Banglar Bari

বাড়ির টাকা উদ্ধারে গরিবকে ধরানো হবে ট্রেজারি চালান!

রাজ্য

 ট্রেজারি চালান পূরণ করিয়ে গরিব মানুষের কাছ থেকে ঘর তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য জন্য মাঠে নামছে রাজ্য সরকার!
আগামী মঙ্গলবার থেকে টাকা ফেরত নেওয়ার কাজ শুরু করতে চলেছে পঞ্চায়েত দপ্তর। তার আগে সোমবার পর্যন্ত টাকা পাওয়ার পর এখনও ঘর তৈরির কাজ শুরু হয়েছে কিনা তা দেখে নিতে বলা হয়েছে। যদি ঘর তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায় তাহলে তার ছবি তুলে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের পোর্টালে জমা দিতে হবে। একইসঙ্গে উপভোক্তার দ্বিতীয় কিস্তির টাকা অনুমোদনের জন্য জানাতে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পর ঘর তৈরির কাজ শুরু না হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। 
কী সেই পদক্ষেপ?
টাকা ফেরত আনার জন্য প্রথমে উপভোক্তার কাছ থেকে আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হবে। বিডিও কে উল্লেখ করে লেখা ছাপানো আবেদনপত্রে ৬০ হাজার টাকা প্রাপ্তির পরও ঘর তৈরির কাজ শুরু করতে না পারার বিষয়টি থাকবে। একইসঙ্গে স্বাক্ষরকারী গরিব মানুষটিকে লিখিয়ে নেওয়া হবে, ‘‘সরকারের থেকে অর্থ প্রাপ্তির পরেও ব্যাক্তিগত, জমি সংক্রান্ত, শারীরিক ও পারিবারিক সমস্যার জন্য ঘর তৈরির কাজ শুরু করতে পারিনি। এমতাবস্থায় কারোর দ্বারা প্ররোচিত না হয়ে স্বেচ্ছায় সরকারি অর্থ ফিরত দিতে ইচ্ছুক।’’ 
ছাপানো আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার পর গরিব মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হবে সরকারের ‘টিআর-৭’ সরকারি ফরম। সরকারি ট্রেজারিতে সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্ত কোনও টাকা ফেরত দিতে হলে এই ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয়। এখন গরিব মানুষ নিজে ‘টিআর-৭’ ফরম ফিলাপ করে ট্রেজারিতে গিয়ে টাকা জমা দেবেন নাকি সরকারি কর্মচারীরা টাকা নিয়ে ট্রেজারিরে জমা দেবেন তার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এখনও তৈরি হয়নি।গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১২ লক্ষ উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকার। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে দ্বিতীয় কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পাঠাতে শুরু করে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাঠানোর আগে পঞ্চায়েত দপ্তরের সমীক্ষায় উঠে আসে, ৩০ শতাংশের ওপর উপভোক্তা প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পরও ঘর তৈরি করেনি। এখন সেই টাকা ফের সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
কীভাবে ঘর তৈরি করতে না পারা গরিব মানুষের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা ফেরত আনা যায়, তারজন্য ইতিমধ্যেই পঞ্চায়েত দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা একাধিক বৈঠক করেছেন। জেলা প্রশাসনের কাছে অনলাইন বৈঠক করে টাকা ফেরত আনার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে উপভোক্তার বাড়ি থেকে টাকা ফেরত আনার কাজের জন্য একটি টিম তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চায়েত দপ্তরের এক শীর্ষকর্তার বক্তব্য, ‘‘ রাজ্যের প্রতিটি ব্লকেই প্রথম কিস্তির টাকা পাওয়ার পরও ঘর তৈরির কাজ শুরু করতে না পারা উপভোক্তা আছে। এখন তাদের থেকে টাকা ফেরত আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি ব্লকের বিডিও’কে মাথায় রেখে একটি টিম তৈরি করতে বলা হয়েছে। সরকারিভাবে তৈরি টিমের সদস্যরাও উপভোক্তার কাছ থেকে টাকা ফেরত আনার কাজ করবে।’’
পঞ্চায়েত দপ্তর সূত্রের খবর, সরকারি কোনও প্রকল্পের টাকা উপভোক্তার ব্যবহার না করলে সেই টাকা ফেরত নেওয়ার কথাই আইনে বলা আছে। কিন্তু এতদিন এইভাবে টাকা ফেরত নেওয়ার কোনও উদ্যোগ সরকারের ছিল না। এরআগে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা(পিএমএওয়াই) প্রকল্পে সরকারি টাকার অপব্যবহার নিয়ে বহু অভিযোগ থাকলেও রাজ্যের তরফে কার্যত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করে দেওয়ার পর এবারই প্রথম রাজ্যের নিজের কোষাগার থেকে টাকা খরচ করা হচ্ছে। সেই টাকার ন্যূনতম অপব্যবহার ঠেকাতে আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে রাজ্য সরকার। 
২০১৮ সাল থেকে আবাসের ঘর তৈরির জন্য নথিভুক্ত হয়ে টাকা পায়নি গ্রামের গরিব মানুষ। এখন টাকা হাতে পাওয়ার পর সরকারি সমীক্ষায় উঠে এসেছে ৩০ শতাংশ উপভোক্তা বাড়ি তৈরির কাজ শুরুই করতে পারেনি। শুরু না করার কারণ হিসাবে রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কর্মচারীদের অভিজ্ঞতা, ‘‘ হাতে একলপ্তে ৬০ হাজার টাকা আসার পর গরিব মানুষ অনেকেই অন্য খাতে খরচ করে ফেলেছেন। আবার ইঁট, বালি, সিমেন্ট সহ ইমারতি জিনিসের দাম ২০১৮ সালের থেকে এখন অনেক গুণ বেশি। ফলে বাড়ি তৈরির কাজে সমস্যা হয়েছে।’’ 
কিন্তু তার থেকেও বড় সমস্যা অন্যত্র। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় টাকার সঙ্গে ১০০ দিনের কাজের মজুরি হিসাবে গরিব মানুষ ২১ হাজার টাকা অতিরিক্ত হাতে পেতেন। এবার সেটা বন্ধ। যার পরিণতিতে সমস্যায় পড়েছেন বহু উপভোক্তা। কিন্তু সঙ্কটে পড়া গরিব মানুষের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না রাজ্য সরকার।

Comments :0

Login to leave a comment