৬ বছর পর ফের বাঘের আতঙ্ক লালগড়ে। বৃহস্পতিবার সাত সকলে লালগড় রেঞ্জের ভাউদি বিটের আজনাশুলি, লক্ষনপুরের জঙ্গলে দেখা মিলল বেশ বড় আকারের পায়ের ছাপ। যারা দৈর্ঘ ১১ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ১০ সেন্টিমিটারের কাছাকাছি। যা কিনা একটি পূর্ণ বয়স্ক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের অনেকটাই কাছাকাছি। যদিও প্রাথনিকভাবে বন দপ্তর মনে করছে এটি নেকড়ে বাঘের পায়ের ছাপও হতে পারে। তবে ৬ বছরের আগে বাঘ আসার যে রেকর্ড রয়েছে তাতে বন দপ্তর এদিন পায়ের ছাপ মেলাতে কোন খামতি রাখেনি। সেই সময় প্রচুর গবাদি পশু চলে গিয়েছিল বাঘের গ্রাসে।
বন দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে ওই এলাকায় ২০১৮ সালেও বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছিল। তাই ট্রাপ ক্যামেরা লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে। পশাপাশি বন দপ্তরের পক্ষ থেকে নজরদারি তীব্র করা হচ্ছে। মানুষকে অতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বার্তাও দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য এদিন সকালে আজনাশুলি জঙ্গলে কাঠ, পাতা কুড়াতে গিয়ে বড় আকারের পায়ের ছাপ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় কিছু মানুষ। সেই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে মানুষ জনও জড় হতে থাকেন।
আজনাশুলি গ্রামের বাসিন্দা মনোজ মাহাতো বলেন,‘‘গ্রাম সংলগ্ন রাস্তায় বাঘের পায়ের ছাপের মতো একটি পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এই ধরনের পায়ের ছাপ আগে কখনও এই এলাকায় দেখা যায়নি। আমাদের অনুমান এটি একটি বাঘের পায়ের ছাপ। গরু-ছাগল চরানোর জন্য আমাদের জঙ্গলে যেতে হয়। এই বাঘের পায়ের ছাপ দেখার পরেই আমরা আতঙ্কে রয়েছি।’’ জঙ্গলে বাঘ না অন্য কোন জন্তু রয়েছে তার তদন্ত করে দেখার জন্য বনদপ্তরের কাছেও আর্জি জানান গ্রামবাসীরা। যে আকারের পায়ের ছাপ মিলেছে তাতে পূর্ন বয়স্ক বাঘ না হলেও শাবক বা সাব অ্যাডাল্ট বাঘ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য উল্লেখ্য ২০২৪ সালের ২০ ডিসেম্বর ওড়িশার সিমলিপালের রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে জিতান নামে একটি বাঘিনী ঝাড়খণ্ড বর্ডার পেরিয়ে বেলপাহাড়ির শিমুলপাল অঞ্চলের কোটাচুঁয়ার গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করেছিল। তারপর পাহাড় জঙ্গল ঘেরা বেলপাহাড়ির জুজারধারা,ময়ূরঝর্ণা, জবালা, ওড়লি, ছুরিমারা, মিনিয়ারড়ি, কাঁকড়াঝোড় সহ বিভিন্ন জঙ্গলে ঘোরাঘুরির পর পুরুলিয়া হয়ে বাঁকুড়ার রানীবাঁধের গোসাইডিতে জঙ্গলে ২৯ ডিসেম্বর ঘুম পাড়ানি গুলি ছুঁড়ে বাঘিনী জিতাকে ধরা হয়েছিল। জিতানকে ফিরিয়ে যাওয়ার কিছু দিন পরেই চলতি বছরের গোড়ার দিকে বেলপাহাড়ির বাঁশপাহাড়ি অঞ্চলের মানিয়াড়ির জঙ্গলে বাঘের পায়ের ছাপের দেখা মিলেছিল। একটি পরুষ বাঘ জিনাতের পিছু নিয়ে এসেছিল। বনদফতরের ট্রাপ ক্যামেরাতে সেই ছবিও ধরা পড়েছিল।
সেই সময় বেলপাহাড়ির বিভিন্ন জঙ্গলে গরু, বাছুর মারা পড়েছিল। প্রায় দেড় মাস ধরে পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছিল বেলপাহাড়ির বিভিন্ন জঙ্গলে। পরে বাঘটি ফিরে যায়। এর আগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম লালগড় থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে ছিল। রামগড়, লক্ষনপুর, ভাউদি, করমশোল, রাঙামেটিয়া,পাথরপাড়া, আমলিয়া সহ বিভিন্ন গ্রামের গোয়ালে থাকা অথবা বাড়ির সামনে বাঁধা গরু, ছাগল ভেড়া সহ বিভিন্ন গবাদি পশু আজনা জন্তুর হামলার শিকার হতে থাকে। জঙ্গলে চড়তে গিয়ে মারা পড়ে বিভিন্ন গবাদি পশু। মৃত দেহাংশ পাওয়া যায় বন্য শুয়র সহ বিভিন্ন জন্তু। তাদের হাড়গোর মিলতে থাকে। এরপর পায়ের ছাপ মিলতে থাকে। এদিনও দেখা মিলল অজান জন্তুর পায়ের ছাপ। যা দেখে আতঙ্কিত গ্রামের মানুষ।
Comments :0