একটি যাদু-গোল। দুটি উপহার। যাদুটি সহস্রতম ম্যাচে লিওনেল মেসির। আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোল আলভারেজের, তবে গোলরক্ষকের দ্বিধায় পেয়ে যাওয়া বল থেকে। অস্ট্রেলিয়ার গোল নিশ্চিত বাইরে যাওয়া শট থেকে এঞ্জো ফার্নান্ডেজের গায়ে লেগে গতিপথ বদলে যাওয়ায়।
আর্জেন্টিনা ২-১ জিতে শেষ আটে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি।
এইসব লেখা থাকবে খাতায়। আসলে যা লিখে রাখা উচিত তা লিওনেল মেসির সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ। যা যা করতে হবে, তা-ই এই রাতে করেছেন মেসি। অবিশ্বাস্য গোল, নিচ থেকে পাস দেওয়া, গোলের জন্য সুবর্ণ সুযোগ সাজিয়ে দেওয়া, বারংবার বিপক্ষের রক্ষণকে ছিঁড়ে দেওয়া, সোলো রান। ফুটবল একজনের খেলা নয়। মেসি একা খেলেননি। কিন্তু দলকে জাগিয়েছেন, বিপদের সময়ে উদ্ধার করেছেন, বদলে যাওয়া ছকে মধ্যমণি হয়ে থেকেছেন।
খেলা তখন ধুঁকছে। আর্জেন্টিনাকে বেশ খানিকটাই দিশাহীন লাগছে। হঠাৎই দু’-তিনটি পাস খেলে গতি বাড়িয়ে দিলেন মেসি। পরিভাষায়, ‘এক্সলারেশন’। চার ডিফেন্ডার সামনে। তার মধ্যেই ফাঁক খুঁজে গোলরক্ষক থেকে সর্বোচ্চ দূরত্বে বল ঠেলে জড়িয়ে দিলেন জালে। অস্ট্রেলিয়ার ডিফেন্ডাররা তো বটেই, তাঁর সতীর্থরাও বুঝে উঠতে পারেননি কী থেকে কী হলো। ৩৫ মিনিটে মেসির গোলই কিন্তু প্রথমার্ধে অস্ট্রেলিয়ার গোল লক্ষ্য করে আর্জেন্টিনার একমাত্র শট। জাতীয় দলের হয়ে লিওর ৯৪তম গোল। কোনো বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে প্রথম গোল মেসির।
অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য ছিল নিজেদের পেনাল্টি বক্সের বাইরে আর্জেন্টিনাকে আটকে রাখা।
প্রথমার্ধে তারা এই কৌশলে সফলই। মেসির ম্যাজিকটি না ঘটলে আর্জেন্টিনার আক্রমণ অ্যাটাকিং থার্ডে অন্ধ গলিতে ধাক্কা খেয়েছে। মেসির জন্য নির্দিষ্ট দুই মার্কার রেখেছেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ। ডি মারিয়া না থাকায় খেলা তৈরি, ঘন ঘন অভিনবত্ব দেখানোর কেউ ছিলেন না। গোমেজ বাঁ প্রান্ত থেকে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে নিয়ে আসা হয় ডানদিকে। তারপরে কিছু গতি পায় আক্রমণ।
দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্টিনা শুরু করে ভালো। ছন্দবদ্ধ ফুটবল। ৫৭ মিনিটে আলভারেজ বল তাড়া করে গোলরক্ষকের ভুলে বল পেয়েও যান। দূরুহ কোণ থেকে নিখুঁত নিশানায় বল রাখেন। দ্বিতীয় গোলের পরে আর্জেন্টিনা প্লেয়ার বদল করে। লিসান্দ্রো মার্টিনেজ, পালাসিওকে নামানো হয়। এই পরিবর্তন খুব কাজে লাগেনি, বরং খেলার তাল কেটে দেয়। মরিয়া আক্রমণে যায় অস্ট্রেলিয়া। ৭৬ মিনিটে গডউইনের শট আর্জেন্টিনার ফার্নান্ডেজের কাঁধে লেগে ঘুরে যায়। জড়িয়ে যায় নিজেদের জালে। শেষ অংশ টানটান উত্তেজনার মধ্যে চলে যায়।
আরো একটি গোল পেতে পারত অস্ট্রেলিয়া, রোমেরো শেষ মুহুর্তে ব্লক করেন। গোলরক্ষক মার্টিনেজ আরেকবার বল কেড়ে নেন কৌলের কোল থেকে। কিন্তু এই সময়পর্বেও মেসিই অস্ট্রেলিয়াকে বেঁধে রেখেছিলেন পালটা আক্রমণে। হয় মেসিকে সামলাও নয় গোলের জন্য চেষ্টা করো— গত আঠারো বছর ধরে এই উভয়সঙ্কটে ভুগছে বিপক্ষ। তবে কেউ যদি তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়ে থাকেন তাহলে ডি পল।
Comments :0