Md Salim on Ekushe July

শাসকের দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে : সেলিম

রাজ্য

পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যখন গণতন্ত্রকে ফেরাতে চাইছেন, তখন পুলিশের একটা বড় অংশকে ব্যবহার করে, মস্তান, ভাড়াটে গুন্ডাকে ব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রী মানুষকে শায়েস্তা করতে চাইছেন। সারা রাজ্যের মানুষ লুটেরাদের তাড়ানোর জন্য পথে নামল, সেই লড়াইকে লুটের ভোটের ভুয়ো ফলাফল দিয়ে মুছে দেওয়া যাবে না। একবার মানুষ যখন চোর-লুটেরাদের বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন, তখন জয় মানুষের হবেই। সারা রাজ্যের ও দেশের গণতন্ত্র উদ্ধারের লড়াই আরও জোরদার হবে। দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ও সংবিধান আক্রান্ত। মণিপুর, গুজরাট, মধ্য প্রদেশে যা যা ঘটছে, আমাদের বাংলায় তার থেকে কম কিছু তো ঘটছে না। শুক্রবার কোচবিহারে তৃণমূলের একুশে জুলাইয়ের সভার বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, রাজ্যে মানুষের প্রাণ গেল, পঞ্চায়েত ভোটের আগে ও পরে ৬০ জন মানুষের প্রাণ গেল। অথচ তা কমিয়ে এখন ১৯ বলছে। কোচবিহারের সাংবাদিকরা আমাকে বলছেন, জেলায় ভোটের শিকার হয়েছেন ৬জন। অথচ উনি বলছেন, এই জেলায় নাকি মাত্র একজন মারা গেছে! আমরা জানতে চাই, কত লোক মরলে মুখ্যমন্ত্রী বলবেন। পঞ্চায়েতের ভোট গণনার ৯দিন পরেও রাজ্য নির্বাচন কমিশনার জয়ীদের নামের তালিকা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করতে পারল না। কমিশনের বিরুদ্ধে মামলা সামলাতে হাইকোর্টকে আলাদা বেঞ্চ গড়তে হয়েছে। বিডিও, আইসিকে ব্যবহার করে ভোট লুট হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে এই হিংসা তিনি করলেন কেন?
তিনি বলেন, ফেক শহীদ সমাবেশ ডেকে মিথ্যে বাইনারি তৈরি করে নেত্রী বলছেন, বিজেপি নেতাদের অফিস, বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাবে। আবার বিজেপিও তৃণমুল নেতার বাড়ির সামনে কোনদিন বিক্ষোভ দেখাবে। ঘোষণা তো ছিল পঞ্চায়েত ভোটের পর প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাবেন। এখন বলছেন অক্টোবর মাসে দিল্লিতে বিক্ষোভ হবে। এরাজ্যে ওঁর দলের এমপি’রা কী করছেন? ওদের সাংসদদের তো সংসদে দেখা মেলে না।
সেলিম আরও বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের যে সমস্ত লোক আহত হয়েছেন, তাদের কাছে গিয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক, হরলিক্স আর ফল দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? না তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী? পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যতজন নির্বাচন কর্মী, পুলিশকর্মী, সাধারণ ভোটপ্রার্থী, ভোটকর্মী বা ভোটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সবার দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। আমরা হাইকোর্টে গিয়েছি, এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে যতজন মারা গিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১০লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আরজি জানিয়ে। 
মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, কিন্তু আজ তুফানগঞ্জের বালাভূত গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মূলত চর বালাভূত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে নিজের চোখে দেখে এলাম এই তৃণমূলের লোকজন শুধু সাধারণ মানুষের ঘর লুট করেছে তাই নয়, মা-বোনেদের ধর্ষণ করবে বলে ভয় দেখিয়েছে। সিপিআই(এম) করার অপরাধে ঘর ছেড়ে কেউ বাংলাদেশে কেউ আসামে আশ্রয় নিয়েছেন। ভয়ে আতঙ্কে যাঁরা আসাম কিংবা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদেরকে পুলিশ প্রশাসন বাড়িতে ফিরিয়ে আনলেও, তৃণমূলের মস্তানরা মা-বোনেদের ভয় দেখাচ্ছে। আজকের দিনেও যখন উনি কলকাতায় একুশে জুলাইয়ের তামাশা করছেন, ঠিক এই সময়েও অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে তাঁর দলের দুষ্কৃতীরা। এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেল এই মুহূর্তে এলাকার বাড়িগুলি পুরুষশূন্য। এই অবস্থায় আক্রান্তের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি, রাজ্যের মানুষ দাঁড়াবেন, গোটা দেশের মানুষ দাঁড়াবেন। আর সরকারকে বলব, হাইকোর্টের নির্দেশে কোনও দল না দেখে, কোনও দলীয় পরিচয় না দেখে প্রত্যেক মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। 
মহম্মদ সেলিম এদিন বলেন, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই। বিজেপি’র নেতারা কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ঘুরছেন, আর তৃণমূলের নেতারা রাজ্যের বাহিনী নিয়ে ঘুরছেন, অথচ সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সেলিম বলেন, কোচবিহার জেলার দিনহাটায় তৃণমূলের নেতারা বলেছেন বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করো, আর বিজেপি’র নেতারা বলেছেন তৃণমূল নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করো। এরপরে এরা দুজনে মিলেই ভোট লুট করেছে। দিনহাটার ভেটাগুড়িতে যেমন বিজেপি লুট করেছে, ঠিক তেমনি দিনহাটার অন্যান্য জায়গায় তৃণমূল লুট করেছে। দিল্লিতে মোদীর লুট, আর রাজ্যে দিদির লুট, আমরা বলছি লুটেরাদের ধরো।
‘১০০দিনের কাজের টাকা বিজেপি দেয়নি, আমরা বাংলা থেকে করে দেবো’। একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে এদিন সেলিম বলেন, ১০০দিনের কাজ না বিজেপি’র, না তৃণমূলের। যখন কেন্দ্রে ইউপিএ-১ সরকার হয়েছিল সেই সময় বামপন্থীরা দাবি করেছিলেন কাজের অধিকারের। এই সময় মনমোহন সিংয়ের সরকার বলেছিল, একসাথে ৩৬৫দিন হবে না, আগে ১০০দিন হবে, পরবর্তীতে ২০০ এবং তারপরে ৩০০দিন হবে ধাপে ধাপে। যখন থেকে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার এসেছে, তখন থেকেই এই ১০০দিনের কাজকে তারা তুলে দিতে চাইছে। আর যখন থেকে এরাজ্যে  তৃণমূল সরকার এসেছে, তখন থেকে রাজ্যের গরিব মানুষকে ১০০দিনের কাজ দেওয়ার তো প্রশ্নই নেই, লুট করেছে। যার জবকার্ড হওয়ার কথা, তার জবকার্ড নেই। আর যিনি জব করেছেন, তার মজুরির টাকা নেই। একজনের টাকা আর একজন মেরেছে। যে আইনে বিজেপি’র কেন্দ্রীয় সরকার এই রেগার মজুরি টাকা বন্ধ করেছে, সেই আইনেই আছে এই টাকা নিয়ে যারা হেরাফেরি করেছে, তাদের শাস্তি দিতে হবে। কিন্তু এই ১০০দিনের টাকা যে লুট করল তৃণমূলের পঞ্চায়েত, তৃণমূলের জেলা পরিষদ, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিল না কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। যেমন নারদ, সারদা বিভিন্ন চিট ফান্ড, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির ক্ষেত্রেও কোনও ব্যবস্থা নেননি তারা। আমরা হাইকোর্টে যাওয়ার পর চোর ধরার কথা বলা হচ্ছে, তারপর হাইকোর্ট বলেছে এবং তদন্ত হচ্ছে। একইভাবে গোটা নির্বাচনী প্রচারের সময় তৃণমূল বলল দিল্লি যাব এবং ১০০দিনের টাকা আদায় করব। আর এখন তারা আত্মসমর্পণ করছে। আর আমরা বলেছি, আমরা লড়বো, তার আগে বলতে হবে কত টাকা তুমি পেলে? কত টাকা খেলে? কত টাকা দিলে? আর কত টাকা পাওনা আছে? তিনি বলেন, এই রাজ্য থেকে এতগুলো এমপি রয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি’র, তারা কী করছে? পার্লামেন্টে এই বিষয় নিয়ে কেন প্রশ্ন হচ্ছে না? 
মহম্মদ সেলিম বলেন, ভোটের সময় তৃণমূল বলল, দিল্লি থেকে রেগার টাকা আদায় করে নিয়ে আসবে। আর এখন আত্মসমর্পণ করে বলছে, আমরা আমাদের টাকা দিয়ে করব! এদিন তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, কার টাকা দিয়ে করবেন? এটা বিজেপি’র টাকাও নয়, তৃণমূলের টাকাও নয়, এটা মানুষের টাকা। আমরা যে ট্যাক্স দিচ্ছি, তা দিয়ে স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার কথা, শিক্ষকদের বেতন হওয়ার কথা, হাসপাতালে ওষুধ হওয়ার কথা, চিকিৎসক হওয়ার কথা, যা দিয়ে রাস্তাঘাট, কালভার্ট হওয়ার কথা। তা হলো না, তৃণমূল চুরি করল। আমরা বলছি, এই চোরাই মাল ফেরত দিতে হবে। আর ওরা চোরাই মাল ফেরত না দিয়ে, চোর না ধরে এখন বলছে আমরা রাজ্যের টাকা দিয়ে করব। হকের লড়াই কে লড়বে? আমরাই লড়ব। আমরা বলেছি, আমরা রাজ্যের এক কোটি মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছি। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা প্রধান বিচারপতির কাছে তারিখ চেয়েছি। তাঁর কাছে গিয়ে আমরা বলব, এই চোরদেরকে ধরতে হবে এবং লুট করা টাকা আদায় করতে হবে।
 শুক্রবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির কাছ থেকে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তির আগ্নেয়াস্ত্র সহ গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিম বলেন, পুলিশ করছেটা কী? কলকাতায়  যে কোনও সময় যত বেশি পুলিশ থাকে কালীঘাটে মমতা এবং অভিষেকের বাড়ির সামনে, লালবাজারেও তত পুলিশ থাকে না। ধৃত ব্যক্তির কাছে আইবি কিংবা বিএসএফের কার্ড পাওয়া গেছে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, আমাদের রাজ্যে সবই ফেক হচ্ছে। যেমন প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর ফেক ডিগ্রি, ঠিক একইভাবে ফেক আইপিএস অফিসার, ফেক আইএএস অফিসার, ফেক এমএলএ, ফেক সিবিআই, ফেক উকিল ধরা পড়েছে। এটাও ফেক না আসল, এটা পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে হবে। তবে এ ধরনের ঘটনা আসলে বিজেপি এবং তৃণমূলের কায়দা। মাঝে মাঝেই এধরনের খবর পাওয়া যায় অমুককে ধরা হয়েছে মোদীকে মারতে এসেছিল, তমুককে ধরা হয়েছে অমিত শাহকে মারতে এসেছিল। যখন সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত, তখন ভিভিআইপি’রা নিজের জীবন নিয়ে খবরাখবর পাচার করে এবং প্রচার করে।

 

Comments :0

Login to leave a comment