COOCHBEHAR CONDOLENCE MEETING

প্রয়াত দুই নেতার স্মরণসভা কোচবিহারে

রাজ্য

মঙ্গলবার কোচবিহার রবীন্দ্র ভবনে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণ সভায় সূর্যকান্ত মিশ্র।

জয়ন্ত সাহা ও অমিত দেব: কোচবিহার

যাঁদেরকে স্মরণ করছি, তাঁদের কাছ থেকে কী শিখলাম, তার অনুশীলন জরুরি। যা শিখেছি, তা প্রয়োগ করা জরুরি। প্রয়োগের ক্ষেত্রে বোঝাপড়া ঠিক জায়গায় আছে কিনা বুঝে নেওয়া জরুরি। সেজন্য আমরা স্মরণসভা করি। 
মঙ্গলবার কোচবিহার রবীন্দ্র ভবনে কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও কমরেড সীতারাম ইয়েচুরির স্মরণ সভায় এই আহ্বান জানালেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে তিনি জানিয়েছেন যে  রাজ্যের সর্বত্র ‘থ্রেট কালচার’-র বিরুদ্ধে লড়াই সাময়িক বিষয় নয়। মানুষ নেমেছেন। এই লড়াই জারি থাকবে।
সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের সময়েই প্রয়াত হয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরি। তার মাসখানেক আগে প্রয়াত হয়েছেন সিপিআই(এম) নেতা এবং রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। লড়াই এবং গণআন্দোলনে দুই নেতার ভূমিকার উল্লেখ করেন।  
মিশ্র বলেন, ১৯৭৭ সালে রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার গঠিত হয়। রাজ্য ক্ষুদ্র শিল্প, মাঝারি শিল্প, হস্তশিল্পে এগিয়ে যায় সারা দেশে। ২০১১ সাল পর্যন্ত এই ক্ষেত্রগুলিতে প্রথম স্থানেই ছিল পশ্চিমবঙ্গ। কৃষি উন্নয়ন ও ভূমি সংস্কারের ফলে গ্রামের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছিল। কিন্তু শুধু ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দিয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ মানুষের যদি ক্রয়ক্ষমতা না থাকে তাহলে বাজারের কোন মূল্য নেই। আর বাজারে যদি বিক্রি না হয়, তাহলে কলকারখানা কোন ভাবেই চলতে পারে না। কলকারখানা যদি না থাকে, তাহলে শ্রমিকের হাতেও কাজ থাকবে না। বেকারি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে জ্যোতি বসুর এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শিল্পায়নের নীতিতে এগিয়েছেন। আমরা চেয়েছি বড় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে। 
মিশ্র বলেন, বাংলায় যেটুকু শিল্পের সম্ভাবনা ছিল, তার বাস্তব রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। যে শিল্পে প্রচুর মানুষ কাজ করতে পারবেন, এই রকমের শিল্প গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। 
মিশ্র বলেন, বামপন্থীদের সর্বদা বিকল্পের জন্য লড়তে হয়। বামপন্থীরা কেবলমাত্র সংসদে আর বিধানসভায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য কাজ করে না। কেবল সরকার চালানোর জন্য বামপন্থীদের জন্ম হয়নি। বামপন্থীরা সমাজের মৌলিক পরিবর্তন চায়, সমাজ বদলাতে চায়। যে সমাজ সকলের কাজ দিতে পারে। যে সমাজ সবার জন্য খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা-পানীয় জল-নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে। এই মতাদর্শ নিয়েই কাজ করে গিয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সীতারাম ইয়েচুরি। 
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা অক্ষয় ঠাকুর বক্তব্য রাখেন। ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য অলোকেশ দাস, জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য, আলিপুরদুয়ারের জেলা সম্পাদক কিশোর দাস এবং জেলার সিপিআই ও সিপিআই (এমএল) নেতৃবৃন্দ। 
স্মরণসভার আগে সাংবাদিক বৈঠকে মিশ্র বলেন,আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ সহ সারা রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ‘থ্রেট কালচার’চলছে। তা আর বেশিদিন চলবে না। এই আন্দোলনের সঙ্গে গোটা রাজ্যের মানুষ ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছেন। অর্থাৎ প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর, আত্মবিশ্বাস মানুষ পেয়েছেন। মানুষ উপলব্ধি করছেন যে লড়া যায়, সরকারকে মাথা নত করতে বাধ্য করা যায়। এই লড়াইটা শেষ পর্যন্ত করতে হবে, এটা সাময়িক ব্যাপার নয়। সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন  সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়, পার্টি নেতা অলকেশ দাস ও মহানন্দ সাহা।
ডুয়ার্স ও তরাইয়ের এর চা বাগান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ওরা তো আদালতের রায়ও মানছে না। দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি ন্যূনতম মজুরি দিতে পারলেও আমাদের রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে পুরোপুরি ভাবে ব্যর্থ। 
বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে সরকার শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করতো আর এখন সরকার মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত। লোকসভা নির্বাচনের আগে ৬টি বন্ধ চা বাগান অধিগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিলেও, আজও তা পূরণ করেনি রাজ্যের সরকার। একইভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ৫টি চা বাগান অধিগ্রহণের কথা বললেও, সে প্রতিশ্রুতিও অধরাই থেকে গেছে।
দুই প্রয়াত নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ২৬ মিনিটের একটি ভিডিও ক্লিপিং দেখানো হয়। নাট্যদল ‘ব্রাত্যসেনা’ আরজি কর কাণ্ডে ধিক্কার জানিয়ে ১৬ মিনিটের নাটক "ফিনিক্স" উপস্থাপনা করেন মঞ্চে।

Comments :0

Login to leave a comment