SILIGURI PATHORGHATA

অধিকার রক্ষার লড়াইতে সামিল পাঁচকেলগুড়ি গ্রাম

রাজ্য জেলা

SILIGURI PATHORGHATA

অনিন্দিতা দত্ত- শিলিগুড়ি


লাল পতাকা ছাড়া এই কঠিন সময়ে আস্থা আর বিশ্বাসের অন্য কোনো জায়গা দেখতে পাচ্ছেন না শিলিগুড়ি মহকুমার মাটিগাড়া ব্লকের পাথরঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের পাঁচকেলগুড়ি গ্রামের মানুষ। বাস্তু জমি রক্ষার লড়াইতে লাল ঝান্ডার নীচে প্রতিদিনই বাড়ছে এই গ্রামে মানুষের ভিড়। প্রতিবাদের ভাষা ক্রমশই তীব্র হচ্ছে। 
ধারাবাহিকভাবে আন্দোলনে রয়েছেন পাঁচকেলগুড়ি গ্রামের গরীব মানুষেরা। নিজেদের বসত জমি রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। মঙ্গলবার ফের জমির রক্ষার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সভায় যোগ দিয়েছেন গ্রামবাসী ধনহরি বর্মন, কৃষ্ণা রায়, করিম হোসেন’রা। শুধু নিজেরাই নয়, তাদের সঙ্গে হাতে হাত ধরে এগিয়ে এসেছেন গ্রামের পুরুষ মহিলা বয়ষ্ক সকলেই। ‘চোর তাড়াও গ্রাম বাঁচাও’ এই দাবিতেই যেন গোটা গ্রাম এক হয়ে উঠে এসেছিলো গ্রামের কালিমন্দিরের মাঠে এদিনের সভা প্রাঙ্গনে। গ্রামের মানুষ বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময়তেই জমির পাট্টা পেয়েছিলো। আর এখন নতুন করে তৃণমূলের জমি দালালরা বলছে গ্রামবাসীদের কাছে থাকা পাট্টা ভুয়ো জাল। এই অজুহাতে তাদের জমি হাতিয়ে নেবার চেষ্টা করছে। পাথরঘাটার এই গ্রামের মানুষ বামফ্রন্টের সময়ে অর্জিত অধিকার রক্ষার লড়াইতে সামিল হয়েছেন। আর এদিনও পাঁচকেলগুড়ির গ্রামবাসীদের খোঁজখবর নিতে সভাতে হাজির হয়েছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। সভায় ছিলেন সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক, পার্টি নেতা অশোক ভট্টাচার্য, তাপস সরকার, জয় চক্রবর্তী, ভবেশ ঘোষ, শম্ভু প্রসাদ প্রমূখ নেতৃত্ব। 


২০২২সালে ২৩ নভেম্বর পাওয়ার অব অ্যাটার্নির নাম করে রাতের অন্ধকারে জমি মাফিয়ারা ওই গ্রাম এলাকায় খুঁটি বসিয়ে এবং সাইনবোর্ড লাগিয়ে গ্রাম থেকে বাসিন্দাদের উঠে যেতে বলে। ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। সেই থেকে পাঁচকেলগুড়ি গ্রামে গরীব মানুষদের ভয় দেখিয়ে নানা কায়দায় দফায় দফায় বলপূর্বক জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করেছে তৃণমূলী জমি দালালরা। জবরদখলের হাত থেকে রক্ষা করতে গত প্রায় চার মাস ধরে পাঁচকেলগুড়ির গ্রামবাসীরা নিজেদের জমি পাহাড়া দিচ্ছেন।  টাকার টোপও দেওয়া হয়েছে। জাতি ও ধর্মের নামে গ্রামবাসীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে। গ্রামবাসীরা নিজেদের দাবি থেকে এক চুলও নড়েনি। জমি রক্ষার দাবিতে অনড় থেকেছেন। দমনপীড়নের মাত্রা বেড়েছে। মিথ্যে মামলায় ছয়জন গ্রামবাসীদের গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। তবুও পিছপা হননি গ্রামবাসীরা। বারবার জবরদখলকারীদের তাড়িয়েছে গ্রামের মহিলারা। আন্দোলনের চাপে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা ছয়জন গ্রামবাসীদের শেষ পর্যন্ত জামিনে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় প্রশাসন। অভিযোগ, গোটা বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কমিশনার, মাটিগাড়া থানার আইসি, মাটিগাড়া ব্লকের বিএল এবং এলআরও দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এরপরেও দালালদের একটি অংশ প্রশাসনের একাংশের মদতে গ্রামবাসীদের মধ্যে ভয়ভীতি সৃষ্টি করে চলেছে।  


এদিনের সভার শুরুতে সম্প্রতি অবৈধভাবে বালি পাথর তুলতে গিয়ে মাটিগাড়ার বানিয়াখালি ত্রিপালি জোতের তিনজন শিশু শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শোক জ্ঞাপন করা হয়। পাঁচকেলগুড়ি গ্রামের মানুষদের কোনভাবেই যেন উচ্ছেদ হতে না হয় সেই বিষয়টি সুনিশ্চিত করা, গ্রামে ভীতির পরিবেশ সৃষ্টিকারী দুষ্কৃতীকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, বসবাসের নিশ্চয়তা দেবার ক্ষেত্রে গরীব মানুষদের হাতে অবিলম্বে বাস্তু জমির পাট্টা তুলে দেওয়া, জমি মাফিয়াদের সক্রিয়তা রুখতে ও পাওয়ার অব অ্যাটরনির বেআইনী খেলা বন্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ, বলপূর্বকভাবে কেড়ে নেওয়া গরীব মানুষদের জমি তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, এতো আন্দোলনের পরেও প্রশাসন কি ব্যবস্থা নিলো সেটাই দেখার বিষয়। শিলিগুড়ির শহরাঞ্চল ও মহকুমার গ্রামাঞ্চলে দিন দিন জমি মাফিয়ারাজ উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাল পাওয়ার অব অ্যাটার্নি দেখিয়ে এই সমস্ত বেআইনী কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে দিনের পর দিন মাফিয়ারা। শুধু পাঁচকেলগুড়ি গ্রামই নয়, পরিকল্পনামাফিক একের পর এক গ্রাম জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে জবরদখলকারীরা। 
গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন রুখে দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন আপনারাই। যে কোন মূল্যেই নিজেদের জমি রক্ষা করতে হবে। দল মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তুলুন। পাঁচকেলগুড়ির গ্রামবাসীদের সাথে আমরা ছিলাম, আছি ও আগামীদিনেও থাকবো। নদী বন্ধ থাকায় মহকুমার গ্রামের মানুষেরা রোজগারহীন হয়ে পড়েছেন। প্রকৃত নদী শ্রমিকদের নদী থেকে বৈধ উপায়ে বালি পাথর তোলার অনুমতি দিয়ে দ্রুত নদী খুলে দেবার দাবি জানান তাঁরা। 
 

Comments :0

Login to leave a comment