জলপাইগুড়ি শবদেহ কান্ডে সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক অঙ্কুর দাসকে মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে পাঠায় জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ। সেখানে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার মায়ের মৃতদেহ তুলে নিয়ে যাচ্ছিল ক্রান্তির এক পরিবার। অর্থাভাবে মায়ের মৃতদেহ গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সামর্থ ছিলনা পরিবারের। বেসরকারি শববাহী যান চালকের দাবি ৩ হাজার টাকা। কিন্তু সেই টাকা ছিল না মৃতের ছেলের কাছে। তাই মৃত দেহ কাঁধে তুলে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। সেই ঘটনা সামনে আসতেই বিতর্ক তৈরি হয়। জানা যায়, ঘটনার দিন মৃতদেহ যখন নিতে অস্বীকার করে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স সেই সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অঙ্কুর দাস। সেই অঙ্কুরকেই গ্রেপ্তার করল জলপাইগুড়ি পুলিশ।
অভিযোগ, পরিকল্পনামাফিক গোটা ঘটনার ছবি তুলে অ্যাম্বুল্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ও সরকারের মর্যাদাহানি করেছেন তিনি। ঘটনায় সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক অঙ্কুর দাসের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের করে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালক সংগঠন। তাদের অভিযোগ, গোটা ঘটনা সাজানো এবং উদ্দেশ্য প্রনোদিত। সরকারকে বদনাম করতে মৃতের পরিবারকে ব্যবহার করে গোটা ঘটনা সাজিয়ে ছিলেন অঙ্কুর। হাসপাতাল থেকে তিনশো মিটার দূরে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন তিনি। সামান্য এই পথ মৃতদেহ ঘাড়ে করে নিয়ে যেতে বাধ্য করেন। এবং সেই ছবি ভাইরাল করেন। ঘটনায় কয়েকজন সাংবাদিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। ঘটনা প্রকাশ পেতে এলাকার মানুষের মধ্যে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। কিছু মানুষের কথা অনুসারে মৃতদেহ বাড়ি প্রর্যন্ত পৌঁছে দিতে যারা সাহায্য করল তাদেরকেই গ্রেপ্তার করল পুলিশ।
বুধবার গ্রীন জলপাইগুড়ি স্বেচ্ছা সেবী সংস্থার সম্পাদক অঙ্কুর দাসকে কতোয়ালি থানার পুলিশ জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর করেন।
আদালত প্রাঙ্গনে থেকে সমাজ কর্মী অঙ্কুর দাসকে পুনরায় থানার লক আপে নিয়ে যাবার পথে সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশ্যে অঙ্কুর দাস জানিয়ে জান,‘ধর্ম যুদ্ধে জয়ী হয়েই ফিরবো’।
অন্যদিকে জানা গেছে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা পরেছে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে। তদন্তে হাসপাতালে তিন নিরাপত্তা রক্ষীর কর্তব্যে গাফিলতি ধরা পরেছে। এমএস ভিপি কল্যাণ খাঁ এদিন জানান, এই তিন নিরাপত্তা রক্ষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ শুরু করছে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
জলপাইগুড়ি কোতয়ালি থানার পুলিশ জানালেন জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ মাহাত জানিয়েছেন, এই ঘটনা ষড়যন্ত্র করে ঘটানোর অভিযোগে সেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্পাদক অঙ্কুর দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন সরকারকে বদনাম করতে চক্রান্ত করে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছিল তাই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সমাজসেবী অঙ্কুর দাসের বাড়ির গিয়ে দেখা যায় গত মঙ্গলবার তার মেয়ের জন্মদিন ছিল। সেদিন তাকে পুলিশ তলব করে থানায় নিয়ে যায়। মেয়ের জন্মদিনে পাশে থাকতে পারেনি বাবা। সারা রাত সেই ছোট্ট শিশুটি বাবা বাড়িতে না আশায় ঘুমোতে পারেনি বলে জানান অঙ্কুর দাস এর স্ত্রী সুরভি দাস। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁর সমাজসেবী স্বামীকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে কার্যত ভেঙে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী। তিনি জানান, তাঁদের ছোট বাচ্চার কাল জন্মদিন ছিল। বাবাকে না পেয়ে সারাক্ষণ বাবার ছবি দেখে কেঁদেছে।
অঙ্কুর দাসের প্রতিবেশীদের বক্তব্য রাত বিরাতে যখন-তখন ফোন আসলে মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য ছুটে যান। সেই সমাজকর্মীকে অকারণে পুলিশ হয়রানি করছে এটা সমগ্র জলপাইগুড়ির পক্ষে লজ্জাজনক। বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সমাজকর্মী অঙ্কুর দাসের পাশে থেকে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ ভূমিকায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। নিন্দার ঝড় উঠেছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবার নামে যারা আকাশছোঁয়ার দর হাঁকাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোনরকম পদক্ষেপ গ্রহণ না করে সমাজসেবী অঙ্কুর দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করেছেন মৃত লক্ষ্মী রানী দেওয়ানের স্বামী জয়কৃষ্ণ দেওয়ান।
Comments :0