jadavpur university student death

স্বপ্নদীপের যাদবপুরে পড়ার স্বপ্ন শেষ

রাজ্য

jadavpur university student death

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে স্বপ্নদীপের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জেরে পরিবারের তরফে বৃহস্পতিবার 'র‌্যাগিং’-এর অভিযোগ করা হলো। সংবাদ মাধ্যমকে তাঁর মামা অরূপ কুণ্ডু জানিয়েছেন, ‘র‌্যাগিং’-এর অভিযোগ জানিয়েই তাঁরা যাদবপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন। তিনি বলেছেন, স্বপ্নদীপ বুধবার রাতেও তাঁর মা-বাবাকে মোবাইলে জানিয়েছিল, সে খুব চাপে আছে। তাঁরা যেন এসে তাঁকে বাঁচান। কিন্তু বুধবারের রাতটা আর কাটল না।
বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডু গত রবিবার নদীয়ার বগুলার বাড়ি থেকে হস্টেলে ফিরেছিল। কিন্তু সোমবার থেকেই সে ভয়ে ভয়ে ছিল। তারপর বুধবার সন্ধ্যায় মা-বাবাকে করা তার ফোনের কথা জেনে তদন্তের দিক বদলাচ্ছে যাদবপুর থানার পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় চৌহদ্দির মধ্যে ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে।


বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য স্বপ্নদীপের পরিবারকে জানিয়েছে, ‘আত্মহত্যা করেছে’ সে। ময়নাতদন্তের আগেই কর্তৃপক্ষের এই ধরনের বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পরিবার। তবে এদিন সন্ধ্যায় স্বপ্নদীপের মৃত্যুর প্রাথমিক ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এসেছে। সেখানে উঁচু জায়গা থেকে পড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ছাত্রাবাসের ’এ-২’ বিল্ডিংয়ের তিনতলা থেকে নিচে পড়ে যাওয়ার জন্য তাঁর মাথার বাঁ দিকের হাড়ে চিড় ধরেছিল। পড়ে গিয়ে মৃত্যু হলেও তাঁকে কেউ ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল কি না, তা এখন প্রমাণসাধ্য বিষয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা পুলিশের দেওয়া ‘আত্মহত্যার তত্ত্ব’কে তাই মানতে নারাজ পরিবার। স্বপ্নদীপের মামা এদিন পরিষ্কার জানিয়েছেন, ‘‘বুধবার রাতেও তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে স্বপ্নদীপের।’’ সে তার মাকে বলেছিল, ‘‘আমি ভাল নেই। আমার খুব ভয় করছে। তুমি তাড়াতাড়ি এসো, তোমার সঙ্গে অনেক কথা রয়েছে।’’ কিন্তু সেই কথা অজানাই থেকে গেল। 
ছেলের ফোনে ব্যাকুল মা পরে বহুবার ফোন করলেও মোবাইলে রিং বাজলেও ফোন ধরেনি স্বপ্নদ্বীপ। তাহলে স্বপ্নদীপকে কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই খুন করা হয়েছে? প্রশ্ন উঠেছে। মাথার হাড়ে চিড় ধরার পাশাপাশি স্বপ্নদীপের গায়ে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে বলে সূত্রের খবর। হস্টেলের পড়ুয়ারা পুলিশের কাছে দাবি করেছে, পৌনে বারোটা নাগাদ ভারী কিছু পড়ার শব্দ পায় তারা। ছুটে গিয়ে দেখে, নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে স্বপ্নদীপ। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার পৌনে ছয়টা নাগাদ মৃত্যু হয় ওই মেধাবী পড়ুয়ার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা বহু পড়ুয়া অবশ্য স্বপ্নদীপের মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্ন উঠছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও।

সবার অভিযোগের তির বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের দিকে। দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা হস্টেলে পাকাপাকিভাবে থেকেই চলেছেন। আর সেই সঙ্গে চলেছে নতুনদের উপর খবরদারি। স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর যাদবপুরে জুওলজির প্রথম বর্ষের এক ছাত্র অর্পণ মাঝি নিজের ফেসবুকে সেই কথাই তুলে ধরেছে। তার বিস্ফোরক দাবি, ‘‘প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর পরের দু-তিন রাতেই হস্টেল আমার মধ্যে বিভীষিকার জন্ম দিয়েছে।’’ হস্টেলে থেকে যাওয়া প্রাক্তনীরা কী ধরনের অত্যাচার চালায়, তার ব্যাখাও দিয়েছে ওই পড়ুয়া। 
পুলিশ আধিকারিকরা বৃহস্পতিবার যাদবপুরের হস্টেলে গিয়ে সেখানে থাকা পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বুধবার সন্ধ্যা থেকে স্বপ্নদীপের আচরণ ‘অস্বাভাবিক’ ছিল বলে বহু ছাত্র পুলিশের সামনে দাবি করেছে। কোনও নির্দিষ্ট কারণে সে খুব ভয় পাচ্ছিল। বারবার না কি বলছিল, ‘আই অ্যাম নট গে’ (আমি সমকামী নই)। কেউ কি তাঁকে সমকামী বলেছিলেন? এখানে প্রশ্ন উঠেছে। রাতে বারবার স্বপ্নদীপ শৌচাগারে যাচ্ছিলেন বলেও জানতে পেরেছে পুলিশ। সেই কারণে তাঁর পরনে ছিল গামছা।

মেন হস্টেলের ‘এ-২’ ব্লকের ৬৮ নম্বর ঘরে অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রের অতিথি হিসাবে থাকছিল স্বপ্নদীপ। ওই ঘরে থাকত চার ছাত্র। স্বপ্নদীপের অস্বাভাবিক আচরণের কথা জানাতে হস্টেলের দায়িত্বে থাকা ডিন অব স্টুডেন্টস-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল অন্য ছাত্ররা। প্রথমবার যোগাযোগ করা গিয়েছিল। কিন্তু রাত ১১টার পরে আর ডিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল। স্বপ্নদীপকে নিয়ে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত অনেক ছাত্র ব্যস্ত ছিল। 
এমনকী জানা যাচ্ছে, স্বপ্নদীপ তিনতলার বারান্দা থেকে পড়ে যাওয়ার সময়ে তাকে শেষ মুহূর্তে বাঁচানোর চেষ্টা করে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক কাশ্মীরি পড়ুয়া। চারতলায় থাকত সে। পুলিশকে সে জানিয়েছে, গভীর রাতে নিচে লাগাতার কথাবার্তা শুনে নেমে গিয়ে সে স্বপ্নদীপকে পড়ে যেতে দেখে। হাত বাড়িয়ে ধরারও চেষ্টা করে। কিন্তু হাত ফস্কে নিচে পড়ে যায় স্বপ্নদীপ। এখানেই আরও প্রশ্ন লুকিয়ে আছে। তাহলে পৌনে বারোটা নাগাদ তিনতলার বারান্দায় কাদের সঙ্গে কথা বলছিল স্বপ্নদীপ? কারও ভয়েই কি সে লাফিয়ে পড়েছে, না কি জোর করে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল? টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল সে? তদন্তকারীরা সহপাঠীদের লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে। 
এই ঘটনায় তিন জনকে আটক করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ। এরা হলো আসিফ আনসারি, মহম্মদ আরিফ এবং অভিরূপ ঝা (ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিনিয়র বোর্ডার)।

 

Comments :0

Login to leave a comment