Refuge Basti

মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপে আশঙ্কায় বস্তি-উদ্বাস্তু আন্দোলনের নেতৃত্ব

রাজ্য

নাকের বদলে নরুন দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি! রাজ্যের ১৮০০-র বেশি উদ্বাস্তু কলোনির স্বীকৃতিদানে গত বারো বছরে রাজ্য সরকার এক পাও অগ্রসর না হয়ে বস্তি ও উদ্বাস্তু কলোনির নাম পরিবর্তনের তৎপরতাকে এমনটাই মনে করছেন বস্তি ও উদ্বাস্তু আন্দোলনের কর্মীরা। বস্তি ও উদ্বাস্তু কলোনিগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে তাঁদের মধ্যে।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জমিতে উদ্বাস্তু কলোনিগুলির স্বীকৃতির দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে লড়ছেন উদ্বাস্তু আন্দোলনের কর্মীরা। বামফ্রন্ট সরকার এই বিষয়ে উদ্যোগ নিলেও তৃণমূল সরকারে আসার পরে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দপ্তরটিকেই তুলে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। অথচ রাজ্যের বস্তি ও উদ্বাস্ত কলোনির নাম পরিবর্তনের ঘোষণা করেছেন মমতা ব্যানার্জি। ক্ষোভ এবং আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বস্তি ও উদ্বাস্তু আন্দোলনের কর্মীদের মধ্যে। তাঁদের আশঙ্কা বস্তি ও উদ্বাস্তু কলোনিগুলির নাম পরিবর্তন করার মধ্য দিয়ে বস্তি ও কলোনির জমিকে প্রোমোটিং ও সিন্ডিকেট বাহিনীর জন্য উন্মুক্ত করে তুলে দেওয়ারও ষড়যন্ত্র রয়েছে।
দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক হানাহানি সহ নানা কারণে ভিটেমাটিহীন, ছিন্নমূল মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের খোঁজে এরাজ্যে এসেছিলেন। যুক্তফ্রন্ট এবং তারপর বামফ্রন্ট সরকার তাঁদের বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা থেকে উদ্বাস্ত পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছিল। উদ্বাস্তদের বাসস্থানের বন্দোবস্ত, তাঁদের জীবিকার বন্দোবস্ত সহ নানা সহায়তার ব্যবস্থা করেছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বার বার বৈঠক করে উদ্বাস্তু পুনর্বাসন আইনকে বলবৎ করার জন্যও সক্রিয় ছিল। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সেই কাজ থমকে গেছে। উদ্বাস্ত কলোনিগুলোর স্বীকৃতি ও বস্তিবাসীদের অধিকার ও উন্নয়ন নিয়ে বস্তি ও উদ্বাস্তু আন্দোলনের কর্মীদের ধারাবাহিক প্রতিবাদ বিক্ষোভেও নীরব থেকেছেন মমতা ব্যানার্জি। অথচ তিনিই শিলিগুড়ির প্রশাসনিক বৈঠক থেকে রাজ্যের বস্তি ও উদ্বাস্তু কলোনির নাম পালটানোর ঘোষণা করেছেন। বস্তির নাম বদলে ‘উত্তরণ’ ও উদ্বাস্ত কলোনির নাম বদলে ‘স্থায়ী ঠিকানা’ নামের ঘোষণা করেছেন। এনিয়ে সম্মিলিত বাস্তুহারা পরিষদের রাজ্য সম্পাদক মধু দত্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘স্থায়ী ঠিকানা’ মানে? এই নামকরণের উদ্দেশ্য কী! যাঁরা কয়েক দশক ধরে উদ্বাস্তু কলোনিতে বসবাস করছেন তাঁরা তো সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দাই। তাছাড়া নাম পরিবর্তন নয়, আমরা চাই উদ্বাস্তু কলোনিগুলির স্বীকৃতি। রাজ্যে ১৮০০’র বেশি উদ্বাস্ত কলোনির স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। ক্ষমতায় এসেই উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দপ্তরটিকে তুলে দিয়েছেন। কেন্দ্রের মোদী সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে উদ্বাস্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রক্রিয়াকেই গুটিয়ে ফেলার একটা ষড়যন্ত্র চলছে। তাছাড়া বহু মনীষী ও শহীদদের নামাঙ্কিত বস্তি ও কলোনিগুলির নাম বদলে দিয়ে তাঁদের প্রতিও অসম্মান করছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাছাড়া বস্তি ও কলোনি নাম থাকার কারণে সেখানকার জমির ব্যাপারে প্রোমোটার ও জমি হাঙররা খানিকটা সমঝে চলেন, আইনি প্রতিবন্ধকতাও আছে ওই জমি দখল করে জমির চরিত্র পালটে বহুতল নির্মাণে। নাম পরিবর্তনে তাঁদেরও সুবিধা হতে পারে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মধু দত্ত।
 

Comments :0

Login to leave a comment