adenovirus West Bengal

জ্বর, শ্বাসকষ্টে মহানগরে মৃত্যু আরও ৪ শিশুর

রাজ্য

adenovirus West Bengal

শুক্রবারও কলকাতায় জ্বর, শ্বাসকষ্টে আরও চার শিশুর মৃত্যু খবর মিলেছে। সব মিলিয়ে গত ১০ দিনে রাজ্যে ৩০টি’রও বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কলকাতার শিশু হাসপাতালগুলি ছাড়াও বাঁকুড়া, বর্ধমান, উত্তরবঙ্গের হাসপাতাল থেকে শিশু মৃত্যুর খবর মিলছে। বিভিন্ন সূত্রের খবর, চলতি মরশুমে অর্থাৎ গত ২মাসে রাজ্যে ৬৫-র বেশি শিশু মারা গেছে জ্বর শ্বাসকষ্ট নিয়ে। কিছুতেই রাশ টানা যায়নি এই শিশু মৃত্যুর ঘটনায়।


সন্তানহারা মা-বাবার হাহাকারে ভরছে একের পর এক হাসপাতাল। প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে শিশু জ্বর শ্বাসকষ্ট, নিয়ে সংঙ্কটজনক অবস্থায় পৌঁছাচ্ছে হাসপাতালে। আইসিইউ-তে মিলছে না ঠাঁই, একই বেডে রাখা হচ্ছে দু-তিন জনকে। চূড়ান্ত অভাব ভেন্টিলেশনেরও, বাড়ছে রেফার কেস। সব মিলিয়ে জেরবার রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসন। উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের প্রশ্ন, গত এক মাসেও কেন সামাল দেওয়া গেল না স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর এই বেহাল দশা। এছাড়াও আদৌ সব শিশুর অ্যাডিনো ভাইরাসের পরীক্ষা করা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই নিউমোনিয়া বলে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। তবে মৃত শিশুদের অনেকেরই শরীরে অ্যাডিনো ভাইরাস মিলেছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। অথচ সরকারিভাবে গত ১ মাসে মাত্র ১২টি শিশুর মৃত্যুর খবর প্রকাশ করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ হিসাবে খাড়া করা হয়েছে কোমর্বিডিটিজ তত্ত্ব।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুরের মধ্যে কলকাতার বি সি রায় শিশু হাসপাতালে আরও ৪টি শিশু মারা গেছে বলে জানা গেছে। উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের বাসিন্দা এক পরিবারের ১১ মাসের শিশু সন্তান বেশ কয়েক দিন ধরেই ভুগছিল জ্বর কাশি ও শ্বাসকষ্টে। রবিবার তাকে ভর্তি করা হয় কলকাতার বি সি রায় শিশু হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। তার শরীরে অ্যাডিনো ভাইরাস মিলেছে বলে জানা গেছে। এই হাসপাতালেই রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ ১ বছর ৩ মাসের একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে বারাসতের একটি ১০ মাসের শিশুও এদিন মারা গেছে বি সি রায় হাসপাতালে। প্রায় ১০ দিন ধরে তার চিকিৎসা চলে হাসপাতালে। শুক্রবার তার মৃত্যু হয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনার মসলন্দপুরের বাসিন্দা এই পরিবারের শিশু সন্তান বুধবার অসুস্থ হয়ে পড়ে জ্বর ও স্বাসকষ্টজনিত কারণে। তাকে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রেফার করা হয় কলকাতার বি সি রায় শিশু হাসপাতালে। শেষ রক্ষা হয়নি, শুক্রবার মারা যায় সে। এর ঘণ্টাখানেক পরেই আরও একটি শিশুর মৃত্যু সংবাদ মেলে এই হাসপাতাল থেকেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কামালগাজির বাসিন্দা এক শিশুকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যানিং হাসপাতালে। সেখান থেকে রেফার হয়ে চিত্তরঞ্জন সেবা সদন, সেখান থেকে ফের বি সি রায় শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুটিকে। সেখানে এদিন মৃত্যু হয়েছে তার। 
বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরলেই উঠে আসছে অব্যবস্থার নানা ছবি। উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের কান্না হাহাকার আর হতাশায় ভরছে হাসপাতাল চত্বর। বি সি রায় হাসপাতাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ইন্সটিটিউট অব চাইল্ড হেলথ, চিত্তরঞ্জন সেবা সদন— ব্যাপক সংখ্যায় অসুস্থ শিশুর ভিড়ে মিলছে না ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের বেড। কলকাতা সহ জেলাগুলিতে বিভিন্ন হাসপাতালেও একই অবস্থা। কোথাও ভেন্টিলেটরের অভাব, কোথাও অমিল চিকিৎসার উপযুক্ত সরঞ্জাম। অবস্থা সামাল দিতে একই বেডে ২-৩ টি শিশুকে রাখতে হয়েছে। চিকিৎসকদের বক্তব্য, এতে সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে বহুগুণে।


অন্যদিকে বাড়ছে রেফার কেস। রেফার রুখতে বারবারই সরকারি তরফে নানা নির্দেশিকা জারি হয়েছে। কিন্তু অবস্থা যে কে সেই। বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকদের বক্তব্য, সরকার একদিকে বলছে রেফার চলবে না, অন্যদিকে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রগুলিতে দিনের পর দিন বেহাল পরিকাঠামো হয়ে রয়েছে, কোনও নজর নেই। ফলে রেফারের প্রশ্ন আসছে। শিশুদের মৃত্যুর জন্য কম ওজন এবং কোমর্বিটিজকে দায়ী করছে সরকার। হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসা পরিষেবা বাড়ানো হয়েছে বলে নানা গালভরা প্রচার চলছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা টের পাওয়া যাচ্ছে হাসপাতালগুলিতে গেলে।

Comments :0

Login to leave a comment