NO CONFIDENCE MOTION

মোদীর নীরবতা ভাঙতে অনাস্থা, লোকসভায় বিরোধীরা

জাতীয়

NO CONFIDENCE MOTION

সরকার ফেলার জন্য আনা হয়নি অনাস্থা প্রস্তাব। বিরোধীরা কেবল চাইছেন মণিপুরের মারাত্মক পরিস্থিতিতে সংসদে বক্তব্য রাখুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সংসদেই জবাবদিহি করতে হবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব আনতে বাধ্য হয়েছে তার জন্য। 

মঙ্গলবার লোকসভায় অনস্থা প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় এই মর্মেই উদ্দেশ্য জানিয়েছেন কংগ্রেস এবং বিরোধী সাংসদরা। এদিন সরকারের পক্ষে বলতে ওঠেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তাঁর দাবি, মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১৫ দিন অন্তর উত্তর পূর্বে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের। 

বিরোধীদের পালটা প্রশ্ন, গত ৯৭ দিনে জ্বলতে থাকা মণিপুরে ঠিক কোন কোন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিয়েছেন জানাতে হবে রিজিজুকে। অনাস্থা ভোটের আলোচনায় এসেছে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রসঙ্গও। ফের বিরোধী দলগুলির বিন্যাস ‘ইন্ডিয়া’-কে আক্রমণের লক্ষ্য করেছে বিজেপি।

এদিনই অধিবেশনের আগে বিজেপি’র সংসদীয় দলের বৈঠকে ভাষণ দেন মোদী। ‘ইন্ডিয়া’ বিন্যাসকে আক্রমণের লক্ষ্য বানিয়েছেন ভাষণে। মোদী বলেছেন, ‘‘আসলে বিরোধী দলগুলির একে অন্যের প্রতি অনাস্থা রয়েছে। নিজেদের আস্থা পরীক্ষা করতেই সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে।’’ 

লোকসভায় আলোচনা শুরু করে কংগ্রেসের গৌরব গগৈ গোড়াতেই বুঝিয়ে দেন যে শক্তিপরীক্ষা উদ্দেশ্য নয়। তিনি বলেছেন, ‘‘মৌনব্রত নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ দেশ তাঁর কথা শুনতে চায়। মণিপুর জ্বললে দেশ শান্তিতে থাকে না। বিরোধীরা দাবি করেও সংসদে তাঁকে বলাতে পারেনি। সেজন্যই আনতে হয়েছে অনাস্থা প্রস্তাব, যেখানে তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে দেশের সংসদে।’’ 

একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন গগৈ। জানতে চেয়েছেন, কেন প্রধানমন্ত্রী মুখ বুঁজ থেকেছেন। মণিপুরে মহিলাদের অমানবিক নির্যাতনের ভিডিও জুলাইয়ের শেষে বেরিয়ে। কিন্তু ঘটনা তো মে’র গোড়ার। কেনই বা মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা বীরেন সিং-কে বরখাস্ত করা হলো না। মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা অশান্তি বাড়িয়েছে উত্তর পূর্বের এই রাজ্যে। 

গগৈ বলেন, ‘‘মোদী নীরব কারণ তিনি তাঁর দায় কখনও স্বীকার করতে চান না। স্বীকার করতে চান না যে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ব্যর্থ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং সুরক্ষা ব্যবস্থাপনা ব্যর্থ।’’ কড়া আক্রমণে গগৈ বলেছেন, ‘‘সবসময় প্রধানমন্ত্রী বলে চলেছেন ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত। আর মণিপুরে দেখছি দুই মণিপুর করে দিয়েছেন। এক মণিপুর পাহাড়ে, আরেক মণিপুর উপত্যকায়।’’    

মণিপুরে দুই জনগোষ্ঠী, উপত্যকার মেইতেই এবং পাহাড়ে বসবাসকারী আদিবাসী কুকিদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে মে’র গোড়া থেকে। দেড়শোর বেশি মানুষ প্রায় হারিয়েছেন। আশ্রয় হারিয়েছেন চল্লিশ হাজারের বেশি মানুষ। ভোটে জেতার জন্য মেইতেই এবং কুকিদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করেছে বিজেপি, প্রায় তিনমাস ধরে এই অভিযোগে সরব কংগ্রেস, বামপন্থী সহ বিরোধী বিভিন্ন দল। 

জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী রিজিজুর দাবি, মোদীই প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি নিয়মিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের উত্তর পূর্বে পাঠিয়েছেন। উত্তর পূর্বের মানুষ দীর্ঘ সময় ভারতের অন্যত্র বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পনের দিন অন্তর পাঁচ জনকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং সাত জন প্রতিমন্ত্রীকে উত্তর পূর্বে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মোদী।’’

কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ সংসদের বাইরে বলেছেন, ‘’৯৭ দিন ধরে জ্বলছে মণিপুর। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কোন মন্ত্রীরা গিয়েছেন জানান রিজিজু।’’ বিরোধীরা বলেছেন যে রাজ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ গিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি। নেভেনি হিংসার আগুন। 

কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেছেন, ‘‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি সরকারের নীতিতে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। কেন্দ্র বলছে জম্মু ও কাশ্মীরে স্বাভাবিক অবস্থা। অথচ সে রাজ্যে বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যকে ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়েছে। ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর চার বছর কেটেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কেন করা যায়নি বিধানসভা নির্বাচন?’’  

Comments :0

Login to leave a comment