তৃণমূলের সীমাহীন লুণ্ঠনের কারণে এই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। হুমকি সংস্কৃতির মুখে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে সমস্ত ভিন্নমতের কণ্ঠকে নীরব করা হয়েছে। সেই পরিবেশে দুর্নীতি সুষ্ঠু ও নিরাপদে চলছে। অতি উচ্চ মূল্যে অতি নিম্নমানের ওষুধসহ অত্যাবশ্যকীয় হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয় করে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে। মেয়াদোত্তীর্ণ ও নকল ওষুধগুলো পাইকারি দরে হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে। আর সবই প্রয়োগ করা হচ্ছে অসহায় দরিদ্র মানুষের লাশে, যাদের একমাত্র ভরসা দারিদ্র্যের কারণে সরকারি হাসপাতাল। এই সরকারের কাছে গরীব অসহায় মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই, গরীব মানুষের জীবন নিয়ে খেলার শেষ উপায় হল দিনিপুর মেডিকেলা কেলে। নকল ও বিষাক্ত স্যালাইন দিয়ে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্যা করা হয়েছে। কোমায় মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন আরও তিনজন। @যে কোম্পানি এই ধরনের স্যালাইন সরবরাহ করে তারা এই ধরনের ভয়াবহ ঘটনার জন্য দায়ী; সে স্যালাইন সরকারি অনুমোদন নিয়ে রাজ্যের প্রায় সব হাসপাতালেই সরবরাহ করা হয়। ওই কোম্পানির মালিকের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ঘনিষ্ঠতা গোপন নয়। তাই সেই মালিককে রক্ষা বা আড়াল করার দায়িত্ব সরকারের। একইভাবে, জনগণ যাতে সরকারবিরোধী ক্ষোভে ফুঁসতে না পারে সেজন্য সরকারী হাসপাতালের অনাচার ও দুর্নীতিকে সম্ভাব্য সব উপায়ে প্রকাশ করা সরকারের দায়িত্ব। সে কারণেই স্বাস্থ্য ভবন ও পুলিশের নামে একইভাবে তরুণ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। মৃত এবং মৃত গর্ভবতী মহিলা এবং তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ যতটা সম্ভব প্রতিরোধ করা হয়েছে। কী চিকিৎসা করা হয়েছে, কেন অবস্থা এমন, অবস্থা কেমন ইত্যাদি বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাচ্ছেন না পরিবারের সদস্যরা। তাদের কিছুই জানানো হচ্ছে না। চিকিৎসার অগ্রগতি নিয়ে তারা অন্ধকারে রয়েছেন। রোগীকে আইসিসিইউতে নিয়ে গিয়ে বায়ুচলাচল করার আগে পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়নি। শেষ পর্যন্ত তাদের কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হবে তা জানানো হয়নি। অনেক সত্যকে আড়াল করার জন্য স্বাস্থ্যভবনের এমন একটি সচেতন গোপন পরিকল্পনা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে বসে থাকতে হয় মৃত চিকিৎসকের বাবা-মাকে। তাদের মেয়েটির লাশের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। কবে, কোথায়, কী কারণে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানানো হয়নি। সব শেষে বাবা-মাকে থানায় আটকে রেখে তাদের লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। @এরপর যা ঘটল তারই ছায়া দেখাচ্ছে মেদিনীপুরের ঘটনা। স্থূল দুর্নীতি আড়াল করার মরিয়া প্রচেষ্টা। নীরব স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেন সে কিছুই জানে না এবং কিছুই বোঝে না। আসলে এসব কারখানা তার পৃষ্ঠপোষকতায় নিরাপদে চলে। পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই দুর্নীতির খনি হয়ে উঠেছে। যে স্বাস্থ্যব্যবস্থা দরিদ্র জনগণের একমাত্র আস্থা ও আস্থার জায়গা হওয়ার কথা ছিল, তা দরিদ্র মানুষের কল্যাণের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। হাসপাতালগুলো হয়ে উঠছে সন্ত্রাসের নতুন ঠিকানা।
Hospital or death trap
হাসপাতাল না মরণফাঁদ
×
Comments :0