বক্সিরহাটের ৫ শ্রমিককে গুজরাটে জোর করে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। ওই শ্রমিকদের পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা বক্সিরহাটের শালবাড়ি ২গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বজরাপুরের বাসিন্দা। তাঁরা হলেন আনন্দ আর্য, উদয় আর্য, আশানন্দ সাহা, সুভাষ সাহা ও সুবল সাহা। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, যে ঠিকাদার তাদের বাড়ির লোকদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে গুজরাটে নিয়ে গিয়েছিল সেই ঠিকাদারই মারধর করে আটকে রেখেছে ওই ৫ জনকে। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওই ৫ জনকে নিয়ে যাবার আগে বোঝানো হয়েছিল শ্যাম্পু তৈরির কারখানায় কাজ দেওয়া হবে। গুজরাটে গিয়ে তাঁরা বুঝতে পারেন ঠিকাদার তাদের ঠকিয়েছে। তাঁদের যেখানে কাজে লাগানো হয়েছে সেটি আসলে কীটনাশক তৈরির কারখানা। কারখানায় অস্বাস্থ্যকর, দমবন্ধ করা পরিস্থিতিতে তাঁরা কাজ করতে অস্বীকার করেন। পরে রাজি হয়। মূলত উপার্জনের জন্য। কিন্তু যত করে টাকা তাঁদের দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ঠিকাদার, তার থেকে কম টাকা দেওয়া হয়। তাই ৫ জনই পালিয়ে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু ঠিকাদার ও তার সাকরেদরা তাঁদের ধরে ফেলে। মারধর করে কারখানায় আটকে রেখেছে।
৫ জনের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে ঠিকাদার অজয় বাড়িয়া ওই এলাকারই বাসিন্দা। বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক সরবরাহ করে সে। এবারের পুজোর আগে ৫ যুবককে অনেক টাকা আয়ের প্রলোভন দেখায় ঠিকাদার। সংসারের মুখে হাসি ফোটাতে ঠিকাদারের ফাঁদে পা দিয়ে গত অক্টোবর মাসে গুজরাটে গিয়ে কাজে যোগ দেয়। কীটনাশক কারখানায় দিনে ১৮ঘণ্টা পরিশ্রম করিয়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি দিলে ওই ৫ জন কাজ করতে অস্বীকার করে। এরপরেই ঠিকাদার রুদ্রমূর্তি ধারণ করে। পালিয়ে আসতে গেলে মোবাইল কেড়ে নিয়ে মারধর করে আটকে রাখা হয়।
আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিক আশানন্দ সাহা অন্য এক সহৃদয় শ্রমিকের মোবাইল থেকে স্ত্রীকে ফোন করে সব ঘটনা জানিয়ে তাঁদের উদ্ধার করার ব্যবস্থা করতে বলে। আশানন্দ সাহার স্ত্রী সীতা সাহা রবিবার জানিয়েছেন,‘‘আমাদের প্রশাসনের কাছে একটাই আরজি স্বামীকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে এনে দিন।’’ এদিন সীতা সাহা সাংবাদিকদের জানান, আমাদের এখানে কোনও কাজ নেই। সংসারের কথা ভেবে স্বামী গুজরাটে গেছিল। এখন পুলিশের ভরসায় বসে আছি। ওরাই যদি স্বামীকে ফিরিয়ে এনে দেয়।
আটকে থাকা আর এক পরিযায়ী শ্রমিক উদয় আর্যর স্ত্রী দীপালি আর্য স্বামীর বিপদে অসহায় হয়ে বিজেপির স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান ও তৃণমূলের নেতাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে কাতর আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি। অবশেষে বক্সিরহাট থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। বক্সিরহাট থানা সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
সিপিআই(এম) জেলা কমিটির সদস্য ধনঞ্জয় রাভা বলেন,‘‘আমাদের দলের এক প্রতিনিধি দল ওই ৫ জনের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাশে থাকবার আশ্বাস দিয়েছে।’’ তিনি জানান, ‘‘পরিবারগুলির পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে বলে ঠিকাদার গুজরাট থেকে হুমকি দিয়েছে।’’
Labourers beaten at Gujarat
৫ শ্রমিককে আটকে মারধর গুজরাটে
×
Comments :0