POTATO FARMER'S DISTRESS

পড়ছে আলুর দাম, বিপর্যয়ের মুখে রাজ্যের ১৫ লক্ষ আলুচাষি

রাজ্য জেলা

FARMER DISTRESS POTATO FARMER WEST BENGAL AGRARIAN CRISIS BENGALI NEWS

বস্তা পিছু ১৫০ টাকা ক্ষতিতে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। আরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। 
এক বস্তা (৫০কেজি) আলু উৎপদন করতে কৃষকের খরচ হয়ে গেছে ন্যূনতম ৪০০টাকা। অথচ এই মুহূর্তে মাঠে আলুর দাম নেমে গেছে ২৫০টাকা বস্তায়। ১৫০টাকার বস্তা পিছু ক্ষতিতে থেমে থাকবে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং কৃষকের আশঙ্কা, আলুর দাম আরও নিচে নামবে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে পুরোদমে উঠতে শুরু করবে আলু। তখন দাম কী দাঁড়াবে, শঙ্কায় কৃষকরা।

দাম যে পড়তে চলেছে তা কৃষকের মতোই নিশ্চিত রাজ্যের কৃষি বিপণন ও কৃষি দপ্তরও। তার অন্যতম কারণ, চলতি বছরে রাজ্যে আলু চাষের এলাকা যেমন বেড়েছে। তেমনই রেকর্ড ফলন হতে চলেছে আলুর। কৃষি বিপণন দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য,‘‘ চলতি বছরে রাজ্যে প্রায় ১২০ লক্ষ টন আলুর ফলন হতে চলেছে। অধিক ফলনের জন্য দাম আরও কমার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।’’ কৃষি দপ্তর সূত্রেও জানা যাচ্ছে, চলতি আলু চাষের মরশুমে চাষের এলাকা গতবারের তুলনায় বেড়েছে। একইসঙ্গে এবারের আবহাওয়া আলুর ফলের পক্ষে প্রথম থেকেই আদর্শ ছিল। ধ্বসা রোগের কোনও প্রকোপ নেই। ফলে ফলনও রেকর্ড হতে চলেছে। কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা বলছেন, ফলন এবার ১২০লক্ষ টন ছাপিয়েও যেতে পারে।


ফলে আলুচাষিকে অভাবী বিক্রির হাত থেকে বাঁচাতে সরকারকে আলুর ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করছেন কৃষি বিপণন দপ্তরের আধিকারিকরা। কৃষি বিপণন দপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়,‘‘ কৃষক বস্তা পিছু ৮০০টাকা দর পেলে কিছুটা রক্ষা হবে। তার দায়িত্ব সরকারেরই নেওয়া দরকার। সরকার যদি কৃষকদের কাছ থেকে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নেয়, তার প্রভাব খোলা বাজারে পড়তে বাধ্য। তখনই একমাত্র আলুর দাম খোলা বাজারে বাড়তে পারে।’’ 

এ বছর আলুতে বিপর্যয়ের মূলে আছে গত বছরের হিমঘরে রাখা আলু নতুন আলু ওঠার পরেও থেকে যাওয়া। গত জানুয়ারি মাসজুড়ে গতবারের পুরানো আলুর প্রায় ১লক্ষ টনের কাছকাছি থেকে গেছে। পুরানো আলু থেকে যাওয়াতে নতুন আলু বাজারে আসার পর  দাম মেলেনি। 

কৃষি বিপণন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখন যে নতুন আলু বাজারে এসেছে তা আসলে দামোদর ও ময়ূরাক্ষী নদীর আশেপাশে এলাকার জলদি আলু। প্রধানত কুফরি পোখরাজ জাতের এই আলু বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান জেলার দামোদর তীরবর্তী এলাকা, বীরভূমের ময়ূরাক্ষী নদীর পার্শ্ববর্তী ময়ূরেশ্বর ২ নং ব্লক এলাকার সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞ্যা ব্লক এলাকা থেকে ওঠে। এই নতুন আলু হিমঘরে সংরক্ষণ করা যায় না। মাঠ থেকেই বিক্রি হয়ে যায়। পুরানো আলু থেকে যাওয়ার কারণে নতুন ওঠা আলুর দাম নেই। একইসঙ্গে পুরানো আলু এখন হিমঘর থেকে বাইরে এনে শেডে রেখে দেওয়া আছে। সেই আলুর দামও বস্তা পিছু ৭০টাকারও নিচে।


কৃষি বিপণন দপ্তরের আশঙ্কা, ফেব্রুয়ারি মাঝামাঝি থেকে রাজ্যের বাকি বিস্তীর্ণ এলাকার আলু উঠতে শুরু করবে। সেই আলুর দাম তখন কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেটাই এখন কৃষকদের মতোই দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনিতেই এরাজ্যের হিমঘরে আলু সংরক্ষণ করার ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৬৪ লক্ষ টন। ফলন হবে ১২০ লক্ষ টন। ফলে হিমঘরে রাখার আগেই আলুকে মাঠ থেকে বিক্রি করতে হবে কৃষককে। এখনই যে আলুতে বস্তা পিছু ১৫০টাকা ক্ষতির মুখে কৃষক। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি গিয়ে সেই দাম আরও নিচে নামতে চলেছে।

হুগলীর বিস্তীর্ণ আলু চাষের এলাকায় এখন মাঠ থেকে আলু তোলা শুরু হয়নি। মাঝ ফেব্রুয়ারি থেকে গরমের তাপ বাড়ার সঙ্গে, সঙ্গেই মাঠ থেকে আলু তোলা শুরু করবেন কৃষক। হুগলীর চণ্ডীতলা ২নং ব্লকের এক আলুচাষির কথায়,‘‘ আলু তোলাই শুরু হয়নি। কিন্তু আমরা বুঝে গেছি এবারে আলুতে লস হচ্ছেই। বিঘাতে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা ক্ষতির মুখে পড়ব আমরা।’’ 
মাঠ থেকে আলু তোলার আগেই মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে কৃষকরা পিছিয়ে গেছে। 

কৃষি বিপণন দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, ‘‘ কৃষি অর্থনীতিতে আমরা এই মনস্তাত্ত্বিক লড়াইটাকে নজরে আনি না। আলুর দাম নেই, বলে এমন একটা রব তুলে দেওয়া হয়, যাতে কৃষক আগে থেকেই দাম না পাওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে শুরু করে। এখানেই সরকারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে আলু কেনার ঘোষণা করলে তাতে শেষ পর্যন্ত লাভ হয় কৃষকদেরই।’’ 


কিন্তু এরাজ্যে আর্থিক স্থিতি এখন এতটাই বেসামাল যে সরকার কৃষকদের আলু কেনা নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্ত করে উঠতে পারেনি। গ্রামে এমনিতেই গত এক বছর ধরে বন্ধ ১০০দিনের কাজ। ফলে অসহায় পরিস্থিতি খেতমজুরদের। তারপর অন্যতম আয় দেওয়া ফসল আলুতে যদি বিপর্যয় নামে তার পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে চলেছে।

Comments :0

Login to leave a comment