MD SALIM ELECTION

শান্তিতে ভোট চাইছেন মানুষ, স্পৃহা বেড়েছে প্রতিরোধের: সেলিম

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

ছবি সংগ্রহ থেকে।

জনতা চাইছে শান্তিতে ভোট হোক, শান্তির জন্য ভোট হোক। অশান্তি প্রতিরোধে জনতার স্পৃহা দেখা গিয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনেই। সেই স্পৃহা আরও বেড়েছে। সকাল থেকেই মানুষ নিজের ভোট দিতে লাইনে দাঁড়াবেন। 
সোমবার এই ঘোষণা করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মঙ্গলবার রাজ্যে তৃতীয় দফার ভোট। মুর্শিদাবাদ সহ চার আসনে ভোট নেওয়া হবে এই দফায়। মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে কংগ্রেস সমর্থিত বামফ্রন্ট প্রার্থীও সেলিম। 
তিনি বলেছেন, ‘‘আইপ্যাকের থেকে থানায় থানায় প্যাকেট চালাচালি হয়েছে। সব তথ্য ফাঁস করব।’’ সেই সঙ্গে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘পুলিশকে বলব, মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করে লাভ নেই। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের। পুলিশ মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলবেন যে সব নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব, তা চলবে না। আর কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বলব কেবল স্থানীয় পুলিশের কথায় চলবেন না।’’
নির্বাচন কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর উদ্দেশ্যে তাঁর দাবি, ‘‘রুট মার্চ করতে হবে সর্বত্র। অনেকগুলি জায়গায় রুট মার্চ হয়নি। পুলিশ পর্যবেক্ষকের সঙ্গে দেখা করছি। বলছি যে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে। মানুষের আস্থা এর মধ্যে তৈরি হয়েছে। তাঁদের ভোট দেওয়ার অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে।’’
সেলিমের আহ্বান, ‘‘শান্তির জন্য ভোট হোক, সম্প্রীতির জন্য ভোট হোক। সেই জন্য বামফ্রন্ট আর কংগ্রেস একসঙ্গে লড়াই করছে। তাতেই বিজেপি আর তৃণমূল শঙ্কিত। বাইনারি ভেঙেছে। রামনবমীর দিন উসকানি মানুষ রুখেছেন। দিল্লিতে মোদী সরকারকে উৎখাত করতে চান। রাজ্যে মমতাকেও পরাজিত করতে চান মানুষ। তাই শান্তির জন্য ভোট হোক। শান্তিপূর্ণ ভোট হোক। মানুষ নিজের ভোট নিজে দিন।’’ 
সেলিম বলেন, ‘‘তৃণমূলের সাহস নেই। কয়েকজন পুলিশ ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু মানুষের যে উচ্ছ্বাস, এরা কেউ ভোটের সময় বাধা দিতে পারবে না। সকাল থেকে মানুষ নিজের ভোট নিজে দেবেন।’’
প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা ‘আইপ্যাক’-কে বিধানসভা নির্বাচনের সময় ভাড়া খাটিয়েছিল তৃণমূল। এবারও রাজ্যে তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় এই সংস্থা। সেলিম বলেছেন, ‘‘আইপ্যাকের ভাড়ায় খাটা কিছু লোক কিছু এলাকায় গুজব ছড়াচ্ছে। মানুষ বুঝছেন। তবু বলব, গুজবে কান দেবেন না। কোনও প্রলোভনে পা দেবেন না। টাকা বিলি করতে যদি আসে রাতে, তারা গ্রাম থেকে ফিরতে পারবেন না। মানুষই ধরে রাখবেন।’’
জনতার মনোভাব বুঝিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘মানুষ শান্তিতে ভোট চান। দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে, খুনখারাবি যারা করে তাদের বিরুদ্ধে লুঠতরাজ যারা করে তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিতে চান। দুর্নীতি আর দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে রায় দিতে চান। পঞ্চায়েতের সময় প্রতিরোধ স্পৃহা দেখা গিয়েছিল। সেই প্রতিরোধ স্পৃহা কয়েকশো গুন বেড়েছে।’’
পঞ্চায়েতের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুলিশের সাহায্যে দুষ্কৃতীদের নিয়ে ভোট লুট হয়েছে। নির্বাচনী এজেন্টদের বুথের বাইরে বের করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মানুষ নিজের অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার জন্যই নেমেছেন। বাইরের রাজ্য রামণিপুরে আমরা দেখেছি কিভাবে ভোটের দিন লুট হয়েছে। এ রাজ্যে নির্বাচন কমিশনের সিইও ব্যবস্থা নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গত দু’টি দফায় কোনও ঘটনা ঘটেনি। আমরা আশা করব কালকেও ঘটনা, দুর্ঘটনা মুক্ত অবাধ সুষ্ঠু ভোট হবে।’’
প্রচার পর্বের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘‘অনেকদিন পর মুর্শিদাবাদে প্রচারের পর্বে বড় কোনও ঘটনা ঘটেনি। কয়েকটি ঘটনা যা ঘটেছে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী ধরার আগে স্থানীয় থানা গড়িমসি করায় অপরাধী পালিয়ে গিয়েছে।’’ 
সেলিম বলেছেন, ‘‘কিছু পুলিশ অফিসার মনে করছেন তাদের সাম্রাজ্য। এই নির্বাচনে তাদের কোনও ভূমিকা নেই। প্রধান উপপ্রধানদের নিয়ে রাতের বেলা ভয় দেখানোর চেষ্টা হয়েছে।  মিথ্যা মামলা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আজকে ডোমকলে স্থানীয় কংগ্রেস কর্মীদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। ডোমকলে কংগ্রেসের প্রধান এবং অঞ্চল সভাপতি কাশেম শেখের ওপর হামলা হয়েছে।’’
তিনি জানান যে সিপিআই(এম) রিয়েল টাইম ডেটা সেন্টার করেছে। যখন যেখানে যা ঘটছে সেই বুথ থেকে সরাসরি তথ্য আসছে। তথ্য দিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘কাল রানিনগরে তৃণমূল যখন মস্তানি করছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী গিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে। যখন থানায় নিয়ে গিয়েছে নিচুতলার অফিসার থেকে ওপরতলা ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে। আট ঘন্টা কংগ্রেস এবং আমাদের কর্মীরা থানায় বসে ছিলেন যাতে তাকে ছাড়া না হয়। কিন্তু একজন পুলিশ অফিসার আট ঘন্টা সময় নিয়েছে কথা বলতে কারণ তাদের চেষ্টা ছিল অপরাধীকে যাতে ছেড়ে দেওয়া যায়। আজ করিমপুরে নতুন বাজার এলাকায় স্থানীয় থানার এক এসআই আমাদের নির্বাচন কর্মীদের ভয় দেখাচ্ছে যে তাণ্ডব করা হবে।’’ 
নির্বাচনী হিংসা সংক্রান্ত এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, মুর্শিদাবাদে কেবল হিংসা হয় না। মণিপুরেও হয়। হিংসার ক্ষেত্রে কোনও একটি অঞ্চল বা কোনও একটি অংশকে দায়ী করা বেঠিক। সেটা করার চেষ্টা হয়ে থাকে। তবে হিংসা এবার প্রচার পর্বে মাথাচাড়া দিতে পারেনি সেভাবে। হিংসা হলে পুলিশের লাভ হয়। কিন্তু মানুষ হিংসা চান না।

এদিন সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে সেলিমের সঙ্গেই ছিলেন জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা।  

Comments :0

Login to leave a comment