রেমালের তাণ্ডবে কলকাতায় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। এন্টালি থানা এলাকার বিবির বাগান এলাকায় মারা যান মহম্মদ সাজিব।
জানা গিয়েছে, ছেলেকে ডাকতে বেশি রাতেবেরিয়েছিলেন তিনি। একটি বাড়ির
কার্নিসের অংশ ভেঙে তাঁর মাথায় পড়ে।
রবিবার মধ্যরাতে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আছড়ে পড়েছে চলেছে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এর মধ্যেই ১ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে দাবি রাজ্য সরকারের। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় রাজ্যের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে লাল সতর্কতা জারি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের জেরে বাংলাদেশে দু’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। তাঁদের একজন পটুয়াখালিতে, আরেকজন সাতক্ষীরা এলাকার বাসিন্দা। এদিন পটুয়াখালির কলাপাড়ার অনন্তপাড়া গ্রামে পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে জলের স্রোতে ভেসে মহম্মদ শরিফুল ইসলাম (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। রেমালের জেরে বাংলাদেশে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন ৩০ লক্ষের বেশি পরিবার। বাংলাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান রাতেই এই খবর জানিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে দমকা হাওয়াসহ ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরা, কুয়াকাটাসহ উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে বাঁধ ভেঙে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করেছে। সুন্দরবনসহ বেশ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকা এসব এলাকার লাখ লাখ মানুষ নিকটবর্তী আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ছুটে গেছেন। ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে সোমবার সকালে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রধান অংশ এখনও আছড়ে না পড়লেও ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে উপকূলবর্তী দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। আবহাওয়া দপ্তর বা আইএমডি জানিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যা ৬টার সময় সাগর দ্বীপের ১৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পূর্বে অবস্থান করছিল রেমাল।
আবহাওয়া দপ্তরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, রেমালের সর্বোচ্চ গতি ১০০-১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা হতে পারে। ঝড়ের সঙ্গে ১২০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিতে বাতাস বইতে পারে। এই ঝড় পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপ এবং বাংলাদেশের মঙ্গলা বন্দরের মাঝামাঝি কোথাও জমিতে আছড়ে পড়বে।
রাজ্য সরকারের বক্তব্য, রবিবার দুপুর ৩টের মধ্যে উপকূলবর্তী এলাকাগুলির ১ লক্ষ ১০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের স্কুল, কলেজ এবং সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন জানাচ্ছে, প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমফান এবং ইয়াসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ইতিমধ্যেই দীঘা, কাকদ্বীপ, জয়নগরের মত জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আইএমডি’র পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সোমনাথ দত্ত জানাচ্ছেন, ‘‘রবিবার বিকেল থেকে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে ৪৫-৫৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। হাওয়ার গতি বেড়ে ৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা হতে পারে।’’
তিনি জানিয়েছেন, স্থলভাগের ভিতরের দিকে, মানে হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, কলকাতার মত জেলাগুলিতে হাওয়ার গতিবেগ ঘন্টায় ৭০-৯০ কিলোমিটার হলেও, দক্ষিণ ২৪ পরগণার উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে একশো কিলোমিটারের বেশি গতিতে ঝড় বইবে।
যদিও তিনি জানিয়েছেন, রেমালের অভিঘাত ২০২০ সালের আমফান ঝড়ের মত ভয়াবহ হবে না। ২০২০ সালের ২০ মে আমফান ঝড়ে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং নদীয়া জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল তছনছ হয়ে গিয়েছিল।
রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, রেমাল মোকাবিলায় এনডিআরএফ’র ১৪টি দলকে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফেও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর বা এসডিআরএফ’র টিমগুলিকেও সক্রিয় করা হয়েছে। কলকাতা কর্পোরেশনের তরফেও প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে শুকনো খাবার, ত্রিপল, ওষুধের মত প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।
রেমালের ‘ভ্যানগার্ডের’ দাপটে টালিগঞ্জে কলকাতা মেট্রোর একটি শেড উড়ে গিয়েছে। তার ফলে রবিবার বিকেল থেকে নিউ গড়িয়া-নোয়াপাড়া মেট্রো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দরে ২১ ঘন্টার জন্য বিমান পরিষেবা বন্ধ করে রাখা হবে বলে জানা গিয়েছে। এরফলে বাতিল হয়েছে ৩৯৪টি বিমানের উড়ান। সোমবার বিকেল থেকে ১২ ঘন্টার জন্য কলকাতা বন্দরেও কাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রেমালের তান্ডবে যাতে প্রাণহানি না হয়, সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীও। ভারতীয় নৌবাহিনীর তরফে উদ্ধারকাজে সহযোগিতার জন্য ২টি জাহাজকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং নৌবাহিনীর বিমান এবং হেলিকপ্টারও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
Comments :0