জানা অজানা
মোল্লা নাসিরুদ্দিন
তপন কুমার বৈরাগ্য
নতুনপাতা
মোল্লা নাসিরুদ্দিনের নাম শুনিনি এমন লোক পৃথিবীতে খুবই
কম আছেন। তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি সকলকেই বিস্মিত করে।
তিনি ছিলেন দার্শনিক এবং বিজ্ঞ ব্যক্তি। মধ্যযুগীয় মুসলিম
চরিত্রে তাঁর মতন হাস্যরসাত্মক চরিত্র একটাও খুঁজে পাওয়া যাবে
না।আমাদের বাঙলার গোপালভাঁড়ের সাথে তাঁর কিছুটা মিল
খুঁজে পাওয়া যায়। নাসিরুদ্দিন কথার অর্থ বিশ্বাসরক্ষাকারী।
তিনি তুরস্কের এস্কিহির প্রদেশের সিভারিহিসার শহরে ১২০৮ খ্রিস্টাব্দের
৫ই জুলাই থেকে ১০ই জুলাইয়ের মধ্যে যে কোনো তারিখে
জন্মগ্রহণ করেন। নাসিরুদ্দিনের সাথে মোল্লা বা হোজ্জা ব্যবহার
করা হয়।তাঁর সঠিক জন্ম তারিখ পাওয়া যায় নি ।তাঁকে
স্মরণ করে তুরস্কে ৫ই থেকে ১০ইজুলাই অবধি হোজ্জা উৎসব
পালন করা হয়।তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষ অথচ প্রচন্ড জ্ঞানী।
লেখাপড়া বেশি শিখতে পারেন নি।ব্যঙ্গাত্মক উপাখ্যানের তিনি
ছিলেন একজন নায়ক।সম্ভবত ১২৮৪খ্রিস্টাব্দে তিনি কোনিয়াতে
মারা যান।আজ থেকে ৮০০বছর অতিবাহিত হয়েছে।তাঁকে নিয়ে
যে সমস্ত লোককাহিনি আছে তা মানুষের মনে বিস্ময়ের উদ্রেক
করে।তাঁকে নিয়ে অনেক হাস্যকর ছোটগল্প এবং ব্যঙ্গাত্মক উপাখ্যান
আছে।তাঁরই একটা তুলে ধরছি।যার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে
তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি এবং জ্ঞান।
মোল্লা নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী বাপের বাড়ি গেছেন।যাবার আগে তাঁকে
সাবধান করে দিয়ে গেছেন চোরে যেন গয়নাগুলো চুরি করে
না নিয়ে যায়। একদিন রাত্রে তিনি ঘুমিয়েগেছেন।মাঝরাতে দরজা
ভাঙ্গার শব্দ শুনে তাঁর ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি দেখলেন দুজন চোর
দরজা ভেঙ্গে তাঁর ঘরে প্রবেশ করার চেষ্টা করছে।তিনি আর দেরী
না করে স্ত্রীর সোনার গয়নাগুলো নিয়ে একটা আলমারীর মধ্যে
ঢুকে আলমারীর দরজা বন্ধ করে দিলেন। কিছুক্ষণ পর চোর
দুজন দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে মোল্লা নাসিরুদ্দিনকে
খুঁজতে লাগল।খুঁজতে খুঁজতে আলমারীর মধ্যে তাঁর সাক্ষাৎ
পেলেন। চোরেদের মধ্যে একজন জিজ্ঞেস করল--মোল্লা সাহেব
এই আলমারীর মধ্যে লুকিয়ে কেন?
মোল্লাসাহেব সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন--লজ্জায়!
অপর চোর বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন--লজ্জায় কেন?
মোল্লা সাহেব একগাল হেসে জবাব দিলেন--তোমরা দরজা
ভেঙ্গে আমার ঘরে কত কষ্ট করে চুরি করতে ঢুকলে;আর আমি
তোমাদের কোনো উপকার করতে পারলাম না!
অপর চোর জিজ্ঞেস করল---তার মানে।
নাসিরুদ্দিন উত্তর দিলেন --মানে খুব সোজা।আমার ঘরে
একটা কানাকড়িও নেই।যা তোমাদের উপকারে লাগে।
তাই লজ্জায় আলমারীর মধ্যে লুকিয়ে আছি।
চোরেরা আর কি করে? অগত্যা চোরেরা নাসিরুদ্দিনের বাড়ি ছেড়ে
চলে গেল।
Comments :0