কোন সংস্থার কোন ওষুধ সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হবে তা চিকিৎসকরা ঠিক করেন না। অথচ জাল স্যালাইনে প্রসূতিমৃত্যুর ঘটনায় সেই চিকিৎসকদেরই দায়ী করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দপ্তর বা প্রশাসন নিজের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে।
মেদিনীপুর মেডিক্যালে প্রসূতিমৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের জেরা প্রসঙ্গে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী।
ভেজাল স্যালাইন কাণ্ডে সাসপেন্ড চিকিৎসকদের মধ্যে দু’জনকে ভবানী ভবনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছিল। সিআইডির তরফে সমন পাঠিয়ে শুক্রবার তাঁদের ডাকা হয়। দুই চিকিৎসকই সময়মতো পৌঁছে যান ভবানী ভবনে। চলে জিজ্ঞাসাবাদ।
গত ৮ জানুয়ারি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সদ্যোজাত জন্ম দেওয়ার পর বেশ কিছু প্রসূতির শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। প্রশ্ন ওঠে স্যালাইনের মান নিয়ে। এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে ওই ঘটনায়। আশঙ্কা জনক তিনজন প্রসূতিকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এখনও তাঁরা চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভর্তি রয়েছে। এই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী ১৩ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার ঘোষণা করেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছিল, যে কোম্পানির এই স্যালাইন তার বিরুদ্ধে অনেকদিন আগেই ব্যবস্থা নিয়েছিল কর্ণাটক প্রশাসন। তাহলে কেন রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর উৎপাদন বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও তা ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ দেয়নি। কেনই বা সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
চিকিৎসক আন্দোলনের নেতা সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, "এত জন প্রসূতি মা অসুস্থ হলেন, একজন শিশু মারা গেলো তারপর সরকারের টনক নড়লো। উৎপাদন বন্ধ করার নির্দেশের সঙ্গে ব্যবহার বন্ধ করারও নির্দেশ দিলে এই ঘটনা হতো না। কেন এত দিন সময় নিলো সরকার? ’’
ডাঃ গোস্বামীর ক্ষোভ, প্রশাসনিক গাফিলতির দায় স্বাস্থ্য দপ্তর নিল না। স্বাস্থ্য দপ্তরের নীতি নির্ধারক, সর্বোচ্চ অফিসাররা কেউ দায় নিলেন না। দায়ী করা হলো চিকিৎসকদের।
চিকিৎসক আন্দোলনের এই নেতা বলেছেন, ডাক্তাররা তো শুধু রোগী দেখেন আর ওষুধ লেখেন। কোন ওষুধ হাসপাতালে সরবরাহ করা হবে তা ঠিক করেন না ডাক্তার। কর্ণাটকের সরকার প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু আমাদের সরকার নিজেদের দোষ আড়াল করতে চিকিৎসকদের দায়ী করে দিল। এর মূল কারণ হলো চিকিৎসকরা অভয়া কাণ্ডের পর থেকে ক্রমাগত রাস্তায় থেকেছেন লড়াই করেছেন বিচারের জন্য। সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন তাঁরা। তাই প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুযোগ খোঁজা চলছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করে এফআইআর-ও দায়ের করা হয়। আর এখন ভবানীভবনে যাওয়ার সমন পাঠালো।
ডাঃ গোস্বামী বলেন, "আমরা নজরে রাখছি পুরো ঘটনা। সিআইডি তদন্তের নামে চিকিৎসকদের হেনস্তা করে চললে রাজ্যের চিকিৎসক সমাজ পথে নামবে। গত বুধবার জয়েন্ট প্লাটফর্ম অফ ডক্টর্স'র তরফে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি অবিলম্বে এই অন্যায় সাসপেনশন তুলতে হবে। তা না হলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো।
বুধবার জাল স্যালাইন কাণ্ডের প্রতিবাদে ছাত্র-যুব-মহিলারা মেদিনীপুর শহরে বিশাল মিছিল করে। তারপরই এসএফআই, ডিওয়াইএফআই ও মহিলা সমিতির ১৬ কর্মী ও নেতার নামে পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে। এই পদক্ষেপেরও তীব্র সমালোচনার করেছেন ডাঃ গোস্বামী। তিনি বলেন, যারাই প্রতিবাদে শামিল তাদের বিরুদ্ধেই প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।
Medinipur Medical Protest
স্যালাইনকাণ্ডের দায় এড়াতে হেনস্তা চিকিৎসকদের, জেরায় ক্ষোভ ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামীর
×
Comments :0