বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের ব্রাত্য করে উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠনের নতুন বিল পাশ হলো বিধানসভায়। এর আগে রাজ্য সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে সার্চ কমিটি নতুন কাঠামো তৈরি করেছিল। ৩ জনের পরিবর্তে ৫ জনের সার্চ কমিটি গঠনের জন্য শুক্রবার বিধানসভায় ‘‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি ল (সংশোধনী) বিল ২০২৩’’ পাশ হলো। সর্বসন্মতিতে এই বিল পাশ হয়নি। এদিন বিধানসভায় ভোটভুটির মধ্য দিয়ে বিলটি গৃহীত হয়। এদিন ১২০-৫১ ভোটের ব্যবধানে এই বিল পাশ হওয়ায় উপাচার্য নিয়োগকে আরও কুক্ষিগত করবে শাসক তৃণমূল। এমনই মত জানিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে শিক্ষক মহল।
গত মে মাসে সার্চ কমিটি গঠনে পরিবর্তন এনে অর্ডিন্যান্স জারি করে রাজ্য সরকার। এই অর্ডিন্যান্সকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা হয়। সুপ্রিম কোর্ট এবং কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে নতুন কমিটিতে আনা হয় ইউজিসি’র চেয়ারম্যানের প্রতিনিধিকে। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এক জন প্রতিনিধিকেও আনা হয় কমিটিতে। আচার্য তথা রাজ্যপাল মনোনীত সদস্যকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হবে পাশ হওয়া সার্চ কমিটিতে। এছাড়া নতুন বিলে বলা হয়েছে, ওই কমিটিতে থাকবেন সরকার এবং উচ্চ শিক্ষা সংসদের মনোনীত এক জন করে প্রতিনিধি। পাঁচ সদস্যের কমিটি থেকে বাদ পড়েন সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট বা কোর্টের (প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থা) সদস্যেরা।
উপাচার্য নিয়োগে নতুন সার্চ কমিটিতে ৫ জন প্রতিনিধির মধ্যে রাজ্যপাল ও ইউজিসি’র প্রতিনিধি ছাড়া বাকি তিন জনই রাজ্য সরকারের মনোনীত প্রতিনিধি। উচ্চশিক্ষা দপ্তর, উচ্চশিক্ষা সংসদ ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি সরকারের অনুগত হয়ে থাকেন। ফলে উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটিতে দু’জন প্রতিনিধির আপত্তি থাকলেও সরকারের অনুগত তিন জনের প্রতিনিধি থাকায় সংখ্যা গরিষ্ঠতার জেরে সরকারের অনুগত উপাচার্যকেই নিয়োগ করা হবে। ফলে উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটিতে গণতান্ত্রিক মতামত বা বিরুদ্ধাচরণের কোনও পরিবেশই রাখা হলো না।
এসবের মধ্যে রাজ্যপালের একতরফা অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত চরম আকার ধারণ করেছে। বিল নিয়ে এদিন বিধানসভায় বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রশ্ন, ‘‘প্রাক্তন বিচারপতি ও প্রাক্তন সেনা আধিকারিকদের উপাচার্য পদে বসানো হচ্ছে। এঁদের কি কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার ১০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে? রাজ্যপাল যদি এই বিলের সই না দেয় তাহলে বুঝতে হবে বিজেপি’র কথায় রাজভবন চলছে।
এর আগে ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পথ থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানো সংক্রান্ত বিল পাশ হয়েছিল বিধানসভায়। তৎকালীন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বর্তমানে দেশের উপ রাষ্ট্রপতি হয়েছে। রাজ্যপাল থাকাকালীন তিনি ওই বিলে সই করেননি। তার পর অস্থায়ী রাজ্যপাল লা গনেশনও কয়েক মাস রাজ্যের দায়িত্বে ছিলেন। গত বছর নভেম্বরে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব আসেন সিভি আনন্দ বোস। তাতেও সেই বিল অনুমোদন পায়নি। এছাড়াও ধনখড়ের জমানা থেকেই হাওড়া পৌর নিগম বিল রাজভবনে আটকে রয়েছে। তাই উপাচার্য নিয়োগের জন্য আনা সার্চ কমিটি সংক্রান্ত বিল আদৌ রাজভবনের অনুমোদন পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
Comments :0