deucha Panchami

বিক্ষোভের মুখে খনন শুরুই করা গেল না পাঁচামীতে

রাজ্য জেলা

খননের কাজ শুরুর দিনেই পাঁচামীতে বিক্ষোভ এলাকাবাসীর|

রণদীপ মিত্র

খননযন্ত্রের মুখ ঘুরল পিছুপানে! আড়ম্বর সাজিয়েও পুরোহিতকে মাঝপথেই দিতে হলো রণে ভঙ্গ। কারণ বিক্ষোভের ঝাঁঝ আছড়ে পড়েছিল একের পর এক। ফলাফল, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেও কাজ শুরু করতে পারল না প্রশাসন। বরং পাঁচামীর বাধায় থমকাতে হলো জেলাশাসক, তৃণমূলের সাংসদ, পুলিশ সুপারদের! 
বৃহস্পতিবার তখন ভরদুপুর। পাথর ধূলোর ঝাপটা বেশ অস্বস্তি দিচ্ছিল চোখেমুখে। পাঁচামীর মথুরাপাহাড়ি, চান্দা থেকে কেন্দ্রপাড়ার লোকজন সেই ধূলোর ঝাপটা গায়ে নিয়েই বসে ছিলেন সকাল থেকে। অপেক্ষা করছিলেন প্রশাসনের লোকেদের এলাকায় পা দেওয়ার। ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা তাঁদের কানে পৌঁছেছিল। বুধবার কলকাতায় বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘বাংলার শিল্পোন্নয়নে ইতিবাচক অনুঘটকের ভূমিকা নেবে এই কোল ব্লক (দেউচা-পাঁচামী)। এখানে কয়লা ও ব্যসল্টের বিপুল ভাণ্ডার আছে। পরিকাঠামো পুরোপুরি তৈরি। কাল (বৃহস্পতিবার) থেকে কাজ শুরু হবে।’’ তবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মতো শিল্পোন্নয়নে অনুঘটকের ভূমিকা নেবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ না মিটলেও, এই কোল ব্লক যে পাঁচামীর মানুষের ক্ষোভ তুঙ্গে তুলতে অনুঘটকের ভূমিকা নিয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে আরও একবার। 
পাঁচামীর চাঁদা মৌজা থেকে খনন কাজ শুরুর পরিকল্পনা করেছিল জেলা প্রশাসন। সেই গ্রামের অসংখ্য মহিলা বেরিয়ে এসেছিলেন রাস্তায়। জোর গলায় মাধবী বিত্তাল, লক্ষ্ণী বিত্তালরা প্রশাসনের সামনে বলেছেন, ‘‘আমাদের জমি নেই। পাট্টা নেই। কাজ শুরু করতে চলে এলেন। আমাদের কী হবে। আমরা কোথায় কাজ পাব? আমরা কোথায় যাব?’’ সেই শুরু। তারপর থেকে ক্ষোভের পারদ চড়তে শুরু করে। তিন চারটে ডাম্পার, খনন যন্ত্র মথুরাপাহাড়ি পৌঁছতেই আদিবাসী মহিলা, পুরুষেরা পথ আটকায়। গাড়িগুলি ভাঙতে উদ্যত হয়। পুলিশের কর্তারা তাঁদের শান্ত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। বিক্ষোভ থেকে দাবি ওঠে, ‘গাড়ি হঠাও’। গাড়িগুলি পিছটান দেয়। 
এলাকায় পৌঁছায় জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ সামিরুল ইসলাম। ক্ষোভের আঁচ টের পান তাঁরাও। মহিলাদের ‘আশ্বাস’ জোগাতে তৎপর হন। কিন্তু অসন্তোষের ঝাঁঝ থেকে যায় একই মেজাজে। মানুষকে খানিকটা শান্ত করে কোনোমতে কাজ শুরু করতে মরিয়া প্রশাসন ফের অন্য এক বাধার মুখে পড়ে এরপর। গাড়িগুলি পিছু হঠলেও ‘মান’ রাখতে অন্তত ভিতপুজো সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। তাও হয়ে ওঠেনি। পুরোহিত সমস্ত আয়োজন সাজিয়ে বসলেও মহিলারা এসে সাফ জানিয়ে দেন, ‘‘কোনোরকম কোনও কিছু হবে না। আগে আমাদের দাবি, কথা সমস্যার সুরাহা হবে, তারপর অন্য কথা।’’ অগত্যা সেই কাজও থেকে যায় অসম্পূর্ণ। 
এত ক্ষোভ কেন মানুষের? চাঁদার উদয় হাঁসদা কটাক্ষের সুরের জানিয়েছেন, ‘‘প্রশাসন বলছে পুজো হবে। তারজন্য একবার বেল, ফুল, মালা নিয়ে যাচ্ছি। তখন বলছে, যাও এবার ধূপকাঠি, সিঁদুর নিয়ে এসো। শুধু পাক খাওয়াচ্ছে। যদি জমি নিতে হয় তাহলে নিয়ম মেনে জমি নিক, নিয়ম মেনে চাকরি দিক। খনির নামে চাকরি বিক্রি চলবে না। চাঁদা মৌজা যেখান থেকে কাজ শুরু হবে বলছে, সেখানকার অধিকাংশ মানুষেরই জমি নেই, থাকলেও পরিমাণ খুব অল্প। তাদের কী হবে তা নিশ্চিত না করেই কাজ শুরু কি করে মানব।’’ 
যদিও এত বিক্ষোভ, বাধার কথা মানতে চাননি জেলাশাসক বিধান রায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘চাঁদা মৌজায় যে ১২একর জমিতে প্রথম কাজ শুরু হবে তা সম্পূর্ণ সরকারি জমি। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে যারা আগে আসছেন, তারা আগে সুযোগ পাবে, এই নিয়মে কাজ চলছে। সকলেই প্যাকেজের সুবিধা পাবেন। কেউ বঞ্চিত হবেন না।’’ গাড়ি পিছু হঠা, ভিতপুজোয় ব্যাঘাতের প্রসঙ্গে জেলাশাসকের দাবি, ‘‘পুজো করে মেশিন আনা হয়েছে। ক্যাম্প তৈরি সহ আনুষঙ্গিক কাজ যা থাকে সবই হয়েছে।’’
তবে জেলাশাসকের দাবির সাথে বাস্তবের মিল পাওয়া যায়নি এদিন। সে কথা জানিয়ে গ্রামসভা সমন্বয় হুল কমিটির রাজ্য সভাপতি তথা চান্দার কেন্দ্রপাড়ার বাসিন্দা সুশীল মুর্মু বলেছেন, ‘‘কিছু মানুষ জমি দিয়েছেন বা দিতে চাইছেন ঠিকই। কিন্তু তার মানেই এই নয় যে সকলেই খনি চাইছেন। এলাকার মানুষ কখনই উচ্ছেদ হতে চান না নিজেদের বাপ-ঠাকুরদার জমি থেকে। পরিবেশের ক্ষতি করে কয়লা খনি মন থেকে কেউই মেনে নিতে পারছেন না। তারফলেই তো বারবার মানুষ জোট বেধে প্রতিরোধ করছেন।’’ 
 

Comments :0

Login to leave a comment