জেলা বামফ্রন্টের প্রতিনিধিদের সাথে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা শাসক দেখা করলেন না। কোনো অতিরিক্ত জেলা শাসকের কাছে যাওয়ার কথাও জানালেন না। ঔদ্ধত্য দেখালেন। ভোট গণনা কেন্দ্রে কারচুপি রোধে পর্যাপ্ত কার্যকরী ব্যবস্থা রাখার দাবি ও নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস রোধের দাবিতে, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে ৮ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি নিয়ে জেলা শাসকের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন জেলা বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। সোমবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্টের তরফে জেলা শাসক দপ্তরের সামনের একটা বিক্ষোভ সভা থেকে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা জানিয়ে পুলিশের মাধ্যমে অনুমতি চাওয়া হয়। অসৌজন্যতা করলেন জেলা শাসক। অনুমতি দিলেন না।
বিক্ষোভ সভাতে ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তিনি সাংবাদিকদের বলেন , নবান্নের নির্দেশ না এলে স্মারকলিপি নেওয়ারও ক্ষমতা নেই জেলা শাসকের। এই অসৌজন্যতার জন্যে জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব জেলা শাসক দপ্তরে গেলেননা।
এর আগে বারাসাতের হেলাবটতলাতে সমবেত হয়ে জেলা বামফ্রন্টের নেতৃত্বে একটি প্রতিবাদী মিছিল জেলা শাসক দপ্তরের সামনে আসে। মিছিলে ছিলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, পার্টির জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী সহ পলাশ দাশ, গার্গী চ্যাটার্জি, সোমনাথ ভট্টাচার্য, আত্রেয়ী গুহ, মানস মুখার্জি, সায়নদীপ মিত্র, আহমেদ আলী খান, ঝন্টু মজুমদার প্রমুখ; নেতৃবৃন্দ।
জেলা শাসকের দপ্তরের আগে বাঁশ বেঁধে ও লোহার ব্যারিকেড করে নিশ্ছিদ্র প্রহরার বেষ্টনী গড়ে তুলে পুলিশ ও কমব্যাট ফোর্সের বিরাট বাহিনী দাঁড়িয়ে পড়ে। আশপাশের রাস্তা গুলিও সিল করে দেওয়া হয়।
শুরুতেই নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেন বামফ্রন্ট ব্যারিকেড ভাঙ্গতে এখানে আসেনি তাঁরা শুধু চাইছেন স্মারকলিপি নিয়ে জেলা শাসকের সাথে প্রতিনিধি দলের আলোচনা। কিন্তু জেলা শাসক অনুমতি না দেওয়ার ঔদ্ধত্য দেখালে স্মারকলিপিটি বামফ্রন্টের কয়েকজন কর্মী জেলা শাসক দপ্তরে জমা দিয়ে আসেন। জেলা শাসকের এই আচরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সমগ্র প্রতিবাদ সমাবেশ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) জেলা কমিটি সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদক মন্ডলী সদস্য পলাশ দাশ, ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা সঞ্জীব চ্যাটার্জি, সিপিআই নেতা কুমারেশ কুন্ডু, আরএসপি নেতা মিহির পাল।
পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় জেলা জুড়ে মনোনয়ন পর্ব থেকে নির্বাচন পর্বে মানুষের অধিকার লুট ও নৃশংস অত্যাচারের ঘটনা এবং পূনর্ণিবাচনের বুথ অঞ্চলে ফের তৃণমূলের হামলার ঘটনা গুলির কথা তুলে ধরে বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন, কন্ঠরোধ করার এধরণের অত্যাচারের জন্যে জনতার রোষানলের ঘটনা হয়ে যাবে।
জেলা শাসকের দলদাসের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে মৃণাল চক্রবর্তী প্রতিবাদ সমাবেশে বলেন, নির্বাচন কমিশনের জেলা আধিকারিক জেলা শাসকের চক্ষু কর্ণ ঢাকা। জেলা শাসকের বেতন হয় জনসাধারণের করের টাকায়, তাঁর পদ সংবিধান ও নিয়ম মেনে চলার জন্যে, তৃণমূলের পদলেহন করার জন্য নয়। বামফ্রন্ট স্মারকলিপি দিতে প্রতিবাদ সভা করলে লাঠি হাতে পুলিশের ব্যারিকেড করা হয় অথচ ভোট লুট সন্ত্রাস চালাোর সময়ে ডেকে ডেকেও পুলিশকে পাওয়া যায়নি।
সমগ্র পঞ্চায়েত নির্বাচন পর্বে জেলা শাসকের ন্যাক্কার জনক ভূমিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে পলাশ দাশ সমাবেশে বলেন, সমগ্র নির্বাচনে তৃণমূলের ভাড়াটে সৈনিক হিসাবে কাজ করলো পুলিশ। জেলা শাসক কার্যত তৃণমূলের হয়ে ভোটে খাটলেন। তিনি বলেন, কাউন্টিং এ কারচুপি করার চক্রান্তে কাউন্টিং এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূল অত্যাচার করছে অথচ পুলিশ ও প্রশাসন নির্বিকার। পলাশ দাশ বলেন, মানুষের অধিকার লুট করার জন্যে অতি সক্রিয়তা দেখিয়ে যারা অত্যাচার করছে, তৃণমূল যা বলছে তাই করছে যারা, সেই সব পুলিশ অফিসার ও প্রশাসনিক আধিকারিক আসলে তৃণমূলের থেকে ভাগ নিয়ে দূর্নীতির সাথে যুক্ত। রাজ্যপালের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূল - বিজেপি বাইনারির মিডিয়া প্রচারের কথা উল্লেখ করে পলাশ দাশ বলেন, কয়েকটি স্থানে ছাড়া তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিজেপি'র কোনো ভূমিকা নেই।
Comments :0