পীযুষ ব্যানার্জি: জলপাইগুড়ি
শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সেতুবন্ধন করেই বামপন্থার পুনর্জাগরণের শপথে সম্পন্ন হলো সিপিআই(এম)র জলপাইগুড়ি জেলার ২৬তম সম্মেলন।
এ জেলায় পরিচিতিসত্তার আন্দোলনে বারেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে শ্রেণি ঐক্য। হাত শক্ত হয়েছে দক্ষিণপন্থার। নতুন আঙ্গিকে এখন যুক্ত হয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের বিভাজনের রাজনীতির ছোবল। আক্রান্ত শেষ পর্যন্ত হতে হয়েছে গরিব মানুষকেই। গত দু‘দিন ধরে চলা সম্মেলনে প্রতিনিধিদের ভাষণে বারেবারে সেই বিভাজনের রাজনীতির সমস্যার কথা উঠে এসেছে।
নবনির্বাচিত জেলা কমিটির সদস্যদের নিয়ে প্রথম বৈঠকে জেলা সম্পাদক পদে পীযূষ মিশ্রের নাম প্রস্তাব করেন বিদায়ী জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য। জেলা কমিটির প্রথম বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ২৬তম জেলা সম্মেলন থেকে প্রতিনিধিরা সর্বসম্মতভাবে ৪০জন জেলা কমিটির সদস্যকে নির্বাচিত করেছেন। একইসঙ্গে আগামী রাজ্য সম্মেলনের জন্য ৯জন প্রতিনিধিও সর্বসম্মতিতে নির্বাচিত হন।
জলপাইগুড়ি রবীন্দ্র ভবনে প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন চা শ্রমিক নেত্রী শ্রাবন্তী কুজুর৷
জেলা সম্মেলনে মোট ৩৬৬ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। ৫১ জন মহিলা প্রতিনিধি সম্মেলনে যোগ দিয়ে ছিলেন। বিভিন্ন জনজাতির জেলা জলপাইগুড়িতে পরিচিতিপত্রের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রতিনিধিদের মধ্যে বাংলা, হিন্দি, নেপালি, কুরুক ও সাদ্রি ভাষাভাষী প্রতিনিধিদের উপস্থিতি। জেলা সম্মেলনে সর্বকনিষ্ঠ প্রতিনিধি ছিলেন ২০ বছরের অর্ণব সরকার। বয়োজ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ছিলেন ৮১ বছর বয়সী প্রশান্ত শিকদার।
চা বাগানের শ্রমিকমহল্লা থেকে আলোচনায় যেমন উঠে এসেছে চা শ্রমিকদের ওপর আর্থিক বঞ্চনার কথা। তেমনই ধূপগুড়ির কৃষি এলাকা থেকে সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রতিনিধিরাও বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনাকে সামনে রেখে কীভাবে আরএসএস বিষ প্রচার করছে।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রতিনিধি অজয় মাহালি।
তৃণমূল প্রসঙ্গে প্রতিনিধিরা বলেছেন, ‘‘ওরা তো দু’দিকেই লাভ খুঁজছে। মেরুকরণে ওরা সুবিধা দেখছে। তাই ওরা নীরব।’’
সিপিআই(এম)র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন,‘‘দক্ষিণপন্থার উত্থান মানে, জাতপাত, ধর্ম, বর্ণের মধ্য দিয়ে আমার শ্রেণিকে আমার পার্টির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা। কামতাপুরী, রাজবংশী, গোর্খাল্যান্ডের নাম করে দক্ষিণপন্থীরা পরিচিতিসত্তার আন্দোলন করে। আবার নির্বাচনের সময় আসলে ওরাই লিডারের ভূমিকা থেকে ডিলার বনে যায়। এই অভিজ্ঞতা আপনাদের আছে। আর এখানেই কমিউনিস্ট পার্টির কাজ হচ্ছে, দক্ষিণপন্থার এই প্রয়াসকে অতিক্রম করা। সিপিআই(এম)’কে মজবুত করা। শ্রেণি সংগঠনকে শক্তিশালী করা। বামশক্তি যত সংহত হবে, উজ্জীবিত হবে, ততই পুনর্জাগরণ হবে বামপন্থার। আর বামপন্থার পুনর্জাগরণ মানেই দক্ষিণপন্থার উত্থান রোধ।’’
গত শনিবার প্রকাশ্য সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া সম্মেলনে ১৮টি এরিয়া কমিটি ও গণফ্রন্ট মিলিয়ে ৪০জন প্রতিনিধি আলোচনা করেন। টানা পাঁচ ঘন্টা আলোচনার পর সম্মেলনকে অভিন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার।
সম্মেলনে প্রতিনিধিদের সামনে জবাবী ভাষণ দেন বিদায়ী সম্পাদক সলিল আচার্য। এদিনই শেষ হয়েছে পার্টির জলপাইগুড়ি জেলার ২৬ তম সম্মেলন।
Comments :0