FARMER DISTRESS

মাঠে আলুর দর ৫ টাকা, হাহাকার চাষিদের

রাজ্য জেলা

FARMER DISTRESS POTATO FARMER WEST BENGAL AGRARIAN CRISIS BENGALI NEWS

শঙ্কর ঘোষাল: বর্ধমান 
 

বর্ধমানের মাঠে আলু এখন কৃষককে মাত্র ৫ টাকা কেজি দরে বিকোতে হচ্ছে। আলুচাষিদের মধ্যে কার্যত হাহাকার পড়ে গিয়েছে এই ঘটনায়। মাথায় হাত দিয়ে তাঁরা বলছেন, ‘‘জমি তো নয়, যেন যম।’’ কৃষকদের এই দুর্দিনে পাশে নেই সরকার। নবান্নের মরশুমেও তাই চাষির মুখে হাসি নেই। মাঠভর্তি আলু, কিন্তু সেই আলু তুলতে কৃষকের আগ্রহও নেই। আগাম আলুর বাজারের দর দেখে কৃষকের বুক দুরু দুরু কাঁপছে। আলু তুললেই এখন চরম লোকসান। 


এক বিঘা আলু চাষ করতে এখন ২৮-৩০ হাজার টাকা খরচ। কিন্তু মাঠে আলুর বর্তমান দাম এক কেজি মাত্র ৫ থেকে ৬ টাকা। কৃষকের বিঘা প্রতি লোকসান ৭-৮ হাজার টাকা। কাঁচা আলুরই এই অবস্থা, কিন্তু যে আলু পেকে যাওয়ার পর হিমঘরে রাখা হবে, তার দাম কত হবে? নিমো-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সলদা গ্রামের কৃষক মইনুল হক বলছেন, আলু গাছ যত বাড়ছে, এখন থেকে কৃষকের বুক তত কাঁপছে। কৃষক আলুর দাম পাবেন তো? কৃষকরা জানিয়েছেন, মশাগ্রামে বুধবার ৫০ কেজি কাঁচা আলুর দাম ছিল ২৭০-২৯০ টাকা। এই দামে আলু বিক্রি হতে শুরু হলে কৃষকের প্রচুর লোকসান হবে। কিন্তু সে কথা শুনবে কে? দিদি-মোদী দু’জনেই কৃষকের তিন গুন, চার গুন লাভের গপ্পো আগেই শুনিয়েছেন। কিন্তু তার সঙ্গে যে বাস্তবের বিস্তর ফারাক, সেকথা কাকে বোঝাবেন কৃষকরা? 


ধানের পরে আলুতেও ব্যাপক লোকসানের কথা ভেবে কৃষকরা আশঙ্কিত। জামালপুরের চকদিঘী-আটপাড়া মোকামে বর্তমানে আলুর দর ৫০ কেজি ২৫০-২৮০ টাকা। অথচ বাজারে আলুর দর কিলো প্রতি ১২-১৪ টাকা। ফড়েরাজ চলছে, এমন অভিযোগ করেছেন সাতগড়িয়ার শেখ ইসমাইল হক, অমল ঘোষ, বিভাষ মুদিরা। আলুর দামের এই করুণ অবস্থার জন্য কৃষকরা সরকারকেই কাঠগড়াই তুলেছেন। জামালপুরের কৃষক শেখ রহিম বলেছেন, সারের দাম আগুন, বীজও অগ্নিমূল্য, কালোবাজারী হচ্ছে ইউরিয়া। কৃষক কীভাবে চাষ করবেন? আলু বিক্রি হচ্ছে ৪-৫ টাকা কেজি দরে, অন্যদিকে পাঞ্জাবের আলুর বীজ বিক্রি হয়েছে ৩২ টাকা কেজি দামে। সারের দাম বেড়েছে বস্তাপিছু ৭০০ টাকা, আলুর মতোই ৬০ কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৭২০ টাকায়। সরকার ঘুমিয়ে আছে। কোথাও ধান কেনার উদ্যোগ নেই। মুখ্যমন্ত্রী সর্বত্র মেলা, উৎসব নিয়ে ব্যস্ত। 


ফসলের দাম না থাকায় চাষীর মুখে হাসি নেই। এই সময়ে পুরোদমে খাওয়ার আলু তোলার কাজ চলে। কিন্তু দাম এতটাই নিচে যে, কৃষক জমি থেকে আলু তুলতে সাহস পাচ্ছেন না। জামালপুরের চকদিঘীর কৃষক অপূর্ব দাস বলেছেন, কৃষক ৭ বছর ধরে ফসলের দাম পাচ্ছেন না। ২০১৫-১৮ সালে এই সময়ে ধান, আলুর দাম না পেয়ে কৃষক একের পর এক আত্মঘাতী হয়েছেন। মাঠে সবজির দামও ক্রমশ তলানিতে। ফসলের লাভজনক দাম না পেয়ে দেনার জ্বালায় শুধুমাত্র বর্ধমান জেলাতেই গত এক দশকে ১৭৮ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। শুধু আলু নয়। ধান বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা কেজি, অথচ বাজারে চালের দাম কেজি প্রতি ৪০-৫০ টাকা। মিল মালিকদের পেট ভরছে, কৃষক ঋণের দায়ে ডুবে মরছেন।


তিনটি কৃষি আইন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার দুর্বার কৃষক আন্দোলনের চাপে। কিন্তু কর্পোরেটের স্বার্থেই কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই  সেই আইনের ফাঁদে ফেলতে কৃষককে ঘুরিয়ে নাক দেখাচ্ছে। তা কেমন? সারা ভারত কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার বলেছেন, চাষে বারবার লোকসানে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কৃষককে, বাধ্য হয়ে যাতে তাঁরা কর্পোরেটের হাতে জমি তুলে দেন। সেই চেষ্টাই করছে তৃণমূল ও বিজেপি সরকার। সারের দাম আগুন, কোনও ভরতুকি নেই। বিদ্যুতেও তাই। কীটনাশক, বীজ, ডিজেলের দাম এতটাই বাড়তি যে, কৃষকের উৎপাদন খরচ অনেকটাই বেড়েছে। 

কিন্তু সেই তুলনায় কৃষকের ফসলের দাম একেবারে তলানিতে। উৎপাদক সংস্থা সব কিছুর দাম নিজেরা ঠিক করতে পারে, একমাত্র কৃষক পারেন না। তাঁকে বাজারের উপরেই নির্ভরশীল থাকতে হয়। ফলে কৃষক তাঁর ফসলের লাভজনক দাম পান না। ঋণগ্রস্ত কৃষক বারবার চাষে লোকসানের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন। তাই কৃষকের স্বার্থেই দিল্লি সহ ৬০০টি জেলাতে ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে ট্রাক্টর র্যা লির ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মঞ্চ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি, কৃষকের ফসলের লাভজনক দাম চাই। 


এদিন অমল হালদার বলেন, এই মুহূর্তে শুধু আলু নয়, সবজিরও দাম নেই। বনগাঁতে এক টাকাতে ফুলকপি, দেড় টাকা কেজি বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে। বেগুন সহ সবজির দামে সর্বত্র একই চিত্র। সরকার ধান কিনছে না সেইভাবে। ফলে ফড়েদের ফাঁদেই পড়ছেন অভাবী কৃষকরা। কঠিন যন্ত্রণার জীবনে কৃষকের পাশে দাঁড়াতেই ট্রাক্টর মিছিল হচ্ছে। 
 

 

Comments :0

Login to leave a comment