Economy is decline

অর্থনীতি নিম্নমুখী

সম্পাদকীয় বিভাগ

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের ভক্তরা অর্থনীতির টগবগে ঘোড়া ছোটানোর অনেক সোনালি স্বপ্ন দেখিয়েছেন, বিকশিত ভারতের অনেক রঙিন ছবিও এঁকেছেন, শুনিয়েছেন ৫ ট্রিলিয়ান ডলারের অর্থনীতি বা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির গল্পও। বাস্তবের আঙিনায় সেগুলি যে আসলে হাওয়ার ফানুস সেটা দিল্লির ভোটের আগে এবং কেন্দ্রীয় বাজেটের আগে ফাঁস হয়ে গেছে জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর প্রকাশিত চলতি অর্থবর্ষের প্রথম পূর্বাভাস থেকে। এতদিন দেশি-বিদেশি এবং সরকারি বেসরকারি অনেক সংস্থাই অর্থনীতির বৃদ্ধির নানা পূর্বাভাস দিয়েছে। সময় সময় সেগুলিকে অদল বদলও করেছে। তবে সেসব যে অতি উচ্চাশার প্রতিফলন ছিল সেটা স্পষ্ট হ‍‌য়ে গেছে সরকারি পূর্বাভাসে। মোদী বাহিনীকে পুরোপুরি হতাশ করে জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর জানিয়ে দিয়েছে ২০২৪-২৫ সালের জিডিপি বৃদ্ধির হার হবে ৬.৪ শতাংশ। গত বছর যে বৃদ্ধির হার ছিল ৮.২ শতাংশ এবার মোদীর তৃতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বকালের শুরুতে সেটা এক ধাক্কায় নেমে যাচ্ছে ৬.৪ শতাংশে। কোভিড সঙ্কটের পর ভারতের অর্থনীতিতে এতটা দুর্দশার ছাপ গত চার বছরে আর পড়েনি। বলা যায় কোভিডের ধাক্কায় অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় এসেছিল তার থেকে কোমর সোজা করে এখনও দাঁড়াতে পারেনি। অনর্গল নেহরু, কংগ্রেসকে গাল পাড়তে গিয়ে মোদী টেরই পাননি অর্থনীতির তলাটা কখন ফাঁপা হয়ে গেছে। বক্তৃতার ফুলঝুরি আর সাফল্যের বাগাড়ম্বরে যে অর্থনীতি চলে না সেটা সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর বোধের জগতে এখনো ঢোকেনি। 
মোদী প্রথম ক্ষমতায় আসার বছরে ২০১৪-১৫ সালে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৪ শতাংশ। তৎকালীন অর্থনৈতিক অবস্থার গতিজাড্যের জেরে পরের দু’বছর বৃদ্ধির হার একটু একটু বাড়ছিল। ২০১৫-১৬ সালে ৮ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ সালে ৮.৩ শতাংশ। তারপর থেকে অর্থনীতির যে ঝিমুনি শুরু হয়েছে তাকে আর জাগানো যায়নি। বিকাশমান অর্থনীতিতে প্রথম বড়সড় ধাক্কা আসে নোট বাতিলের দায়িত্বজ্ঞানহীন ঘোষণা। তারপর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়া ২০১৭ সালে জিএসটি চালু করে দেওয়া। এই ভ্রান্ত পদক্ষেপের ফলে মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্র ধ্বংসের কিনারায় চলে যায়। তাতে বেশিরভাগই আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। যে সব ক্ষেত্র শ্রমনিবিড়, সবচেয়ে বেশি কর্মসনস্থান হয় সেখানেই নেমে আসে আকাল। কর্মহারা ও বেকারি বাড়ে হু হু করে। তারপর থেকে বৃদ্ধি কমে ২০১৭-১৮ সালে ৬.৮ শতাংশ, ২০১৮-১৯ সালে ৬.৫ শতাংশ এবং ২০১৯-২০ সালে ৩.৯ শতাংশে নেমে যায়। তার মধ্যেই করোনা মোকাবিলায় অবৈজ্ঞানিক, যুক্তিবোধহীন এবং খামখেয়ালি পদক্ষেপ নিয়ে অর্থনীতিকে কার্যত শেষ করে দেবার ব্যবস্থা হয়। ফলে ২০২০-২১ সালে অর্থনীতি হ্রাস পায় ৫.৮ শতাংশ। ধসে যাওয়া অর্থনীতি পরের বছর (২০২১-২২) ৯.৭ শতাংশ বৃদ্ধি হলেও পরের দু’বছর কাটে দোলাচলে। আর চলতি বছরে সেটা নেমে যাচ্ছে ৬.৪ শতাংশে।
বৃদ্ধির হার কমে যাওয়াটাই শেষ কথা নয়। অশনি সংকেত দেখা যাচ্ছে সব ক্ষেত্রেই। অতি মাত্রায় বেকারি, নিম্নমজুরি, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, বাজারে পণ্য পরিষেবার চাহিদাহীনতা যেমন দুঃশ্চিন্তার। তেমনি উৎপাদন ক্ষেত্রে ভাটা, বেসরকারি বিনিয়োগে খরা আরও বড় বিপদের আশঙ্কা ডেকে আনছে। তাই গালভরা বক্তৃতা দিয়ে আর মানুষকে বোকা বানানো যাবে না।

Comments :0

Login to leave a comment