সিভিক ডাক্তার
অমল কর
নয়ই জানুয়ারি ঘরের ভেতর হড়কে পড়ে আমার পায়ের পাতায় বেজায় চিড়। পরেরদিন হাসপাতালে এক্সরে আর অনেক কারসাজির পর সিনথেটিক প্লাস্টার করা হল। গুচ্ছের কড়া ওষুধ আর টাকার শ্রাদ্ধে দফারফা। আজ -না- কাল , শনিবার -না -সোমবার, বেজায় তালবাহানার পর প্লাস্টার খোলা হল সাতাশে ফেব্রুয়ারি। ব্যথা- ফোলা ,ঠান্ডা -গরম জল ব্যবহার ,ব্যায়াম,ওষুধ, সীমিত হাঁটা-চলা ,পা উঁচু রেখে পায়ের তলায় বালিশ রেখে শোওয়া,এমনি কতশত রকমারি কসরত।দিন যায়, মাস যায়,ব্যথা কমে তো ফোলা কমে না। কত কত ক্যালসিয়াম আর হাড় সারাবার ওষুধ।এসব ওষুধের আবার সাইড এফেক্ট। চোঁয়া ঢেকুর,অম্বল,পেটব্য্যথা। পা টিপে টিপে হাঁটা,সাবধানে পা ফেলা, অসমতল পথ পরিহার করা__ এমনি সব নিষেধাজ্ঞা।খোলা মনে বলছি, ফোলা পা দেখে ঘাবড়ে গিয়ে ফের গেলাম
১৫ দিনের পাস নার্সের সুপারিশে ৩ বছরের সিভিক ডাক্তারের কাছে । যেতেই, পা ফোলা দেখেই সিভিক ডাক্তার বললেন 'হার্টের ব্যামো,অপারেশন'। ব্যাটা বলে কি! ৪০ হাজার টাকা লাগবে শুনে পিলে চমকে আমি অজ্ঞান।
'ইমেডিয়েট নার্স, ব্ল্যাক আউট '। ক্লাস টু পড়া টাকা ঢেলে পনেরো দিনে পাস নার্স শুনলেন, 'ইডিয়েট'।ওই শব্দটা পাড়ার মদনাদা কথায় কথায় একে -ওকে- তাকে কারণে -অকারণে আকছার বলেন।
মস্তানি করেন বলে নেতারাও ইডিয়েট
বললে চট করে চটে যান না। নার্স বাসন্তী জানে ইডিয়েট বলতে বোকা গাধা হাঁদা অর্থে ব্যবহার করে। ইমেডিয়েট শব্দ সে শোনেনি। হাঁদার মতো খানিক ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থেকে বাসন্তী ভয় পেয়ে ওটি (অপারেশন থিয়েটার) রেডি করলেন ।সিডেটিভ দিতে আসতেই আমার চটকে গেল আচ্ছন্নতা। সিভিক ডাক্তার মাস্ক পরে গ্লাভস চড়িয়ে নির্ভীক ছুরি কাঁচি তুলছে দেখে অসহায় আমার বউ মাধবী আর্তনাদ করে উঠল।সিভিক ডাক্তার বাড়িতে তরমুজ কাটতে চাকু ব্যবহার জানে।আর গোঁফ ছাঁটতে কাঁচির। সব শুনে আমার আর বউ-এর পাড়াতুতো ইয়ারবন্ধুরা গলা চড়িয়ে সিভিক ডাক্তারের পিন্ডি চটকাতে আসছে দেখে নার্স পালাল একছুটে। চটিচাটা দলদাস টাকা দিয়ে চাকরি পাওয়া সিভিক ডাক্তার মারমুখী জনতার হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে জানালা গলে লাফ দিয়ে ককিয়ে আর্তনাদ করে ওঠে " বাঁচাও,কে
আছো, মরেছি যে সিভিক ডাক্তার হয়ে।"
Comments :0