Opposition Reacts

‘ধাপ্পাবাজি’, ‘স্রেফ চমক’ অভিযোগ বিরোধীদের

জাতীয়

Opposition Reacts

বিস্তর গোপনীয়তা বজায় রেখে শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত’র পর্দা ফাঁস হলো কি মঙ্গলবার? এদিন তাঁর সরকার ‘নারীর ক্ষমতায়ন’র গালভরা বুলি আওড়ে লোকসভায় পেশ করেছে মহিলা সংরক্ষণ বিল। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা মহিলাদের জন্য আইনসভায় ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত বিল অবশেষে লোকসভায় পেশ হওয়ায় বিরোধীরা অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সরকারকে বিঁধতেও পিছপা হয়নি। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে এই বিল পেশের প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রায় দশ বছর পর কেন সেই বিল আনা হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। আবার এখন পেশ হলেও মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ প্রক্রিয়া ২০২৪-এ নয়, চালু হতে লেগে যাবে প্রায় ২০২৯ সাল! ফলে মহিলাদের বঞ্চিত হয়ে থাকতে হবে আরও বেশ কয়েক বছর! একারণেই কোনও বিরোধী দল একে আরেক ‘জুমলা’ বা ‘ধাপ্পাবাজি’, কেউ ‘বড় ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা’ আবার কেউ কেউ ‘মহিলাদের বোকা বানানো হলো’ বলেও অভিযোগ করেছে। প্রস্তাবিত বিলে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের কথা পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়নি কেন, সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে কোনও কোনও দল।
এমনিতে মহিলা সংরক্ষণ বিল ইউপিএ আমলে রাজ্যসভায় পাশ হয়ে গেলেও আটকে যায় লোকসভায়। সেই থেকে ঝুলেই ছিল। মোদী সরকার প্রথম দফায় নয়, দ্বিতীয় দফারও একেবারে শেষবেলায় বহু ঘটা করে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে তার আলোচ্যসূচি চরম ধোঁয়াশায় রেখে এদিন লোকসভায় মহিলা বিল পেশ করল। দেখানো হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী মহিলাদের জন্য কত আন্তরিক! তবে বিরোধীরা এক কথায় উড়িয়ে দিয়ে মনে করছে, এটা ভোটের আগে একটা নির্বাচনী চমক।
কংগ্রেস এদিন এই বিল ইউপিএ আমলের বলে দাবি করার পাশাপাশি ‘নির্বাচনী ধাপ্পাবাজি’ কিংবা ‘মহিলাদের প্রত্যাশাপূরণের প্রতি বড় ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা’ বলে কটাক্ষ করেছে। এর মূল কারণ অবশ্যই মহিলাদের সংরক্ষণ কার্যকর হবে জনগণনা এবং আসন পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়ার পর। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এদিন বলেছেন, ‘তাঁদের দল সবসময় মহিলা বিলকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে। এই বিলের মাধ্যমে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মহিলাদেরও সমান সুযোগ দেওয়ার কথা থাকা উচিত ছিল।’ সেই আসন পুনর্বিন্যাসের পর এই আইন চালু হবে প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘বস্তুত ২০২৯ সাল পর্যন্ত মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের দরজা বন্ধ করে রাখল মোদী সরকার। এর ব্যাখ্যা দিতে হবে বিজেপি-কে।’
অমিত শাহ এদিন মহিলা বিল নিয়ে কংগ্রেসকে নিশানা করে দাবি করেন যে, ওই দল শুধু ‘প্রতীকী’-তে বিশ্বাস করে বলেই মহিলা বিল নিয়ে মোটেই গুরুত্ব দেয়নি। এর জবাবে কংগ্রেস উলটে জানতে চেয়েছে, শেষ পর্যন্ত কবে জনগণনা হবে? কটাক্ষ করে দলের তরফে বলা হয়েছে, এতদিন অপেক্ষার ফলে লক্ষ লক্ষ ভারতের মহিলা এবং যুবতীদের আশা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। ফাঁকা বুলি দেওয়া ওস্তাদের আরেক ধাপ্পাবাজি। দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেছেন ‘‘আমরা আগেই বলেছিলাম যে জি-২০ দেশগুলির মধ্যে ভারতই একমাত্র যারা এখনও জনগণনা করে উঠতে পারেনি। এখন বলা হচ্ছে, জনগণনার পর মহিলা সংরক্ষণ বিল চালু হবে। নিশ্চয়ই ২০২৪ সালের আগে জনগণনা বা আসন পুনর্বিন্যাস চালু হবে না! ফলে ফের আরেকটা ফাঁকা প্রতিশ্রুতি ভোটের আগে।’
মহিলা সংরক্ষণ বিলের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত এদিন বলেছেন, ‘‘২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসর আগে মহিলা বিল নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। এখন সেই বিল আনা হলো। বস্তুত, পরবর্তী জনগণনা, আসন পুনর্বিন্যাস পর্যন্ত মহিলা সেই বঞ্চিত হয়েই চলবে, তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে এই বিলে। অন্যদিকে, ২০২৪ সালের নির্বাচন কিংবা ১৮তম লোকসভা গঠনে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকছে না। বহু বিধানসভাতেও তা কার্যকর হবে না। মোদী সরকারের এই ঢিলেমির ফলে আরও বহু বছর ধরে মহিলাদের প্রতি বঞ্চনা সুনিশ্চিত থাকবে।’’ এরই পাশাপাশি সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি, সারা ভারত মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির পক্ষ এক যৌথ বিবৃতি এদিন বলা হয়েছে, গত ২৫ বছর ধরে তারা মহিলা বিল আনার দাবি জানিয়ে আসছে। আসলে বিজেপি সরকার মহিলা বিল নিয়ে মোটেই আন্তরিক নয়। একই সঙ্গে এই বিল নিয়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আলোচনা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মহিলা সংগঠনগুলির মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
আরজেডি এবং সমাজবাদী পার্টির পক্ষ থেকে ‘সংরক্ষণের মধ্যে সংরক্ষণ’ রাখার দাবি তোলা হয়েছে। আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা বলেছেন, তাঁর দল দীর্ঘদিন ধরে তফসিলি জাতি-আদিবাসী-অনগ্রসর সম্প্রদায়ের মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছে। ‘কোটার মধ্যে কোটা’ না হলে এই বিলের কোনও অর্থই থাকেন। রাবড়ি দেবীও সমাজের দুর্বল অংশের মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন। তিনি এই বিলকে স্রেফ ‘চমক’ বলতেও দ্বিধা করেননি। জনতা দল (ইউ) নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার একইভাবে অনগ্রসর অংশের মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে অবিলম্বে জনগণনা প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলার কথা বলেছেন। এক্স হ্যান্ডেলে সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ সিং যাদব সংরক্ষণের প্রশ্নে লিঙ্গগত সুবিচার এবং সামাজিল ন্যায়বিচারের দাবি তুলে বলেছেন দলিত, অনগ্রসর, সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী মহিলাদের জন্য পথক সংরক্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার ছিল। 
বিএসপি প্রধান মায়াবতী বিজেপি’র আনা বিলকে পূর্ণ সমর্থন জানালেও তাঁরই দলের সাংসদ দানিশ আলি একে ‘জুমলা’ বলে অভিযোগ করেছেন। তবে আপ’র অতসী স্পষ্টই এই বিলকে ‘লোকসভা ভোটের আগে মহিলাদের বোকা বানানোর ছক’ বলে তির্যক মন্তব্য করেছেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি কখনোই মহিলাদের উন্নয়ন কিংবা কল্যাণ চায় না।
 

Comments :0

Login to leave a comment