মৃতের সারিতে জীবিত যুবককে ফেলে দেওয়া হয়ে ছিল মৃত ভেবে। সেই মৃত যুবক উদ্ধারকারীর পা ধরে কাতর আবেদন করে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছড়নেখালি গ্রামের বাসিন্দা রবিন নাইয়া(৩৫)। বালেশ্বরের ট্রেন দুর্ঘটনায় থাকা একজন যাত্রী। ওই দিন পেটের টানে সাতজনের সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে করে যাচ্ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওড়িশার বালেশ্বরে কাছে বাহানাগায় ভয়ানক দু্র্ঘটনার জেরে রেলের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী ২৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন হাজারের বেশি। নিখোঁজের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সেদিন দুর্ঘটনার পর পর স্থানীয় মানুষ উদ্ধার কাজে নামেন।
উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজে হাত লাগান। আহত উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। নিহতদের দেহ একাটি স্কুলে রাখার ব্যাবস্থা করা হয়। সেখানেই একটার পর একটা মৃতদেহের পাহাড় জমতে থাকে। মৃত ভেবে মৃতের সারিতে ফেলে রাখা হয় রক্তাক্ত সংজ্ঞাহীন রবিন নাইয়াকে। দুর্ঘটনায় তাঁর দুটি পা ভেঙে গেছে। কোমড়ের নিচ থেকে পা একেবারে অকেজো। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাটুকু নেই তাঁর। জ্ঞান ফিরলে রবিন বুঝতে পারে মৃতদেহের স্তুপের মধ্যে রয়েছেন তিনি। তাঁকে মৃত ভেবেই সেখানে রেখে দেওয়া হয়েছে। তাঁর পাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হঠাৎ তাঁর দুই হাত বাড়িয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক উদ্ধারকারীর পা জড়িয়ে ধরে রবিন বলতে থাকেন্য ‘‘ আমি মারা যায়নি। আমাকে বাঁচান জল দিন’’। সেইঁ সময় আঁতকে উঠেছিলেন উদ্ধারকারী। কয়েক মুহুর্ত থমকে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য অতগুলি মৃতদেহের মধ্যে কেউ জীবিত রয়েছেন তা বিশ্বাস করে উঠতে পারেননি প্রথমে। তরপর আরো উদ্ধারকারীদের ডেকে এনে রবিনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়। সেই রবিন নাইয়া এখন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এখনো জীবিত তবে তাঁর দুটি পা ভেঙে গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে গেছে। অন্ধ্রপ্রদেশে বীজ রোপণের কাজ করেন রবিন ও তাঁর সাতজন সঙ্গী। ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ট্রেন দুর্ঘটনায়। একজন এখনও নিখোঁজ।
কান পাতলে এখনও বালেশ্বরে শোনা যাচ্ছে স্বজন হারাদের কান্না। প্রিয়জনকে খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই। অনেক দেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি। মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওডিশার মুখ্যসচিব প্রদীপ কুমার জেনা বলেন, গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ২৭৫ জন। আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে আজ সকালে। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী রেল দুর্ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৮ জন।
Comments :0