তখন লড়াই চলছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। সদ্য গড়ে ওঠা কমিউনিস্ট পার্টি বিভিন্ন অংশকে এক জায়গার করার লড়াই চালাচ্ছে সাধ্যমতো। ‘লাঙল’ পত্রিকায়, ১৯২৬ সালে, লেখায় তুলে ধরা হয়েছিল শ্রমজীবীর একতাকে ভাঙার ষড়যন্ত্রও। কাকাবাবু লিখেছিলেন যে একদিকে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলছে। আরেকদিকে খাদ্য এবং বাদ্য নিয়ে উত্তর ভারতে তখন দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা চলছে। তখনও ‘গোহত্যা রোধ’-র নামে হিন্দু মুসলিমের বিরোধের কৌশল সক্রিয়। সেই কৌশল এখন আরেক চেহারা নিয়েছে। ঘৃণার চাষে উন্মত্ত হয়ে ওঠা ভিড় পিটিয়ে মেরে ফেলছে মানুষকে। প্রথম থেকে কমিউনিস্ট পার্টি বিভাজনের এই কৌশল সম্পর্কে সচেতন। জনতার সক্রিয় ঐক্য গড়তে ক্রিয়াশীল।
শনিবার, কাকাবাবু, কমরেড মুজফ্ফর আহম্দের জন্মদিবসে, তাঁর সেই লেখার উল্লেখ করে ঐক্য গড়ার লড়াইকেই শক্তিশালী করার আহ্বান জানালেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। এদিন কলকাতার মহাজাতি সদনের কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেছেন প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা এবং বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। বক্তব্য রেখেছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র, রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। মুজফ্ফর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার জয়ী লেখকদের নাম ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য।
এদিনই প্রকাশিত হয়েছে সিপিআই(এম) কলকাতা জেলার উদ্যোগে উর্দু মাসিক বুলেটিন ‘আওয়ামি তেহরিক’, যার বাংলা অর্থ ‘গণআন্দোলন’। বিমান বসু, মহম্মদ সেলিম, সূর্য মিশ্রের হাতে প্রথম সংখ্যা তুলে দিয়েছেন সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার।
সেলিম বলেছেন, ‘‘দক্ষিণপন্থীরা রাজনীতিকে যুক্তি-তর্কের বাইরে নিয়ে যেতে সক্রিয় থাকে। গণতন্ত্র ভেঙে ভিড়তন্ত্র চালু করে। হরিয়ানা থেকে মণিপুরে তা হচ্ছে। একটি জনগোষ্ঠীকে অন্যের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে, বলা হচ্ছে ‘মাইক্রো সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং’। মণিপুর একসঙ্গেই থাকতেন মেইতেই কুকি নাগারা। তাঁদের ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ধর্মকে ব্যবহার করে। মণিপুরে আসলে খ্রীস্টান হিন্দুদের মধ্যে দাঙ্গার বিষয় না। আসল বিষয় খনি এবং খনি সম্পদ লুট। দক্ষিণপন্থার উদ্ভবই লুটতন্ত্রকে বজায় রাখার জন্য। আজকের লুটেরা পুঁজি দাঁত নখ বের করেছে, দক্ষিণপন্থা তাকেই মদত জোগাচ্ছে। সংসদে বিনা আলোচনায় বন সংরক্ষণ আইন সংশোধনী পাশ হয়েছে। আসল লক্ষ্য জঙ্গলকে লুটের জন্য বেসরকারি হাতে বেচে দেওয়া।’’
দেশে আরএসএস-বিজেপি’র পাশাপাশি রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল বিজেপি’র বিরুদ্ধে বলবে? বিজেপি সরকার নাসিকে সরকারি নোট ছাপাখানা থেকে ৮৮ হাজার কোটটি টাকার নোট ছাপিয়েছে যা লেনদেনের নথি নেই। এরা বাড়তি নোট ছাপায়, আর ওরা বাড়তি ব্যালট ছাপিয়ে ভোট চুরি করে। আসলে দুই শক্তিই চোর, আসলে লুটেরা। তার জন্যই গণতান্ত্রিক অধিকার, সংগঠিত হওয়ার অধিকার কেড়ে নিতে হয়। সেই কারণেই লুটেরাদের হাত থেকে কেড়ে মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার ডাক দিয়েছিল বামপন্থীরা। সেলিম বলেন, এই লুটের বিরুদ্ধে থাকতে হবে বলেই খেতমজুর, দিনমজুর, আদিবাসী, তপশিলি সবাইকে একজোট রাখতে লড়ে বামপন্থীরা।’’
সূর্য মিশ্র বলেন, ‘‘পরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই সত্যের দিকে যাওয়া যায়। পরিবর্তনের লড়াইতে না থেকে এই কাজ করা যাবে না। শেষ কথা হলো সংগ্রাম, শ্রেণিসংগ্রাম, গণসংগ্রাম। আঁকাবাঁকা পথ রয়েছে, কিন্তু সংগ্রামের কোনও বিকল্প নেই। কাকাবাবুর জীবন থেকে এই শিক্ষা আমাদের নিতে হবে।’’
বিভিন্ন শক্তিকে একজোট করার প্রশ্নে বামপন্থীদের ভূমিকা মনে করিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, ‘‘বিরোধীরা একসঙ্গে বসেছেন এই প্রথম? যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রক্ষার জন্য জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বিরোধীরা বসেননি? আজকেও তা করতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটের পর বামপন্থীদের বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে প্রচার শুরু হলো সিপিআই(এম)’কে আক্রমণের কেন্দ্রে রেখে। অথচ সিপিআই(এম)’র কান্নুর পার্টি কংগ্রেসেই বলা হয়েছিল যে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার দেশের বুনিয়াদি কাঠামো ভেঙে দিচ্ছে। সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে দিচ্ছে। গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, সামাজিক ন্যায়ের
সেলিম বলেছেন, কাকাবাবুকে আমরা স্মরণ করি কারণ জোতদার জমিদারদের, সাম্রাজ্যবাদীদের, লুটেরাদের তিনি চিনিয়েছেন, কলম ধরেছেন। বামপন্থীরা চিনিয়ে দেয় প্রশ্ন তোলেই বলে ‘লাল হটানোর’ স্লোগান তোলে দক্ষিণপন্থা। তার বিরুদ্ধে লড়াই জারি আছে, থাকবেও।
Comments :0