Adani ports

বন্দর লুট

সম্পাদকীয় বিভাগ

Adani ports

বন্ধু শিল্পপতি গৌতম আদানির স্বপ্ন পূরণে দেশের সমুদ্র ও নদী বন্দরগুলিকে বেসরকারিকরণে অগ্রাধিকার দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বস্তুত ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যেন মোদী সরকারের পাখির চোখ হয়ে উঠেছে বন্দরগুলি। কীভাবে কত তাড়াতাড়ি সেগুলিকে আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া যায় সেটাই একমাত্র ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠেছে। 

গোড়ায় লক্ষ্য জলবন্দরে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তীকালে তা বিমান বন্দরে প্রসারিত হয়েছে। আদানিদের লক্ষ্য দেশের সবকটি জল বন্দর ও বিমান বন্দর নিজেদের কবজায় এনে একচেটিয়া মুনাফা করা। বন্দরগুলি নিজেদের অধীনে চলে এলে অর্থনীতির উপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ জোরদার হবে। অর্থাৎ অর্থনীতি ছড়ি ঘোরাতে পারবে আদানিরা।
ইতিমধ্যেই দেশের অধিকাংশ জলবন্দর ও বিমান বন্দর নরেন্দ্র মোদীর কল্যাণে আদানিদের দখলে চলে গেছে। এখন জোর তৎপরতা চলছে বাকিগুলোও দখলে আনার। আর সেজন্যই করোনা অতিমারীর মধ্যে তড়িঘড়ি মেজর পোর্ট ট্রাস্ট আইন (১৯৬৩) সংশোধন করা হয়েছে। 

স্বাধীনতার পর সরকারি উদ্যোগে মুম্বাই, কোচিন, চেন্নাই, কলকাতা, বিশাখাপত্তনম সহ বেশ কিছু বড়বড় বন্দর তৈরি হয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য এবং আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে এই বন্দরগুলিই আসল খুঁটি। এই বন্দরগুলিকেই এখন এক এক করে আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। নবি মুম্বাইয়ের জওহরলাল নেহরু বন্দর ইতিমধ্যেই আদানিরা পেয়ে গেছে। এখন হাতাতে চাইছে কলকাতা-হলদিয়া বন্দরও। বড় বন্দরগুলি শুধু বন্দর নয়, এদের হাতে আছে শহরাঞ্চলে শত শত একর জমি। আদানিদের লক্ষ্য সেই জমিও।


নতুন প্রজন্মের শিল্পপতি গৌতম আদানির উত্থান গুজরাটে মোদী জমানায়। জলের দরে বিপুল জমি নিয়ে বন্দর ও মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল তৈরি করে তারা। সরকারি বদান্ততায় আজ সেই বন্দর দে‍‌শের অন্যতম বৃহৎ বন্দর। সেই সময়ের গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী আজ দেশে প্রধান মন্ত্রী। সেই সূত্র ধরে আদানিরাও গুজরাটের গণ্ডি পেরিয়ে গোটা দে‍‌শের শীর্ষ শিল্পপতি হয়ে উঠেছে। মোদী সরকারের বেসরকারিকরণ নীতির হাত ধরেই আদানিদের থলিতে জমা হচ্ছে একটার পর একটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। তাদের স্বার্থের আইন বদল হচ্ছে। 

বেসরকারিকরণের ফলে শুধু মালিকানাই হস্তান্তরিত হচ্ছে না, একই সঙ্গে শ্রমি-কর্মচারীদের জীবনে নামছে দীর্ঘশ্বাস। শুরুতেই ছাঁটাই হয়ে যাচ্ছেন একাংশ শ্রমিক। বাকিদের মধ্যে অস্থায়ী বা‍‌ ঠিকা শ্রমিকের পাল্লা ভারী হচ্ছে। ফলে অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হচ্ছে। মজুরি কমে যাচ্ছে অনেকটা। চাকরির অস্থায়িত্ব ও অনিশ্চয়তা তীব্র হচ্ছে।


মোদী সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করে এরাজ্যের তৃণমূল সরকারও বেসরকারিকরণকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাজপুরে সমুদ্র বন্দর নির্মাণের বরাত আদানিদের দেবার আড়ালে আসলে কলকাতা-হলদিয়া বন্ধর হাতানোর গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ইতিমধ্যেই আদানিরা একাধিকবার নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শলাপরামর্শ করে গেছেন। রাজ্য সরকারের তরফে বাধা থাকলে কলকাতা বন্দর পাওয়া কঠিন। তাই আদানিরা কৌশলে তাজপুর সমুদ্র বন্দরের দায়িত্ব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হতে চাইছেন। তাজপুরকে সামনে রেখেই কলকাতা-হলদিয়া বন্দর দখলের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

Comments :0

Login to leave a comment