ডেঙ্গুতে মৃত্যু মিছিল চলছেই। প্রায় প্রতিদিনই মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে। সোমবার রাতে নদীয়ায় মৃত্যু হয়েছে এক কলেজ ছাত্রীর। বুধবার সকালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মতিঝিল গার্লস স্কুলের সপ্তম শ্রণির ছাত্রীর। মৃতের নাম সংযুক্তা পাল(১২)। কয়েকদিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিল। পরীক্ষা করে জানা যায় ওই ছাত্রী ডেঙ্গু আক্রান্ত। মঙ্গলবার তাখে ভিআইপি রোডের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে তার মৃত্যু হয়। ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গির উল্লেখ রয়েছে। নদীয়ার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নিহত কলেজ ছাত্রীর নাম সুস্মিতা মণ্ডল(২১)। সোমবার রাতে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।
রানাঘাট শহরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও রানাঘাট ১ ও ২ ব্লকের গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গু এখন চরম আকার নিয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ডেঙ্গি প্রতিরোধে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে খুব একটা হেলদোল নেই।
জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে,গত ১৪ সেপ্টেম্বর রানাঘাটের তারাপুর লাগোয়া শান্তিপুরের পুলতা গ্রামের বাসিন্দা সুস্মিতা জ্বরে আক্রান্ত হন। তিনি রানাঘাট কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথমে তাঁকে হবিবপুর যাদব দত্ত গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রানাঘাটের আঁইশতলার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডেঙ্গু পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
পরিবারের অভিযোগ, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার দুপুরে নার্সিংহোম থেকে অন্য কোনও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু রোগীকে ছাড়তে পাঁচ ঘণ্টা সময় নিয়ে নেয় নার্সিংহোম। এরপর অত্যন্ত সঙ্কটজনক অবস্থায় রানাঘাট হাসপাতালে ভর্তি হন সুস্মিতা। সোমবার রাত ন'টা নাগাদ কলেজ ছাত্রী সুস্মিতার মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, নার্সিংহোমের অসহযোগিতার কারণে সময় নষ্ট হয়ে গিয়ে সুস্মিতার মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অ্যাম্বুলেন্স জোগার করতে ওই পরিবার বেশ অনেকটা সময় নষ্ট করে ফেলেছে।
চলতি মরশুমে রাজ্যে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে বেসরকারি সূত্রের খবর। ডেঙ্গুর ছোবলে প্রাণ গিয়েছে অন্ততপক্ষে ৩৯ জনের। যদিও সরকারের তরফে ডেঙ্গুর কোনই পরিসংখ্যান দেওয়া হচ্ছে না, সমস্ত তথ্যই গোপন রাখা হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসেবে এ রাজ্যে উত্তর ২৪ পরগনা ও নদীয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানা যাচ্ছে। এছাড়া কলকাতা সহ হুগলি, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, জলপাইগুড়িতেও ডেঙ্গুর ভয়ঙ্কর প্রকোপ চলছে।
কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে যেভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন। মুখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য প্রশাসনও। কিন্তু কোনও হেলদোল নেই তাদের। বিভিন্ন এলাকার ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের বক্তব্য, জমা জল ও আবর্জনা দিনের পর দিন যত্রতত্রই দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সহজে দেখা মিলছে না পৌর সাফাই কর্মীদের।
এদিকে কোভিডের পর রাজ্যে নিপা ভাইরাসের আতঙ্কও ক্রমাগত বাড়ছে। কেরালা থেকে জ্বর নিয়ে ফিরে কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা এক ব্যক্তি। আশঙ্কা করা হচ্ছে তাঁর শরীরে নিপা ভাইরাস সংক্রমণ ঘটেছে। নমুনা পরীক্ষার বিশ্লেষণ চলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে কোভিডের চেয়ে নিপা ভাইরাসের প্রাণঘাতী শক্তি অনেক বেশি। স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে আরও কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফিরেছেন কিনা বা ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Comments :0