার। এবার বাজার ভালো নেই একেবারে। বৃষ্টির কারণেই মুখোশ তৈরি করতে পারছেন। ১৫-১৬ টি ছৌনাচের দলের মুখোশ তৈরি বরাদ পেয়েছেন কিশোর সূত্রধর। তার মুখেও এক কথা, আবহাওয়া খুব প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে একেবারেই রোদ পাচ্ছেন না তারা। ফাল্গুনী সূত্রধর প্রায় আড়াই লাখ টাকার বরাদ পেয়েছেন কলকাতার বাগুইহাটি থেকে। তাঁর গলায় আক্ষেপের সুর। যদি সরাসরি উদ্যোক্তারা বরাত দিতেন তাহলে বেশি লাভ করতে পারতেন। এখন যারা প্যান্ডেল করছে তারাই মুখোশের অর্ডার দিচ্ছেন। যার ফলে লাভ কমে যাচ্ছে। এমনিই পরবর্তী প্রজন্ম এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছে না। একে রোজগার কম অন্যদিকে কাজের নিশ্চয়তা নেই। সমু সূত্রধরের মুখোশ যাচ্ছে কালীঘাট এবং সোনারপুরে। সেখানে ছৌ মুখোশ দিয়ে ছৌ গ্রাম তৈরি করা হবে। মুখোশ তৈরি করেও তা শুকোতে পারছেন না। উৎসবের আগে চড়িদার মুখোশ শিল্পীদের মনে কোথাও যেন হতাশা।
মন্তব্যসমূহ :0