Gaza

গাজায় হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরে ইজরায়েলী হামলায় ১৩৫ জনের বেশি প্যালেস্তিনীয়র মৃত্যু

আন্তর্জাতিক

 আল-মাওয়াশি অঞ্চলের আকাশে বাতাসে স্বজনহারা মানুষের অসহায়ের আর্তনাদ। রবিবার ভোররাতে জায়নবাদী আগ্রাসনে অন্তত ৩৬ জন প্যালেস্তিনীয়র মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের বুকে শরণার্থীদের তাঁবুগুলি মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কার্যত গুড়িয়ে দিয়েছে। ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ৮ থেকে ৮০ ’র দেহ।
সকালের আলো ফোটার পর থেকেই স্থানীয় ফিল্ড হাসপাতাল এবং নাসের মেডিক্যাল কলেজে হতাহতদের আনা শুরু হয়। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই মহিলা ও শিশু। অনেকেরই অঙ্গহানি হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের বিবৃতি অনুসারে, রবিবার দিনভর উত্তর এবং দক্ষিণ গাজায় ইজরায়েলের সেনাবাহিনীর হামলায় অন্তত ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৫ জন সাংবাদিকও। আহত ২২৫ জনের বেশি।
‘‘আমি আগে কখনও আগুনের লেলিহান শিখান শিশুর দেহ ঝলসাতে দেখিনি,’’ আল-মাওয়াশির ফিল্ড হাসপাতালের পাশে বিধ্বস্ত বাড়ির ভাঙা পাচিলে জবুথবু হয়ে বসে কাপা কাপা গলায় এই কথা জানান মাঝ বয়সি এক মহিলা।
তিনি আরো বলেন,‘‘শনিবার রাত থেকেই এলাকায় ইজরায়েলের বায়ু সেনা হামলা শুরু করে। ভোর থেকে বাড়ে আক্রমণের তীব্রতা।’’
রবিবার সকাল থেকেই ইজরায়েলের সেনাবাহিনী অপারেশন জিডিওনস চ্যারিয়টের অন্তর্গত গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদতে পরিকল্পিত ভাবে যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়। এর মধ্যে ছিল সাংবাদিকদের বাড়ি ও। গোটাটাই চলে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।
হামাসের এক আধিকারিক জানান, গত এক সপ্তাহে গাজায় ইজরায়েলী আগ্রাসণে ৪৬৪ জন প্যালেস্তিনীয়র মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে গত ১৯ মাসে নিহত প্যালেস্তিনীয়দের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৩ হাজার ৩৩৯ জন। আহত ১ লক্ষ ২১ হাজার ৩৪ জন। নিখোঁজ ৬৭ হাজারের বেশি। যাঁদের অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছে বলেই বিভিন্ন মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থাগুলির আশঙ্কা।
রবিবার ইজরায়েলের সেনাবাহিনী অপারেশন জিডিওনস চ্যারিয়টের শুরু হওয়ার কথা ঘোষণা করে। এই অভিযানের লক্ষ্য গাজা থেকে হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা। অভিযানের পুরোভাগে ইজরায়েলী স্থল সেনার সাউদার্ন কমান্ড। অভিযানে নিয়মিত বাহিনীর পাশাপাশি সংরক্ষিত সেনাদেরও নামানো হয়েছে। আক্রমণ চালানো হচ্ছে উত্তর এবং দক্ষিণ গাজায় বসবাসকারি প্যালেস্তিনীয়দের মহল্লায়। অভিযানে স্থল সেনাকে সাহায্য করছে বায়ু সেনা।
খোদ তেল আভিভে প্রকাশিত সরকারি বিবৃতি অনুসারে, গত এক সপ্তাহে গাজার ৬৭০টি বেশি ঠিকানায় ইজরায়েলের সেনাবাহিনী হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল, রাষ্ট্রসঙ্ঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা পরিচালিত শরণার্থী শিবির ও অসামরিক মহল্লা। যদিও ইজরায়েলের সেনাবাহিনী তা মানতে অস্বীকার করেছে। ইজরায়েলী সেনার দাবি হামলায় হয়েছে হামাসের ঠিকানায়। এবং তা করা হয়েছে হামাসের হাতে বন্দি প্যালেস্তিনীয়দের ছাড়াতে।
এদিকে আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের তরফে উত্তর গাজায় আর কোন সরকারি হাসপাতাল কার্যকর নেই বলেই জানান হয়েছে। ইজরায়েলের সেনাবাহিনী চলতি সপ্তাহেই উত্তরের তিনটি হাসপাতালে হামলা করে। তার পর থেকেই হাসপাতাল গুলিতে বন্ধ পরিষেবা। একই সঙ্গে ক্রমশ বেড়ে চলেছে দুর্ভিক্ষের ছবি। গত দশ সপ্তাহ ধরে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী গাজায় সব রকমের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। অনেক প্যালেস্তিনীয় পরিবারই দিনে মাত্র এক বেলায় কোন মতে খাবার সংগ্রহ করতে পারছে। অধিকাংশ পরিবার ত্রাণ সংস্থাগুলির মাঝে মধ্যে দেওয়া খাবারের ওপরে নির্ভর করছে। নেই পানীয় জল, জ্বালানি, হাসপাতালে ওষুধ।
রবিবার সকালে ইজরায়েলের সেনাবাহিনী ফের উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে হামলা করে। হাসপাতালের ডিরেক্টর মারওয়ান আল-সুলতান জানান, পরিস্থিতি অবর্ণনীয়। আন্তর্জাতিক মহলের কাছে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে আবেদন করেন তিনি।
‘‘ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে হামলা রোগীদের জীবনের বিপন্ন করেছে। কয়েক হাজার আহত অথবা অসুস্থ প্যালেস্তিনীয় মারা যেতে পারেন,’’ রবিবার উত্তর গাজার জাবালিয়ায় সাংবাদিকদের জানান আল-শিফা হাসপাতালের ডিরেক্টর ড.মহম্মদ আবু সলমিয়া। 
ইজরায়েলের হামলার জেরে এই হাসপাতালটিও বন্ধ। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের কাছে অবিলম্বে রক্তদানের জন্যও ড.সলমিয়া আবেদন করেন।  
 

 

Comments :0

Login to leave a comment