Hijab tripura

এবার হিজাব নিয়ে অশান্তি ত্রিপুরায়, হিন্দুত্ববাদীদের হামলায় জখম ছাত্র

জাতীয়

এবার ত্রিপুরায় হিজাব নিয়ে অশান্তি শুরু করলো আরএসএস-বিজেপি। শুক্রবার বিশালগড়ের করইমুড়া দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ  ইলিয়াস সরকারকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও এবিভিপি’র  বহিরাগত দুর্বৃত্তরা স্কুল গেটে আক্রমণ করে গুরুতর জখম করেছে। অন্যান্য ছাত্রদেরও মারধর করেছে হিন্দুত্বের বাহিনী। মহম্মদ ইলিয়াস সরকার হাপানিয়ায় টিএমসি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার সূত্রপাত এক সপ্তাহ আগে। কর্নাটকের কায়দায় বিশালগড়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কয়েকটি বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে দাবি করে যাতে মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব পড়ে স্কুলে না আসে। করইমুড়া স্কুলের কর্তৃপক্ষ মেয়েদের হিজাব পরে স্কুলে আসতে বারণ করে। বৃহস্পতিবার ওই  বিদ্যালয়ের এবিভিপি'র সদস্য একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির কয়েকজন গলায় গেরুয়া উত্তরীয় পরে ক্লাসে ক্লাসে এই মর্মে প্রচার চালায়।
শুক্রবার করইমুড়া স্কুলের সামনে বহিরাগত বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, আরএসএস এবং এবিভিপি'র দুর্বৃত্তরা স্কুলের ছাত্রদের হিজাব পরা মেয়েদের বাধা দিতে বললে তারা আপত্তি জানায়। বহিরাগত দুর্বৃত্তরা স্কুলের ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। তাতে দশম শ্রেণির ছাত্র মহম্মদ ইলিয়াস সরকার গুরুতর আহত হয়। এই খবর পেয়ে এলাকার অভিভাবকরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে স্কুলের সামনে এসে দেখে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্কুলের গেট বন্ধ করে রেখেছে। আক্রমণের প্রতিবাদে তৎক্ষণাৎ ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকরা পথ অবরোধ করে। দমকল কর্মীরা গিয়ে ইলিয়াসকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশ প্রশাসনের লোকেরাও সেখানে পৌঁছায়।
অভিযোগ, স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রীয়তোষ নন্দীর সামনে এই ঘটনা ঘটে। তিনি বহিরাগত দুষ্কৃতীদের কিছুই বলেননি, এমনকি ওই ছাত্রকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেননি। চুপচাপ তিনি স্কুলে চলে যান। উত্তেজিত জনতা স্কুলের সামনে বিশালগড় বক্সনগর রাস্তা অবরোধ করে। ছাত্রের অভিবাবকরা এসে প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞেস করে কেন তাকে মারল বহিরাগত দুষ্কৃতীরা। কেন তিনি এগিয়ে গেলেন না ছাত্রকে রক্ষা করতে। প্রধান শিক্ষক কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। ক্ষোভে কয়েকজন যুবক প্রধান শিক্ষকের ঘরে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে ছুটে আসে পুলিশ। অবরোধ মুক্ত করে। কিন্তু এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। প্রশাসন কঠোর হাতে মোকাবিলা না করলে যে কোনও সময়ে বড় ধরনের ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
এক সপ্তাহ ধরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং এবিভিপি এলাকার বিদ্যালয়গুলিতে গিয়ে হিজাব না পড়ার নোটিস জারি করেছে। বিষয়টি প্রশাসনের কাছে অজানা থাকার কথা নয়। মিশ্র বসতি এলাকায় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রচার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে জানা ছিল। কিন্তু সতর্কতামূলক কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে আজকের এই আক্রমণ সংগঠিত হয়েছে। এই নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে এলাকায়। 
সিপিআই (এম) এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে। রাজ্য সরকারের কাছে স্পর্শকাতর এই বিষয়টিতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে। এদিন রাতে এক বিবৃতিতে সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী বলেছে, গত কিছুদিন ধরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং এবিভিপি এলাকার বিদ্যালয়গুলিতে গিয়ে হিজাব না পরার নোটিস জারি করেছে। এটা মিশ্র জনবসতি এলাকায় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রচার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা। পুলিশ ও প্রশাসনের নিকট বিষয়টি অজানা থাকার কথা নয়। স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে দ্রুত সতর্কতামূলক কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করার ফলে আজকের এই আক্রমণ সংগঠিত হয়েছে। বিজেপি এবং আরএসএস’র মদতপুষ্ট বিভিন্ন সংগঠন দেশের অন্যান্য অংশের মতো ত্রিপুরাতেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা শুরু করেছে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এই আক্রমণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং মহম্মদ ইলিয়াস সরকারের উপর আক্রমণকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছে। রাজ্য সরকারের কাছে স্পর্শকাতর এই বিষয়টিতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment