Heavy Rain in Cochbihar

জলমগ্ন কোচবিহার, বন্যার কবলে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার

রাজ্য জেলা

ছবি- অমিত কুমার দেব

অমিত কুমার দেব: কোচবিহার
উত্তরবঙ্গ ও পাহাড়ে লাগাতার ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তরবঙ্গের সমস্ত নদীর জল বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। তিস্তা, তোর্ষা, মহানন্দা, জলঢাকা, মানসাই সহ বিভিন্ন নদীর জলস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে জলমগ্ন কোচবিহার শহরের ১৬ এবং ১৮নম্বর ওয়ার্ডের পাটাকুড়া ফাঁসিরঘাট এলাকার তোর্ষা নদী পাড়ের জনবসতি এলাকা। প্রায় দেড় শতাধিক পরিবার এই মুহূর্তে বন্যার কবলে। বন্যা কবলিত দুর্গত মানুষের জীবনধারণ করা এই মুহূর্তে হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। ইতিমধ্যে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পাড়ি দিতে শুরু করেছেন তারা।
প্রবল বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদী দিয়ে ভেসে আসছে বিভিন্ন গাছের গুঁড়ি এবং কাঠের লগ। নদীতে কাঠ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ৩জন। এদের মধ্যে মাথাভাঙ্গা ১নং ব্লকের কেদারহাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ২জন এবং মাথাভাঙ্গা ২নং ব্লকের শিলবাড়িঘাট এলাকার একজন। কেদারহাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মানসাই নদীতে এই কাঠ সংগ্রহ করতে নামেন ৪ জন। এদের মধ্যে দুজন নদী থেকে উঠে আসতে সমর্থ হলেও আরও দুজনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে মাথাভাঙ্গা ২নং ব্লকের শিলডাঙ্গা এলাকায় একই ভাবে কাঠ ধরতে তোর্ষা নদীতে নামেন ৩জন। এদের মধ্যে দুজন নদী থেকে উঠতে পারলেও একজন ভেসে যান নদীর প্রবল স্রোতে। এই ঘটনার উদ্বিগ্নতা ছড়িয়ে পড়েছে গোটা জেলা জুড়ে। শিলবাড়ি ঘাটের বাসিন্দা রফিকুল মিঞা। তার দুজন সঙ্গীর সাথে এদিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তোর্ষা নদীতে নামে এই কাঠ সংগ্রহ করতে। তার দুজন সঙ্গী নদী থেকে উঠতে সমর্থ হলেও নদীর স্রোতের মাঝে পড়ে যান তিনি এবং কাঠের গুঁড়ি ধরে বাঁচবার চেষ্টা করেন। এরপর তার কোন খোঁজ মেলেনি। তাকে খোঁজ করতে কোচবিহার শহরে তোর্ষা নদীর ফাঁসির ঘাট এলাকায় এদিন চলে আসেন তার ভাই। কিন্তু খোঁজ মেলেনি তার।
জলমগ্ন কোচবিহার শহর সহ জেলার বিভিন্ন এলাকা। রীতিমতো বন্যা পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জেলাবাসী। কোচবিহার জেলায় প্রবল বর্ষণে ব্যাপক হারে জল বেড়েছে জেলার প্রায় সবকটি নদীতেই। তোর্ষা, রায়ডাক, গদাধর, কালজানি, সিঙ্গিমারি। এই পরিস্থিতিতে প্রবল নদী ভাঙ্গনের আশঙ্কায় ভীতসন্ত্রস্ত  জেলার  নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা। ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তোর্ষা নদী। তোর্ষা নদী দিয়ে ভেসে যায় একাধিক গাছের গুঁড়ি। তোর্ষা নদীতে জল বাড়ার ফলে নদী পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের সামগ্রী সরাতে শুরু করেছেন। শনিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত কোচবিহারে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় ১৯০মিলিমিটার। রাতভর ভারী বর্ষনের ফলে জলমগ্ন মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালের পুরুষ বিভাগ। জল ভেগাস চলাচল করতে ভোগান্তি রোগী থেকে শুরু করে কর্তব্যরত  নার্স ও চিকিৎসকদের। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার কারণেই এই সমস্যা
মাথাভাঙ্গায় অনবরত বৃষ্টির জেরে জল বেড়েছে জলঢাকায় ,জলঢাকার জলে বন্যা পরিস্থিতি মাথাভাঙ্গা ১নং ব্লকের কেদারহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের  জোরশিমুলি এলাকা। সরকারি সাহায্যের আবেদন এলাকাবাসীর।
মাথাভাঙ্গা শহর সংলগ্ন পচাগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মানসাই নদীর জলে প্লাবিত একাধিক বাড়ি। বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয়ের খোঁজে গ্রামবাসীরা।
লাগাতার বৃষ্টিতে কার্যত জলমগ্ন হয়ে পরে তুফানগঞ্জ শহরের বিভিন্ন রাস্তা। ইলেকট্রিক অফিস মোড়, বিডিও অফিস মোড়, সি আই মোড় , ধরের মোড় সহ একাধিক জায়গা জলমগ্ন হয়ে পরে। পাশাপাশি রাস্তার ওপর দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় স্রোত বইতে দেখা যায়। এদিন প্রবল ঝড় বৃষ্টির সময় বাজ পরে গুরুতর অসুস্থ হন এই তুফানগঞ্জ মহকুমার দক্ষিণ চিলাখানা এলাকার এক মহিলা। দ্রুত তাকে নিয়ে আসা হয় তুফানগঞ্জ হাসপাতালে। বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন। অসুস্থ মহিলার নাম ছবিয়া বিবি (৪৬)। পরিবারের তরফ থেকে জানা যায়, বৃষ্টিতে সময় ঘরের মধ্যে কুড়ুল দিয়ে খড়ি কাটছিলেন। সেই সময় বাজ পরে, তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পাশেই ছিলো তাঁর ছেলে। দ্রুত তাকে নিয়ে আসে তুফানগঞ্জ হাসপাতালে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।
শনিবার ও রবিবার দুপুর পর্যন্ত টানা বর্ষণে তুফানগঞ্জ মহকুমার ৪টি নদীতে বেড়েছে জল।  টানা বর্ষণের ফলে রবিবার তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের মহিষকুচি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ফেরসা বাড়ি এলাকায় দুটি বাড়িতে গাছ পড়ে বিপর্যস্ত হয়। অপরদিকে একই গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর এলাকার ও রামপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাড়াবাড়ি এলাকায় রায়ডাক নদীর বাঁধ ভেঙে প্রায় ৫০টি বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এছাড়াও ভেঙে যায় যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা।
নদী ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার নিয়েছে জেলার দিনহাটা  মহকুমায়।  ইতিমধ্যেই নদী ভাঙনের আতঙ্কে ভুগছেন দিনহাটা ১নং ব্লকের সিঙ্গিমারি নদীর পার্শ্ববর্তী ওকড়াবাড়ি , গীতালদহ এলাকার বাসিন্দারা।

Comments :0

Login to leave a comment