Right to Education Forum

হাওড়ায় গঠিত 'রাইট টু এডুকেশন ফোরাম'

জেলা

Right to Education Forum


সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা রক্ষার লড়াইকে শক্তিশালী করতে একজোট হল শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত হাওড়ার সমস্ত গণ সংগঠন। তৈরি হল রাইট টু এডুকেশন ফোরামের হাওড়া জেলা কমিটি।
বৃহস্পতিবার হাওড়া যোগেশ চন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে কনভেনশনে মিলিত হয়েছিল এবিটিএ, এবিপিটিএ, এসএফআই, ওয়েবকুটা, পশ্চিমবঙ্গ সাধারণের গ্রন্থাগার কর্মী সমিতি, বঙ্গীয় সাক্ষরতা প্রসার সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ, মানব সম্পদ উন্নয়ন সহায়ক কর্মী ইউনিয়ন, আইসিডিএস কর্মী সমিতি, মিড-ডে মিল কর্মী ইউনিয়ন, পশ্চিমবঙ্গ কলেজ শিক্ষা কর্মী ইউনিয়নের মতো শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত গণসংগঠন।

সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে কর্পোরেট আগ্রাসনের হাত থেকে বাঁচাতে লড়াইয়ের ভিত তৈরি করতেই আয়োজিত হয়েছিল এদিনের কনভেনশন। সমস্ত শিক্ষা সংগঠন থেকে ৩০ জনকে নিয়ে গঠিত হল রাইট টু এডুকেশন ফোরামের হাওড়া জেলা কমিটি। জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ বাতিলের দাবিতে, শিক্ষায় নৈরাজ্য ও দুর্নীতি বন্ধ করার দাবিতে, স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে, শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি উচ্চারিত হল কনভেনশনে। কনভেনশনে ২১৫ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপিকা নন্দিনী মুখার্জি বলেন, কর্পোরেট বাণিজ্যের জন্য শিক্ষাকে উন্মুক্ত করতেই জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। আবার এরাজ্যেও জাতীয় শিক্ষানীতি সংক্রান্ত কমিটিতে কোনো শিক্ষকতার কাজে ধারাবাহিকভাবে যুক্ত এমন কোনো মানুষ নেই। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার কথা জাতীয় শিক্ষানীতিতে ঘোষিত হলেও আদানি-আম্বানিদের ক্লাস্টার করে শিক্ষাকে পণ্যের মত বাণিজ্যিকীকরণ করাটাই মূল লক্ষ্য। করোনার সময় অনলাইন এডুকেশন ভারতে ব্যর্থ। বর্তমানে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে তথ্য পাঠ করা হচ্ছে। দেব-দেবীর সঙ্গে আরএসএস নেতার ছবি দেখা গেছে আইআইইএসটি'র মত কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। উচ্চশিক্ষাকেও ভাগ করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।


শিক্ষামূলক, গবেষণামূলক ডিগ্রি প্রতিষ্ঠানের নামে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভাজন চলছে। আবার কমন এন্ট্রান্স টেস্টের নামে ভয়ংকর বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে শিশুদের। আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থাকে রক্ষা করার লড়াইতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাইট টু এডুকেশন ফোরামের লড়াইয়ের অভিমুখ হল সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচানোর লড়াই। 
শিক্ষক প্রতিনিধি বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে শিক্ষকদের বেতনের পর বেতনের অংশ দিতে তৃণমূল দুর্বৃত্তরা বাধ্য করতো একটা সময়। আজ অবশ্য ওরা পিছু হটেছে। নিয়োগ দুর্নীতির কথাও উঠে আসে আলোচনায়। কর্পোরেট স্বার্থে শিক্ষার ঢালাও বেসরকারীকরণ চলছে সন্তর্পনে।

ছাত্র আন্দোলনের অভিজ্ঞতায় উঠে আসে কিভাবে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য চালিয়ে গণতন্ত্রের উপর আঘাত নেমে এসেছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা নীতির মধ্যে এখন আর কোন তফাৎ পাওয়া যাচ্ছে না। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী প্রবণতার বদলে শিশুমনে কুসংস্কার ঢুকিয়ে দিতেও আরএসএস চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানালেন বিজ্ঞান আন্দোলনের নেতৃত্ব। আবার নিরক্ষরতা দূর করতে যে কর্মসূচি সরকারিভাবে নেওয়া হচ্ছিল তা বর্তমান তৃণমূল সরকারের আমলে স্তব্ধ। নিয়োগ না করে সাধারণ গ্রন্থাগারকে কিভাবে তৃণমূল সরকার ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে তার কথাও উঠে এলো আলোচনাতে। আবার সর্বশিক্ষা অভিযানের নাম পরিবর্তন হলেও এই কাজে যুক্ত পার্শ্ব শিক্ষক এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষকদের চরম বৈষম্যের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠে আসে।

শিশু পুষ্টির দিক নিয়ে ঢালাও প্রচার করলেও সরকারি উদাসীনতার কারণেই শিশু পুষ্টির কাজ অবহেলিত। বরং এই কাজে নিযুক্ত কর্মীদের বঞ্চনা এবং লাঞ্ছনার মুখোমুখি ফেলে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। ভোটের দিকে তাকিয়ে সবকিছু ঘোষণা হয় বলে জানান অঙ্গনওয়ারি কর্মী প্রতিনিধি। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার কিভাবে শিক্ষাক্ষেত্রকে সরকারি ব্যবস্থার হাত থেকে ধীরে ধীরে বেসরকারিকরণের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন তা তুলে ধরেন আলোচকরা।
কনভেনশন পরিচালনা করেন অনিমা মুখার্জি, রতন কোলে, কালিকৃষ্ণ জাশু, মহম্মদ আলাউদ্দিন, অমিত পাল, সুশান্ত দাস, দিলীপ বারিক, সৌরভ মণ্ডল, রামপ্রসাদ ধাড়াকে নিয়ে গঠিত সভাপতি মণ্ডলী। কনভেনশন থেকে সর্বস্তরে জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ এর কর্পোরেট বাণিজ্যের নীতি সম্পর্কে সচেতন করে লড়াই গড়ে তোলার আহ্বান জানান ওমপ্রকাশ পাণ্ডে।

কনভেনশন থেকে সর্বসম্মতিক্রমে রাইট টু এডুকেশন ফোরাম এর হাওড়া জেলা কমিটি গঠিত হয়। ওমপ্রকাশ পাণ্ডে ও পার্থ ঘোষকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৩০ জনের রাইট টু এডুকেশন ফোরাম এর হাওড়া জেলা কমিটি গঠিত হয় সর্বসম্মতিক্রমে।

Comments :0

Login to leave a comment