আবাস যোজনার তলিকায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। কোথাও বিক্ষোভের জেরে গা ঢাকা দিচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান, প্রশাসনিক আধিকারিকরা, পণ্ড হচ্ছে গ্রামসভা। আবার কোথাও চুপিসারে গ্রামসভা ডেকে নিজেদের মধ্যে ফয়সালা করে তালিকায় বেলাগাম স্বজনপোষণ চলছে গ্রামবাসীদের অজান্তে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, আবাস যোজনা প্রকল্পে যে সমস্ত মানুষের নাম রয়েছে সেই তালিকা প্রকাশ্যে আনতে হবে। অপরদিকে গ্রাম পঞ্চায়েতের তরফ থেকে বলার চেষ্টা হচ্ছে প্রাপকদের নামের তালিকা প্রকাশ্যে আনা যাবে না। এই নিয়ে সর্বত্রই দেখা দিচ্ছে চরম ক্ষোভ। শুক্রবারও একই ঘটনা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরে গ্রামসভা সভা ডাকা হয়েছিল। হাজিরা খাতায় সই করার আগে গ্রামের মানুষ আগে আবাস যোজনার তালিকা প্রকাশ করার দাবি জানান। এরপর আলোচনা সভা শুরু করার প্রস্তাব দিয়ে নানা প্রশ্ন তোলায় ব্লক প্রশাসন সভা বন্ধ করে চম্পট দেয় বলে অভিযোগ। রীতিমতো কারসাজি করে গ্রামের মানুষের স্বাক্ষর নিয়ে ভুয়ো এবং গলদে ভরা আবাস যোজনার তালিকা পাশ করানোর চেষ্টা চালানোর অভিযোগ তুললেন সভায় উপস্থিত গ্রামের মানুষ।
এই ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ১ নম্বর ব্লকের মনোহরপুর দুই গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরে। গ্রাম পঞ্চায়েত উপপ্রধান সঞ্জয় অধিকারিককে সামনে পেয়ে অনেকে বলে ওঠেন, ‘‘আপনি এক জন চোর। দু- দুবার হাজার টাকা নিয়েও এখনেও গ্রামের মানুষের শৌচাগার, ঘর করে দেননি। সেই বরাদ্দ টাকা পুরোটা চুরি করে নিয়েছেন। গরিব মানুষকে বঞ্চিত করেছেন।’’ এমন উত্তপ্ত পরিবেশে শাষকদলের জনপ্রতিনিধি সহ সরকারি কর্মীরা নীরব থাকেন।
এদিকে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ায় পণ্ড হলো গ্রামসভার বৈঠক। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী ১০ শতাংশ হারে উপস্থিতি হতে দরকার ছিল ১৬০০ জন।। কিন্তু উপস্থিত হলেন মাত্র ৭০-৮০ জন। যদিও শেষমেশ পণ্ডই হয়ে গেল গ্রামসভার সভা। পঞ্চায়েত সচিব তথ্যই পেশ করতে ব্যর্থ হন সেখানে। অনুপস্থিত থাকেন পঞ্চায়েত প্রধান। বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটে বাদুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির চণ্ডীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে।
সভায় উপস্থিত গ্রামবাসীরা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী নারায়ণ সরকারকে সভাপতি নির্বাচিত করেন। উপপ্রধান যাদব পাল তাতে সম্মতি জানান। সভায় সভাপতি সরকারি নির্দেশনামা অনুযায়ী তথ্য পেশ করতে বলেন। পঞ্চায়েত সচিব তথ্য পেশ করতে ব্যর্থ হন। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী আবাস প্লাস তালিকাও সভায় পেশ করতে পারেননি তিনি। স্থানীয় মানুষের অভিজ্ঞতা, বেশিরভাগ সংসদ সভা আয়োজিত হয়নি। কিন্তু আধিকারিকরা সংসদ সভা হয়েছে বলে উল্লেখ করতেই শুরু হয় বাক-বিতণ্ডা। আধিকারিকদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে সভায় উপস্থিতরা তীব্র প্রতিবাদ করেন।
অন্যদিকে শুক্রবার উত্তাল হয়ে উঠল বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের খাতড়া এলাকা। বঞ্চিত মহিলারা রান্না বন্ধ করে শামিল হলেন বিক্ষোভে। শুক্রবার একদিকে খাতড়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে এলাকার মানুষ যখন তালা দিয়ে পঞ্চায়েত অফিস বন্ধ করে খাতড়া-সিমলাপাল রাস্তায় পথ অবরোধে বসেছেন, তখন কিছুটা দূরে ব্লক এলাকার অন্যান্য প্রান্ত থেকে একই অভিযোগ নিয়ে আসা গ্রামবাসীরাও খাতড়া বিডিও অফিসে তালা মেরে দিলেন। এই ঘটনায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে খাতড়ার বুকে।
এদিন খাতড়ার রাজাপাড়া, চুয়াকানালী, চন্দনা সহ একাধিক এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাঁরা মাটির বাড়িতে বাস করেন। যেখানে বাস করেন সেই বাড়িও যে কোনদিন পড়ে যাবে। যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে তাঁদের নাম নেই। কেন তাঁদের নাম নেই পঞ্চায়েত কোনও সদুত্তরও দিতে পারেনি। অসংখ্য ক্ষুব্ধ মানুষ এদিন খাতড়া-সিমলাপাল রাস্তায় ১নং গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে তালা লাগিয়ে দেন। তাঁরা রাজ্য সড়ক অবরোধে করেন। সকাল সাড়ে এগারোটা থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। চলে প্রায় তিনটা পর্যন্ত। খাতড়া থানার দহলা, ধানাঢ়া, সুপুর সহ একাধিক অঞ্চল এলাকা থেকে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা গিয়ে খাতড়া ব্লকে এসে অফিস বন্ধ করে দেন।
আবাস যোজনার দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে আলিপুর দুয়ারের ফালাকাটা দেওগাঁও গ্রাম পঞ্চাযয়েত অফিসে ধুন্ধুমার কাণ্ড! সরকারি নিয়মে আছে গ্রাম সভার জন্য একদিন আগে সরকারিভাবে সেই এলাকায় সভার ঘোষণা করা হবে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কাউকে না জানিয়ে সকাল ১১টায় চুপিসারে গ্রাম সভার আয়োজন করা হয়েছিল দেওগাঁও গ্রাম পঞ্চায়েতর অন্তর্ভুক্ত শুকচাঁদ জুনিয়র বেসিক স্কুলের মাঠে।
অল্প সময়ের মধ্যেই খবর ছড়িয়ে পড়ে গ্রামবাসীরা জড়ো হতেই দপ্তরের আধিকারিকরা এলাকা ছেড়ে চম্পট দেন বলে অভিযোগ। এর পরেই গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েত অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের দাবি, যতক্ষণ না পর্যন্ত ব্লকের আধিকারিকরা এসে আশ্বস্ত করবেন তাঁরা এভাবেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকবেন। গ্রামের মানুষের প্রশ্ন, শাসক দলের দুর্নীতিকে আড়াল করতেই কি কাউকে না জানিয়ে গ্রাম সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সরকারি নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে লুট করছে শাসক দল। আমরা চাই যোগ্য ব্যক্তির আবাস যোজনার তালিকা তৈরি করে অযোগ্যদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।
Comments :0