ADANI LIC BANKS

আদানিকাণ্ডের ব্যাখ্যা দিতে হবে সরকারকে, দাবি চক্রবর্তীর

জাতীয়

ADANI LIC BANKS

আদানি গোষ্ঠীকে ঋণ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, বিমা। প্রধানমন্ত্রী অপরিসীম স্নেহধন্য গৌতম আদানি। এখন সংস্থার কেলেঙ্কারিতে বিপদে পড়তে পারেন মানুষ। ঘটনা কি, কেন ব্যাখ্যা দিতে হবে কেন্দ্রকে। 

শনিবার এই দাবি করেছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও এই প্রক্রিয়ার অংশীদার। 

চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘সাগরের গভীর সমুদ্র বন্দরের পরিকল্পনা বাতিল করে তাজপুরে আদানির বন্দর তৈরিতে অংশীদার রাজ্য। ডেউচা পাচামিতে গরিব আদিবাসী মানুষকে বিপন্ন করে আদানির হাতে দেওয়া হচ্ছে জমি।’’ 

দাম ভাঁড়ানো আদানির শেয়ারের দাম হু-হু করে পড়ছে। এর মধ্যেই কমে গিয়েছে ৪ লক্ষ কোটি টাকার বেশি মূল্যের আর্থিক সম্পদ। আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা এলআইসি’র। অন্তত ৩৩টি প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক সংস্থার বিনিয়োগ রয়েছে। রয়েছে দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিনিয়োগও।  

চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘আদানির ব্যবসার জন্য সম্পদ বাড়েনি। দেশের সরকারের অবিরাম মদত পেয়েছে, বিভিন্ন সংস্থাকে বাধ্য হতে হয়েছে টাকা ঢালতে। পুরো ঘটনায় ২০০৮’র সময়ে বিশ্ব মহামন্দার পরিস্থিতির ছায়া রয়েছে।’’ 

২০০৮’র আর্থিক বিপর্যয়ে লেম্যান ব্রাদার্সের মতো বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির শেয়ারের দর কমে গিয়েছিল। দ্রুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে সঙ্কট থাবা বসিয়েছিল সারা বিশ্বে। সেই সঙ্কট থেকে এখনও বের হতে পারেনি বিশ্ব অর্থনীতি। ঝুঁকিতে ভরা আর্থিক সম্পদ লেনদেন করেছিল বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। 

চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘আদানিকাণ্ডে বিপদের মুখে পড়বে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং বিমা। পুরো পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দেশের সরকারকে দিতে হবে। সম্ভাব্য বিপদ ঠেকাতে কী করবে সরকার, তা-ও দেশের মানুষকে জানাতে হবে।’’

‘শর্ট সেলার’ সংস্থা হিন্দডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে আদানির গরমিলের অভিযোগ তোলা হয়। সেই অভিযোগ আদানি অস্বীকার করলেও সন্দেহ বাড়তে থাকতে গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের ভবিষ্যৎ নিয়ে। প্রত্যাশিত দাম কমতে থাকায় নেমে যেতে থাকে শেয়ারের দাম। 

শেয়ার মার্কেটের তথ্য জানাচ্ছে, আদানি গোষ্ঠীর অতি সাম্প্রতিক শেয়ার বিক্রিতে ‘অ্যাঙ্কর ইনভেস্টর’ হয়েছিল এলআইসি। প্রায় ৩০০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থা। এর বাইরেও এলআইসি’র বিনিয়োগ রয়েছে আদানিতে।  শেয়ার বাজারে গোষ্ঠীর পাঁচটি সংস্থার  নথি দেখে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এলআইসি’র অন্তত ৭২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে এই সংস্থায়।

এই বিমা সংস্থাকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়ার পিছনে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। আদানি, আম্বানি গোষ্ঠীর ঋণ ঠিক কত, সেই তথ্য দিতে অস্বীকার করেছে সরকার। তাঁর সময়েই আম্বানি, আদানির মতো কয়েকটি গোষ্ঠীর কাছে পরপর বিক্রি করা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সম্পদ। বন্দর থেকে বিমানবন্দর, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা চলে গিয়েছে ধান্দার ধনতন্ত্রের চিহ্নসূচক কয়েকটি সংস্থার হাতে। 

বামপন্থীরা বলছেন, কর্পোরেট-হিন্দুত্ব জোট দাঁড়িয়ে রয়েছে এই লেনদেনের ওপর। কর্পোরেট বন্ডেও বিপুল অঙ্কের টাকা ঢুকছে বিজেপি’র ভাঁড়ারে। টাকার অঙ্কের বিচারে নির্বাচনী বন্ডে কর্পোরেট অনুদানে বিজেপি’র পরেই রয়েছে এক রাজ্যে সরকার চালানো তৃণমূল কংগ্রেস। 

হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট জানাচ্ছে, আদানির শেয়ারের দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে ৮৫ শতাংশ। বিপুল ঋণ রয়েছে সংস্থার। সেই ঋণ পরিশোধ হবে কিভাবে অস্পষ্ট। বিদেশে আর্থিক লেনদেন রয়েছে। সংস্থার সম্পদে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ। 

শেয়ার বেচে তা আবার কিনে নেয় ‘শর্ট সেলার’ আর্থিক প্রতিষ্ঠান। দাম কমার অপেক্ষা করে তারা। সেই সূত্রেই আদানি নিয়ে নাড়াচাড়া বলে দাবি হিন্ডেনবার্গের।      

Comments :0

Login to leave a comment