বিশ্বকাপ যোগ্যতাঅর্জন পর্বের ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে ৪-১ গোলে হারের পর বিদ্ধস্থ ব্রাজিল দলকে নিয়ে শুরু হয়েছে কাঁটাছেড়া । বেশ কয়েকবছর ধরে বিশ্বকাপে ক্রমাগত ব্যর্থতার মুখই দেখছে ব্রাজিল দল। কোচ পরিবর্তন হলেও খেলায় কোনো পরিবর্তন আসেনি ব্রাজিলের। ফুটবলে হলুদ জার্সির খেলা দেখে প্রেমে পড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। প্রথমে পেলে , গ্যারিঞ্চা , ভাভা , ডিডিরা । বিশ্বকাপের পূর্ববর্তী ট্রফির নাম ছিল জুলে রিমে কাপ। ফিফা নিয়ম করেছিল যে দেশ তিনবার এই ট্রফি জিতবে তারা চিরতরে আপন করে নেবে ' সোনার পরী' কে। এ ইতিহাস সকলেরই জানা । ১৯৭০ সালের ফাইনালে ব্রাজিল ও ইতালি দুই দলই দুইবার করে বিশ্বকাপ জিতে ফেলেছিল। সেই ফাইনালে ৪-১ গোলে জিতেছিল ব্রাজিল। পরবর্তীতে রোমারিও , বেবেতো , দুঙ্গারা জিতেছিলেন চতুর্থবার ১৯৯৪ সালে টাই ব্রেকারে সেই ইতালিকে হারিয়েই। ২০০২ সালে বিশ্বকাপজয়ী সেই দলের সদস্য রোনাল্ডো , রিভাল্ডো , রোনাল্ডিনহো , রবার্তো কার্লোস , কাকা , আদ্রিয়ানো , কাফুরাই হল আপাতত শেষবারের সেই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলাররা যাদের খেলায় মুগ্ধ হয়েছিল একটা গোটা প্রজন্ম। এইসব খেলোয়াড়দের খেলা দেখে একটি প্রজন্ম সেই যে ব্রাজিলের প্রেমে পড়েছিল । সেই দুর্বলতা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা। তবে বর্তমানে এই ব্রাজিলের অস্তিত্বই যেন সংকটে পড়ে গিয়েছে। ২০১০বিশ্বকাপ থেকেই চলছে এই ভরাডুবি। ২০১৩তে নেইমারদের ব্রাজিল কনফেডারেশন কাপ জিতলেও ব্যর্থ হয়েছিল ঘরের মাটিতে ২০১৪সালে। সেমিফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে ৭-১ গোলে ভরাডুবির সেই অভিশপ্ত রাত ভুলতে পারেননি কেউই । রোনাল্ডো , রোনাল্ডিনহোরা অবসর নেওয়ার পর সমস্ত মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিল নেইমারকে ঘিরে । কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ তিনিও। ভিনি , রড্রিগো , রাফিনহারা দলগতভাবে খেলতে বারংবার ব্যর্থ হচ্ছেন। বর্তমান কোচ দরিভাল দলটিকে এক সুতোয় গাঁথতে পারছেননা। ২০২৬ বিশ্বকাপে যোগ্যতাঅর্জন নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠে গেছে ব্রাজিলের। শোনা যাচ্ছে বিশ্বকাপের আগেই কোচের পদে আসতে পারেন কার্লো আন্সেলোত্তি অথবা জিনেদিন জিদান। অনেক বছরের প্রথা ভেঙে বাজিল ঝুঁকছে বিদেশী কোচেদের দিকে। তবে হয়তো আবারো ভুল পথেই পা বাড়াচ্ছেন ব্রাজিল ফেডারেশনের কর্তারা। কারণ ৯৫বছরের বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোনো বিদেশী কোচ জয় করতে পারেননি বিশ্বকাপ ট্রফি। রেকর্ড তৈরী হয় ভাঙ্গার জন্যই। কিন্তু এক্ষেত্রে বড্ড ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে ব্রাজিলের জন্য। ভরাডুবির কারণ হিসেবে মূল যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হল ২০০২ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের সব খেলোয়াড়রা ইউরোপে খেললেও তারা ভুলে যাননি শিকড়ের টান। সেসময় রিয়ালের হয়ে মাঠ কাঁপাচ্ছেন রোনাল্ডো , রবার্তো কার্লোস। এসি মিলানের স্বর্ণযুগের অন্যতম প্রধান সদস্য ছিলেন দিদা , কাফু , কাকারা। ইন্টারের জার্সিতে নিজেদের ছাপ রাখছিলেন আদ্রিয়ানো। কিন্তু নিজেদের স্বচ্ছন্দ্যের ব্রাজিলিয়ান টাচ ভোলেননি কেউই। ফলে ফল পেয়েছিল ব্রাজিল দল। তবে এখনকার দলের বেশিরভাগ ফুটবলাররা ইউরোপের একাডেমি থেকে উঠে আসায় হারিয়ে ফেলছে তাদের নিজস্বতা। ইউরোপিয়ান ঘরানার ফুটবল সারাবছর খেলায় হারিয়ে গেছে সেই ব্রাজিলিয়ান টাচ। ফলে এই ভরাডুবি থেকে ব্রাজিলের নৌকাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে কোনো এক ব্রাজিলিয়ান কোচই। তবেই ব্রাজিল ফের বিশ্বফুটবলের জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন পাবে।
Brazil's Downfall
সাম্বার নৌকাডুবিতে দাঁড় ধরতে হবে কোনো ব্রাজিলিয়ানকেই

×
Comments :0