শুভময়
১৮৪৮-এর সেই বসন্তের পর প্রায় সারা ইউরোপ জুড়ে অবাধ্যতার মহাকাব্যিক ঢেউ। শুরু হয়েছিল সিসিলির রাজনগর পালেরমো-তে। সে অবশ্য সেই বসন্তের খানিক আগে, ১৮৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে। তারপর বিদ্রোহের দুর্বার বজ্রনির্ঘোষ ইউরোপের দেশে দেশে— ডেনমার্ক, সার্দিনিয়া, পিয়েডমন্ট, প্রুশিয়া, স্যাক্সনি, হাঙ্গেরি, অস্ট্রিয়া এবং অবশ্যই বিপ্লবের গবেষণাগার ফ্রান্সে। বিদ্রোহের প্রাবল্য সর্বত্র অবশ্যই সমান ছিল না। অংশগ্রহণকারী জনতার চরিত্রে ও লক্ষ্যে ভিন্নতা ছিল, নেতৃত্বের চরিত্র ও লক্ষ্য নিয়েও একই কথা, তাদের ভাবনার তরঙ্গেও বিস্তর ফারাক। বহু ক্ষেত্রেই প্রতিবিপ্লবী শক্তির কাছে দ্রুত আত্মসমর্পণ করেছে ক্ষমতাতন্ত্রের মুখোমুখি-দাঁড়ানো অভ্যুদয়ের জনতা। তবু সূচনায় প্রায় শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত দুই জাতবিপ্লবী কার্ল মার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলস।
বিদ্রোহ, বিপ্লব—ধীমান পাঠক ইতিমধ্যেই খানিক অস্বস্তি নিয়েই খেয়াল করেছেন নিশ্চয়, শব্দগুলো আমরা কেমন গুলিয়ে ফেলেছি এই গদ্যসূচনায়। বিপুল জনতার দুর্বার অবাধ্যতা, ক্ষমতার মালিকদের রাস্তায় এনে দাঁড়-করানো,পুরানো সংসদগুলো ভেঙে-ফেলা, গৃহযুদ্ধ, ব্যারিকেড গড়ে রাস্তায় রাস্তায় লড়াই অথবা ফরাসিরা যেমন বলেন ‘ফ্রাঁদে’ — মুখোমুখি খণ্ডযুদ্ধ, সব মিলিয়ে মার্কস এবং এঙ্গেলস যেন দেখছিলেন এক দুরন্ত সম্ভাবনা, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের কেতাবি আদল। ব্রাসেলস, কোলোন, প্যারি— ইউরোপের বিস্তারিত অংশ জুড়ে ছুটে বেড়ালেন দু-জন, যেন অগ্নিবলয়ের মাঝে এসে দাঁড়ানোই তখন প্রধান কাজ দুই মহাজ্ঞানীর। তত্ত্বনির্মাণ করছেন তাঁরা, নতুন করে প্রকাশ করছেন সংবাদপত্র, লিখছেন দুর্ধর্ষ সব প্রতিবেদন, বিপ্লবকে স্বাগত জানানোর গদ্য। কার্ল মার্কস বাবার সম্পত্তি উৎস থেকে আসা অর্থ ব্যয় করছেন বিপ্লবীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার কাজে।
ফ্রেডরিক এঙ্গেলস-এর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রটি অধিকতর বৈচিত্রময়। সামরিক অনুশীলনে শিক্ষিত এবং আগ্রহীও বটে, দুর্দান্ত তলোয়ারবাজ এবং অশ্বারোহী, দাপুটে মুষ্টিযোদ্ধা ফ্রেডরিক এঙ্গেলস জনতার হাতাহাতি লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার সুযোগ একমুহূর্তের জন্যেও হাতছাড়া করতে রাজি নন। তিনি ছুটে যাচ্ছেন ব্যারিকেডের পাশে একটি লড়াই থেকে আরেকটি লড়াইয়ে, কানের পাশ দিয়ে শিস দিয়ে ছুটে যাচ্ছে বুলেট, তখনি যেন তাঁর কাঙ্ক্ষিত হিল্লোল, জন্ম-জনপদ এ বারফিল্ড-বারমেনে ব্যারিকেডের উপরে উড়িয়ে দিচ্ছেন লাল ঝান্ডা। যেন বুকের গহনে কতদিন ধরে লালন-করা স্বপ্নবীজগুলি এবার পেয়ে গেল হিম্মত ফলনের বিস্তীর্ণ আবাদ।
এসব স্মৃতি কোনোদিন ভোলেননি এঙ্গেলস, মর্মরিত আবেগে উচ্চারণ করেছেন প্রায় সারাজীবন, ভুলতে দেননি তাঁর সমকালের এবং অনুজ সহযোদ্ধাদের এবং অবশ্যই ভুলতে দেননি মার্কসবাদের আবহমানের পদযাত্রীদের।
২
অবশ্য ১৮৪৮-এর বিপ্লব এবং তার ক্ষমতাতন্ত্র নস্যাৎ-করা নানা স্পর্ধাপুঞ্জে ফ্রেডরিক এঙ্গেলস-এর দুর্দান্ত সক্রিয়তা হয়তো তাঁর জন্মদিনের প্রতি নিবেদিত এই গদ্যের মূল দৃষ্টিপথ নয়। বরং আমাদের নজরনিবেশ সেই দিকে, সেই ক্রান্তিকালে কীভাবে ফ্রেডরিককে লড়তে হচ্ছে দুটো সীমান্তে—রাষ্ট্রিক তো বটেই সেই সঙ্গে পারিবারিক সীমান্তে। মানুষের মতো মানুষের জীবনে, বিপ্লবীর জীবনে কখনও কখনও এমন দুঃসহ সময় তো আসেই, যখন পারিবারিক আপনজনদের প্রান্ত থেকেই ছুটে আসে বিরূপতার প্রবল লহরগুলি।
এবং ১৮৪৮-৪৯ সালের প্রুশিয়া ও এঙ্গেলস-এর পারিবারিক বিরূপতার সূত্র ধরেই আরেকটি কথা, যা আমাদের পক্ষে খানিকটা রোমাঞ্চের তো বটেই : ওই সময়েই ফ্রেডরিক-এর জন্যে কলকাতায় চলে আসার এক ঘোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
১৮৪৮-এর ফেব্রুয়ারি প্যারির মেহনতি বিপ্লবী জনতাকে সাম্যবাদের উপত্যকার কাছাকাছি এনে দিয়েছিল। বিপ্লবী সংগীতের কলরব, জনতার উচ্ছ্বাস আর ১৭৮৯-এর স্মৃতিতে রাস্তায় রাস্তায় বিপ্লবী ব্যাঙ্কোয়েট। ফ্রান্সিস গুইজোকে বলি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার একটা চেষ্টা হয়েছিল বটে, কিন্তু ভাঙনের জয়গানের প্রাবল্যে দেশ ছেড়ে পালালেন খোদ লুই ফিলিপ্পি। অস্ট্রিয়াতে ঝড়ের সারথী ছাত্র-জনতা।
ভিয়েনার রাস্তায় ব্যারিকেডের উৎসব। তারপরই পালটা আক্রমণে হ্যাপসবার্গ সেনাবাহিনী। ততক্ষণে ছাত্র-জনতা মৃত্যুকে পরোয়া করে না আর। দেশ ছেড়ে ব্রিটেনের দিকে পালালেন প্রতিক্রিয়ার উদ্ধত যুগনায়ক প্রিন্স ক্লিমেন্স ভন মেটারনিখ। বিপ্লবের ঢেউ দ্রুত বিছিয়ে যাচ্ছে উত্তর ইতালির রাজ্যগুলিতে। লোম্বার্ডি, ভেনিস, মিলানের শহরের গরিব মেহনতি বিপ্লবের তরঙ্গচূড়ায়। মার্চ মাসের সেই দুরন্ত ৫ দিনে শুধু মিলানেই গড়ে উঠল ১৫০০ ব্যারিকেড। এবং বিপ্লবতীর্থ প্যারি, সেখানে উড়ছে দ্বিতীয় সাধারণতন্ত্রের নিশান।
কিন্তু মার্কস ও এঙ্গেলস অধীর আকাঙ্ক্ষায় প্রহর গুনছেন, কখন বিপ্লবের পদধ্বনি বেজে উঠবে তাঁদের স্বদেশ প্রুশিয়ায়। শুধু মার্কস এবং এঙ্গেলস নন, প্যারিতে বসবাসকারী একরাশ জার্মান অভিবাসী বুক ভরে চাইছেন, কবে রাইন পার হয়ে ঢুকে-পড়া যাবে প্রুশিয়ায়, হেনে দেওয়া যাবে একের পর এক আঘাত রাজতন্ত্র ও জাঙ্কারদের জোটের দিকে। তবু প্রুশিয়ার বিষয়ে অনেকটাই সংযত মার্কস ও এঙ্গেলস। না, জমিন প্রস্তুত না করে আঘাত হানলে, তার জন্যে মূল্য চোকাতে হবে অনেক। মার্কস ও এঙ্গেলস পত্তন করলেন জার্মান শ্রমজীবী সঙ্ঘ এবং এই সঙ্ঘেরই আড়ালে রাইনল্যান্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হলো গোপনে তিনশো কমিউনিস্ট কর্মী।
বিপ্লব পৌঁছে গেল প্রুশিয়ায়, ১৮৪৮সালের সেই মার্চ মাসেই।
মার্কস ও এঙ্গেলস যেমন আন্দাজ করেছিলেন, প্রুশিয়ার রাজা যদি আগ বাড়িয়ে পা বাড়াতে চান, তখনই শুরু হয়ে যাবে বিপ্লব। ঠিক উলটো পথে হাঁটলেন প্রুশিয়ার রাজা চতুর্থ ফ্রেডরিক ভিলহেল্ম। সংবাদপত্র তো বটেই আরও নানা ক্ষেত্রে দেদার ছাড় হেঁকে দিলেন। জনতা উচ্ছ্বসিত, প্যালেস স্কোয়ারের দিকে এগিয়ে চলেছে উৎসবমুখর জনতা। তখনই ঘটল বিপত্তি। রাজা ফ্রেডরিক ভিলহেল্ম যতই ঔদার্যের ভঙ্গি গ্রহণ করুন না কেন, তাঁর সেনাবাহিনী ছক কষছিল কয়েকটি বাহিনী নামিয়ে দ্রুত জনতাকে হটিয়ে প্যালেস স্কোয়ার খালি করে ফেলা। সেনাবাহিনীর দিক থেকে জনতার দিকে সহসা ছুটে গেল একটি পথ হারানো বুলেট। ঠিকঠাকই আন্দাজ করেছিল জনতা। তারা জবাব দিল ব্যারিকেড গড়ে, হাতে তৈরি মিসাইল শত্রুদের দিকে নিশানা করে। ইউরোপ দেখল ১৮৪৮ সালের বিদ্রোহের আরেকটি রক্তাক্ত অধ্যায়। একদিনেই খুন হয়ে গেলেন পথে-নামা তিনশো মানুষ— মূলত কারিগর আর মজদুর। সেনাবাহিনীর দিকে হতাহত অন্তত একশো।
ক্ষোভে দুর্বার জনতা পথে এনে নামাল ফ্রেডরিক ভিলহেল্মকে, আসুন ! আপনারই দেশেরই এই মরা মজদুর-মেহনতির সামনে এসে দাঁড়ান !
ভয়ে নাকি হিম হয়ে গিয়েছিলেন ফ্রেডরিক। শোনা যায়, পাশে দাঁড়ানো তাঁর রানি এলিজাবেথ নাকি ফিসফিস করে বলে উঠেছিলেন, শুধু একটা জিনিসই নেই, তা হলো গিলোটিন !
বিপ্লবের জোয়ারে রাজতন্ত্র আর জাঙ্কারদের জোটের ক্ষমতার মুঠো যখন অনেকটাই দুর্বল, দেশে ফিরে এলেন মার্কস-এঙ্গেলস। রাইনল্যান্ডের শিল্পশহর কোলোনে । নতুন করে পত্তন করলেন সংবাদপত্র, নয়া রাইনিশ্চে জেইতুঙ।
কাগজের জন্যে তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যেই কোলোন থেকে জন্মশহর বারমেন-এ এলেন এঙ্গেলস। উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি তিলমাত্র। বারমেন তখন প্রতিবিপ্লবের আখড়া হয়ে রয়েছে প্রায়। শুধু তাই নয়, এঙ্গেলস দেখলেন বারমেন টাউন কাউন্সিলে প্রতিবিপ্লবের পান্ডা বনেছেন তাঁর কাকা এবং তাঁর ভাই হারমান গড়ে তুলেছেন প্রতিবিপ্লবী শহররক্ষী বাহিনী, আদতে কমিউনিস্টদের ঠান্ডা করতে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী।
১৮৪৮ সালের ইউরোপীয় বিপ্লবের লহরে এবার মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে দুটি পক্ষ— একদিকে ফ্রেডরিক এঙ্গেলস, উলটোদিকে প্রায় তাঁর সমগ্র পরিবার ও আত্মীয়জন।
এপ্রিল, মে পার হয়ে ১৮৪৮-এর জুন মাস। আবার দুর্দমনীয় প্যারি। জুন মাসের ২৩ তারিখ প্যারির নানান ব্যারিকেড আগলে পঞ্চাশ হাজার মেহনতি জনতা। রক্তে স্নান-করা প্যারির দিকে তাকিয়ে এঙ্গেলস দেখছেন ইউরোপীয় বিপ্লবের শ্রেষ্ঠ মুহূর্তগুলি। তাঁর প্রতিবেদনে ফেব্রুয়ারির প্যারির সঙ্গে জুনের প্যারির অনেক ফারাক। এবারের সংঘাত সর্বহারার সঙ্গে বুর্জোয়াদের।
মেহনতির খুনে রাঙা ইউরোপে আবার হায়েনার হিংস্রতায় খেপে উঠছে প্রতিক্রিয়া। প্রুশিয়াতেও মার্চের ঔদার্য ঝেড়ে ফেলে ভয়ানক উদ্ধত ক্ষমতাতন্ত্র। কোলোন শহরে প্রায় প্রতিদিনই বিব্রত করা হয় মার্কস-এঙ্গেলস সহ রাইনিশ্চে জেইতুঙ সম্পাদকমণ্ডলীকে। কোলোন অবশ্য সহজে ছেড়ে দিতে রাজি নয়। রাজি নন ফ্রেডরিক এঙ্গেলস। সেপ্টেম্বর মাসের ১৭ তারিখ, বিপ্লবী সমাবেশ উত্তর কোলোনে। বক্তৃতা দেবেন ফ্রেডরিক এঙ্গেলস। রাইনের উপর বজরায় বজরায় উড়ছে লাল পতাকা। শ্রমিক-জনতা-সমাজতন্ত্রীরা চলেছে শপথের সমাবেশে। এঙ্গেলস বললেন, প্রুশীয় ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে আসন্ন সংগ্রামে কোলোনের শ্রমিক-জনতা জীবন বাজি রেখেই লড়বে।
১০ দিন পরেই কোলোনে জারি করে দেওয়া হলো সামরিক আইন। বন্ধ করে দেওয়া হলো সব সংবাদপত্র। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এঙ্গেলসদের বিরুদ্ধে। এঙ্গেলস-এর চেহারার বিবরণ দিয়ে হুলিয়া ছাপা হলো খবরের কাগজে।
ফ্রেডরিক-এর মা এলিসে এঙ্গেলস-এর চোখে পড়েছিল কোলোনিশ্চে জেইতুঙ-এ ছাপা সেই হুলিয়া। রোগশয্যা থেকে তিনি ছেলেকে লিখলেন, ‘ প্রিয় ফ্রেডরিক, হতভাগ্য দুঃখী মায়ের শব্দগুলোর যদি তোমার কাছে কোনও অর্থ থাকে, তোমার বাবার উপদেশ গ্রহণ করো, আমেরিকায় চলে যাও এবং এতদিন যে পথে চলেছ, তা ত্যাগ করো। তোমার যা জ্ঞান তাতে তুমি নিশ্চিতভাবেই কোনও ভালো ফার্মে উঁচু পদ পাবে।’
৩.
ফ্রেডরিক তখন দেশ ছাড়ছেন আবার। কিন্তু প্রুশিয়াতে বিপ্লবের স্বপ্ন তাঁকে ছেড়ে যাচ্ছে না কিছুতেই।
ফেরার পথে তিনি দেখলেন মৃতের শহর প্যারিকে। ১৯৪৮ সালের বসন্তের সব শেষ! না, তখনো লড়াই চলছে হাঙ্গেরিতে। সে আগুনের পরশমণি ফ্রেডরিক ফের জাগাতে চাইলেন প্রুশিয়ায়। ১৮৪৯ সালের আবার ডানা ঝাপটাচ্ছে বিপ্লবের আগুনপাখি। শুরু হয়েছিল দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলে। আগুনের সেই কুঁড়িগুলি ছুঁতে চাইল রাইনভূমি। এঙ্গেলস লিখছেন, ‘সর্বত্র জনতা কোম্পানিতে কোম্পানিতে নিজেদের সংগঠিত করতে চাইছে, নির্বাচন করে নিচ্ছে তাদের নেতা, সংগ্রহ করছে অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ।’
তখন কে রোখে ফ্রেডরিককে ! সটান চলে এলেন এবার ফিল্ডে। যেচে চেয়ে নিলেন ব্যারিকেড গড়ে-তোলা আর প্রুশীয় বাহিনীর সম্ভাব্য হানাদারির বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার দায়িত্ব। উপার উপত্যকার প্রবেশপথগুলি সুরক্ষিত করছেন ফ্রেডরিক, ব্যারিকেডের অবয়ব জুড়ে সাজিয়ে রাখছেন নুরেমবার্গ ক্যালিবার স্যালুট কামানগুলি। গেরিলা যুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি।
এঙ্গেলস-এর এই ভূমিকার কথা খুঁটিয়ে পড়ে নিয়েছিলেন ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। এবং সম্ভবত চে গুয়েভারা।
১৮৪৯-এর সেই গ্রীষ্মে ফ্রেডরিক-এর এবারফিল্ড-বারমেন পর্ব নিয়ে অনেকগুলি প্রবাদ প্রচলিত আছে। তাঁর শৌর্য আর দুঃসাহসের গল্প, পরিবারের বিরুদ্ধে তাঁর অবাধ্যতার আখ্যান। হ্যাসপেলার সেতুর মাথায় কামান সাজিয়ে তিনি যখন ব্যারিকেড গড়ছিলেন, চার্চে যাওয়ার পথে অবাধ্য ও বেপরোয়া ছেলেকে নাকি দেখেছিলেন বাবা এঙ্গেলস।
তখন থেকেই তিনি চোয়াল কষে ঠিক করে নিয়েছেন, ইউরোপের বিপ্লবী ভাইরাস থেকে বাঁচাতে এ ছেলেকে পাঠাতে হবে হয় আমেরিকা, নয় কলকাতা।
যদি কলকাতায় আসতেই হতো ফ্রেডরিক এঙ্গেলসকে ! উনিশ শতকের সেই ঠিক মধ্যপর্বে দেখা হতো তাঁর সঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কিংবা অক্ষয়কুমার দত্তের ?
এঙ্গেলস ততদিনে নতুন রণাঙ্গনে। জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ব্যাডেন-প্যালাটিনেটে। শ্রমজীবী মানুষের একটি বাহিনী নিয়ে তিনি প্রুশীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসম লড়াই লড়ে যাচ্ছেন মুর্গ নদী পার হয়ে। রণাঙ্গন থেকে চিঠি লিখছেন জেনি মার্কসকে আর ভেবে নিচ্ছেন, এখন তিনি জানেন যুদ্ধে বিক্ষত হওয়ার রক্তস্বাদ।
আমরা নিশ্চিত হতেই পারি, চে কিংবা ফিদেল মন দিয়ে পড়েছিলেন ফ্রেডরিক এঙ্গেলস।
Comments :0