JOB Protest

কলকাতাতেই তিন জায়গায় বিক্ষোভ চাকরিপ্রার্থী, মুখ্যমন্ত্রীর মুখে ৫ লক্ষ পদ!

রাজ্য

সোমবার নিয়োগের দাবিতে মহানগরের তিনটি প্রান্তে আবার উত্তাল বিক্ষোভ দেখান চাকরিপ্রার্থীরা। উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থী, ২০২২সালে প্রাথমিকের টেট পাশ প্রার্থী, বৃত্তিমূলকের শিক্ষকরা নিয়োগের দাবি জানাতে গেলে পুলিশ তাঁদের উপর নির্যাতন চালায়। গ্রেপ্তারও করা হয়েছে অনেককে। এদিকে, এদিনই হুগলীর আরামবাগে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ৫লক্ষ শূন্যপদের কথা আবার উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আমি চাইছি চাকরি দিতে। কিন্তু কিছু ফুরফুরে উড়ে বেড়াচ্ছে। নিয়োগ হলেই তারা কোর্টে চলে যাচ্ছে। মামলা করে সব আটকে দিচ্ছে। সিপিএম, কংগ্রেসের কিছু ফুরফুরে প্রজাপতির মতো উড়ে উড়ে এই সব করে বেড়াচ্ছে।’’ ঘোষণা অনুযায়ী, রাজ্য সরকারের মোট ৫লক্ষ স্থায়ী শূন্যপদ রয়েছে। এর মধ্যে ১লক্ষ শিক্ষকের শূন্যপদ। হবু শিক্ষকরা দিনের পর দিন রাস্তায় বসে রয়েছেন, বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তবুও নিয়োগ করা হচ্ছে না। 
এদিন মুখ্যমন্ত্রী যখন এই কথা বলছেন, তখন বিকাশ ভবনে ২০২২সালের টেট পাশ প্রার্থীরা নিয়োগের দাবি জানাতে গেলে পুলিশ তাঁদের উপর চড়াও হয়। তুমুল বিক্ষোভে বিকাশভবন চত্বরে কার্যত ধুন্ধুমার বেঁধে যায়। চাকরিতে নিয়োগের দাবিতে ফের রাজপথে নেমেছেন চাকরিপ্রার্থীরা। দলে দলে চাকরি প্রার্থী বিকাশ ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের ঠেকাতে ঘটনাস্থলে আসে বিশাল পুলিশবাহিনী। টেনে হিঁচড়ে বিক্ষোভকারীদের সরানোর চেষ্টা করে পুলিশ। তাতে আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি. ধস্তাধস্তি শুরু হয় বিক্ষোভকারী চাকরিপ্রার্থীদের।
সোমবার সেন্ট্রাল পার্ক মেট্রো স্টেশন, বিকাশ ভবনের সামনে জমায়েত করেন ২০২২ সালের টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা। অনেকের হাতেই ছিল প্ল্যাকার্ড। কেউ কেউ লিখেছিলেন, বিহারে নিয়োগ হচ্ছে, অথচ বাংলা পিছিয়ে। চাকরি কবে হবে, সেই স্লোগান তুলে বিকাশভবনের সামনে জমায়েত করেন বিক্ষোভকারীরা। দলে দলে চাকরি প্রার্থীদের বিক্ষোভে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এখান থেকে পুলিশ ২২৩জন চাকরি প্রার্থীকে আটক করেছে। সম্প্রতি সল্টলেকের করুণাময়ীতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসে উচ্চ প্রাথমিকের কাউন্সেলিং শেষ হয়েছে। মেধা তালিকা প্রায় ১৩ হাজার জনের মধ্যে দু’দফায় কাউন্সেলিং হয়েছে আট হাজারের মতো। অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের সংখ্যাও অনেক। এদিন বিক্ষোভরত চাকরি প্রার্থীরা দাবি তোলেন, তাঁদের দ্রুত সুপারিশপত্র দিতে হবে। তার পরে দ্রুত নিয়োগপত্র দিতে হবে।
প্রায় এদিন একই পরিস্থিতি তৈরি হয় ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং’র সামনে উচ্চ প্রাথমিকের চাকরি প্রার্থীদের বিক্ষোভে। চাকরিপ্রার্থীরা মানববন্ধন করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ধর্মতলার রাজপথে। কেউ কেউ সেখানেই রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন। তাঁদের কাতর প্রশ্ন, আর কত দিন নিয়োগের অপেক্ষায় থাকবো? ২০১৪সাল থেকে আমরা অপেক্ষা করছি। চাকরির আশায় রাস্তায় বসে আছি আমরা। আমরা যোগ্য। আর কতদিন এভাবে বসে থাকব। কিছুতেই আমাদের নিয়োগপত্র দেওয়া হচ্ছে না।” চাকরি প্রার্থীদের আন্দোলনের অন্যতম নেতা ইন্দ্রজিৎ ঘোষ বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ শূন্যপদ রয়েছে। তাহলে চাকরি দিচ্ছেন না কেন? বেআইনী নিয়োগের বিরুদ্ধে চাকরি প্রার্থীরা ন্যায়ের দাবিতে আদালতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। আদালতে প্রমাণও হয়ে গেছে, নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে, অনেকের চাকরি গেছে। এতেই মুখ্যমন্ত্রীর গাত্রদাহ হচ্ছে। উঁনি দুর্নীতিকে ঢাকা দিতে বিরোধীদের নিশানা করছেন।’’ এদিকে স্থায়ীকরণ, বকেয়া বেতন, নিয়মিত বেতনের দাবি জানাতে গেছে এদিন হাজরা মোড় থেকে বৃত্তিমূলকের এনএসকিউএফ শিক্ষকদের আটক করে পুলিশ। তাঁদের প্রিজন ভ্যানে তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বেঁধে যায়। বেশ কয়েকজনকে টেনে-হিচড়ে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। 
‘ভোকেশনালাইজেশন অব স্কুল এডুকেশন’র অধীনে ‘ন্যাশনাল স্কিলস কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক’ প্রকল্পে ২০১৩ সাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ১৩টি বৃত্তিমূলক বিষয়ে শিক্ষা এনএসকিউএফ শিক্ষকরা। হাজরা মোড়ে বিক্ষোভরত এনএসকিউএফ শিক্ষকরা বলেছেন, ১১ বছর ধরে অনিয়মিতভাবে বেতন হচ্ছে। অনেকের বেতন বকেয়া রয়েছে। রাজ্য সরকার ইচ্ছে করেই কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বরং বিভিন্ন প্রাইভেট এজেন্সি দ্বারা শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ লুট হয়েছে। এমনকি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য পাঠ্যপুস্তকের টাকা, হাতে কলমে শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবের সরঞ্জামের টাকাও লুট করা হয়েছে। যার ফলে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ল্যাবের সরঞ্জাম মেলেনি এবং ল্যাবের পরিকাঠামো পর্যন্ত নেই। শিক্ষিকারা যাঁরা দীর্ঘ বছর ধরে এখানে শিক্ষকতা করছেন, তাঁদের মাতৃত্বকালীন সময়ে ছাঁটাই করা হয়।
photo

Comments :0

Login to leave a comment