Library Seminar

রাস্তায় নেমেই গ্রন্থাগার রক্ষার দাবিতে আন্দোলন

রাজ্য

Library Seminar


রাস্তায় নেমেই এবার গ্রন্থাগার বাঁচানোর লড়াই হবে। যে লড়াইতে শামিল হবে গ্রন্থাগার কর্মী, চাকরীপ্রার্থী, গ্রন্থাগারের পাঠক, গ্রন্থ ও গ্রন্থাগার প্রেমী মানুষ। শনিবার হাওড়া জেলা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সেমিনার হল উপচে পড়া সভা থেকে এই শপথ উচ্চারিত হল।

গ্রন্থাগার আন্দোলনের প্রবাদ প্রতীম ব্যক্তিত্ব প্রয়াত অধ্যাপক প্রবীর রায়চৌধুরীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সাধারণের গ্রন্থাগার কর্মী সমিতির রাজ্য কমিটি আয়োজিত দশম প্রবীর রায়চৌধুরী স্মারক বক্তৃতার বিষয় ছিল সাধারণ গ্রন্থাগার : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। বক্তব্য রাখেন গ্রন্থাগার আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক কৃষ্ণপদ মজুমদার, রাজ্যের গ্রন্থাগার পরিষেবা দপ্তরের প্রাক্তন উপ অধিকর্তা স্বপ্না রায়, বঙ্গীয় গ্রন্থাগার পরিষদের কর্মসচিব ড. জয়দীপ চন্দ, রামকৃষ্ণ মিশন বালকাশ্রম (রহড়া) জেলা গ্রন্থাগারের গ্রন্থাগারিক শমীক বর্মন রায়, আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তাপস সরকার প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন অমিত পাল।

শাসকের চোখে চোখ রেখেই হাওড়া শহরের প্রাণ কেন্দ্র হাওড়া জেলা গ্রন্থাগারের সেমিনার হলে ভিড় উপচানো সভা থেকে সাধারণ গ্রন্থাগারের পাঠক, গ্রন্থাগার কর্মী ও গ্রন্থপ্রেমী মানুষ বুঝিয়ে দিলেন গ্রন্থাগার বাঁচানোর লড়াই আর হল ঘরে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এবার রাস্তায় নেমেই গ্রন্থাগার রক্ষার দাবিতে আন্দোলন হবে।

গত ১২ বছর ধরে তৃণমূল সরকারের আমলে সাধারণ গ্রন্থাগার থেকে শুরু করে সব ধরনের গ্রন্থাগারেই শূন্যপদে নিয়োগ বন্ধ। সমস্ত ধরনের গ্রন্থাগারে নিয়োগ করে গ্রন্থাগার ব্যবস্থাকে রক্ষার দাবিতে সরব হলেন বিশিষ্টরা। এদিন পশ্চিমবঙ্গ সাধারণের গ্রন্থাগার কর্মী সমিতির রাজ্য কমিটির উদ্যোগে হাওড়া জেলা কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সেমিনার হলে "সাধারণ গ্রন্থাগার : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ " বিষয়ক আলোচনায় উঠে এল রাজ্যের গ্রন্থাগার ব্যবস্থার বেহাল দশার তথ্য।

অধ্যাপক প্রবীর রায়চৌধুরীর জীবন আদর্শের নানান দিক আলোকপাত করে আলোচকরা তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন কিভাবে গ্রন্থাগারগুলিতে ২০১১ সালের পর থেকে নিয়োগ বন্ধ রেখে অচল করে দেওয়া হয়েছে। কর্মী নিয়োগ না হওয়ায় বন্ধ হয়েছে সহস্রাধিক সাধারণ গ্রন্থাগার। পাঠাভ্যাসের সুযোগ থেকে বঞ্চিত পাঠকরা। নষ্ট হয়ে গেছে সাহিত্যের বই থেকে দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থের বহু সম্ভার। থমকে গেছে গ্রন্থাগার আধুনিকীকরণের কাজ। ডিজিটালাইজড তো দূর! ১৩ লক্ষ কম্পিউটার ডাটাবেস নষ্ট হয়ে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রাজ্য কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, জেলা গ্রন্থাগার, শহর গ্রন্থাগারের কম্পিউটার হার্ডওয়ারও নষ্ট হয়ে গেছে। কুড়ি কোটি গ্রন্থের দুই কোটি নষ্ট হয়ে গেছে। ২৪৮০ টি সরকারি, সরকার পোষিত ও সরকার সাহায্যপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারের অনুমোদিত ৫৫২০ টি পদের মধ্যে রয়েছেন মাত্র নয়শত জন। যেভাবে শূন্যপদ প্রতিদিন কর্মীদের অবসরের জন্য তৈরি হচ্ছে তাতে প্রায় ৮৫ শতাংশ শূন্যপদ। বাস্তবে ১৩০০ গ্রন্থাগার বন্ধ। একেকজন কর্মীর ওপর তিন/চারটি গ্রন্থাগারের দায়িত্ব চাপিয়ে চালু গ্রন্থাগারগুলিকেও অচল করে দেওয়া হচ্ছে। পাঠকরা গ্রন্থাগারে পড়তে চাইলেও সাধারণ গ্রন্থাগারের দরজা বন্ধ পাঠকদের জন্য। হাওড়াতেই জেলা গ্রন্থাগারে স্থায়ী কর্মী কেবল নাইট গার্ড। তাই অতীত গর্বের চৌত্রিশ বছরের অর্জিত সাধারণ গ্রন্থাগার ব্যবস্থাকে ফেরানোর দাবিতে সমস্ত গ্রন্থাগারেই শূন্যপদে নিয়োগের দাবি বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন আলোচকরা।  

বক্তারা বলেন, আগামী ২৪ শে জুন শিয়ালদহ থেকে ফেডারেশন হল পর্যন্ত সমস্ত গ্রন্থাগার আন্দোলনের সংগঠন, চাকরীপ্রার্থীরা সব ধরনের গ্রন্থাগারে শূন্যপদে নিয়োগের দাবিতে, গ্রন্থাগার রক্ষার দাবিতে মিছিলের ডাক দিয়েছে। এই মিছিলের সমাপ্তিতে কনভেনশন হবে ফেডারেশন হলে। সব গ্রন্থাগারের দরজা খোলার দাবিতে আন্দোলনে সব অংশের মানুষকে শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

Comments :0

Login to leave a comment