Draft Voters List

খসড়ায় বাদ পড়া অধিকাংশই অবাঙালি, মতুয়া, বস্তিবাসী, পরিযায়ী শ্রমিক

রাজ্য

বাদের তালিকায় নাম থাকা কলকাতার ভোটারদের পদবি বিশ্লেষণ করেও খোঁজ মেলেনি ‘ঘুষপেটিয়াদের’!
গত ১৬ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর ৯৮ লক্ষ নাম বাদ পড়ার পর অনুপ্রবেশকারীদের খোঁজ করার জন্য সমীক্ষা করেছিল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সেই সমীক্ষায় দেখা যায়, কলকাতার সংখ্যালঘু প্রধান বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে সংখ্যালঘুদের হার যথেষ্ট কম। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের সংখ্যালঘু প্রধান জেলা মালদহ, মুর্শিদাবাদেও ভোটার তালিকায় নাম না থাকা কমিশনের ভাষায় ‘আন-ম্যাপড’ ভোটারের হার রাজ্যের বাকি অংশের তুলনায় খুবই নগণ্য।
কলকাতার বিধানসভা কেন্দ্রগুলির মধ্যে মৃত ভোটারদের বাইরে বাদ পড়া ভোটারদের পদবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বেশির ভাগ পদবিই অবাঙালির। কলকাতায় বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে দাস পদবি মিলেছে ১৬.৭৩ শতাংশ। সিং পদবির বাদ পড়া ভোটারদের হার ১২.১১ শতাংশ, সাউ পদবির বাদ পড়েছে ৭.৮২ শতাংশ, যাদব ও রাম পদবির ভোটারদের বাদ পড়ার হার যথাক্রমে ৪.৮৪ ও ৪.২৩ শতাংশ। অন্যদিকে আলম পদবি ৩.১২ শতাংশ, খান ৩.৭৫ শতাংশ। বাংলাভাষী পদবির বাদ পড়া ভোটারের মধ্যে দে ২.৪৯ শতাংশ, ঘোষ ৩.৮১ শতাংশ। 
সমীক্ষক দলের তরুণ গবেষক অশীন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘ বাদ পড়া ভোটারদের পদবি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, এঁরা অধিকাংশই হয় পাকাপাকি ভাবে উঠে গেছে। অথবা বিএলও গিয়ে তাঁদের দেখা পায়নি। এঁরা বেশির ভাগই পুরুষ। পরিযায়ী হিসাবে এক জায়গা থেকে অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে খোঁজ মেলেনি।’’ বিহারের ক্ষেত্রে যেমন বাদ পড়া ভোটারদের সিংহভাগই ছিলেন মহিলা। এরাজ্যে, বিশেষত কলকাতা শহরে বাদ পড়া ভোটারদের হার নিশ্চিত ভাবেই পুরুষ হবেন বলে ধারণা তৈরি হয়েছে সমীক্ষক দলের। 
রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি মুসলমান ভোটারের অস্তিত্ব আছে মালদহের সুজাপুর ও মুর্শিদাবাদের ডোমকল বিধানসভা কেন্দ্রে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই দুই বিধানসভা কেন্দ্রে গোটা রাজ্যের মধ্যে ‘আন-ম্যাপড’ ভোটারের সংখ্যা সব থেকে কম। শতাংশের বিচারে ডোমকল কেন্দ্রে মাত্র ০.২৫ শতাংশ ভোটারের নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ গেছে। সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে ১ শতাংশের কম। 
কিন্তু কলকাতা ও মতুয়া প্রধান বিধানসভাগুলির ভোটার তালিকা থেকেই সব থেকে বেশি নাম বাদ পড়েছে। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের ওপর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সবর ইনস্টিটিউট’ নাম বাদ পড়া ভোটারদের তথ্য নিয়ে একটি সমীক্ষায় নামে। সেই সমীক্ষাতে উঠে এসেছে, কলকাতা বন্দর, রাসবিহারী, জোড়াসাঁকো, কসবা, মেটিয়াব্রুজ, ভবানীপুর, চৌরঙ্গি, বালীগঞ্জ, এন্টালি, কাশীপুর-বেলগাছিয়ার মতো বিধানসভা এলাকাগুলিতে বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে সিংহভাগই অবাঙালি, পরিযায়ী ও বস্তিবাসী মানুষ। এখন কলকাতার বাদ পড়া ভোটারদের নামের পদবি বিশ্লেষণ করে সমীক্ষক দল আরও নিশ্চিত হয়েছে, বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে মুসলমানের পরিবর্তে অধিকাংশই অবাঙালি হিন্দু পদবির ভোটার। 
কলকাতার সংখ্যালঘু নিবিড় বিধানসভা কেন্দ্রের বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যেও মুসলমানদের উপস্থিতি খুবই কম। আবার মতুয়া প্রধান উত্তর ২৪ পরগনা ও নদীয়ার বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে ব্যাপক হারে মানুষের ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু প্রধান মালদহ জেলার সুজাপুর, রতুয়ার মতো বিধানসভা কেন্দ্র, মুর্শিদাবাদের রেজিনগর, হরিহরপাড়া, সুতি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মগরাহাট পূর্ব, মগরাহাট পশ্চিম, মন্দিরবাজার, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি উত্তর, ময়না বিধানসভা কেন্দ্রে বাদ পড়া ভোটারের সংখ্যা খুব কম।
কলকাতা বন্দর বিধানসভা কেন্দ্রে বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর হার ৩৮ শতাংশ এবং অমুসলমান ভোটারদের হার ৬১ শতাংশের ওপর। বহু ভাষা ও ধর্মের উপস্থিতি উত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো বিধানসভা কেন্দ্রে। সেখানে সমীক্ষা করে দেখা গেছে, বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে সংখ্যালঘুদের হার ২২.৩৯ শতাংশ। হিন্দি ভাষী প্রধান জোড়াসাঁকো কেন্দ্রে বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে  হার অমুসলমান ভোটারদের হার ৭৭ শতাংশ। কলকাতার সংখ্যালঘু নিবিড় বিধানসভার মধ্যে একমাত্র বাদ পড়ার হারে এগিয়ে মেটিয়াব্রুজ কেন্দ্র। ৫৮ শতাংশ বাদ পড়ার তালিকার মধ্যে ৫৮ শতাংশই মুসলমান। আবার কলকাতার উপকণ্ঠে রাজারহাট-নিউটাউন বিধানসভা কেন্দ্রে এসআইআর শুরু হওয়ার আগে মিডিয়া মারফত প্রচুর অনুপ্রবেশকারীর হদিশ পায় হিন্দুত্ববাদীরা। সেই নয়া উপনগরী নিউটাউনের বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে মুসলমান কতজন? অমুসলমান ভোটারের বাদ পড়ার হার যেখানে প্রায় ৭২ শতাংশ, সেই নিউটাউনে সংখ্যালঘু বাদ পড়ার হার ২৮ শতাংশ। 
ঠিক তার বিপরীত চিত্র মতুয়া প্রধান বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে ব্যাপক সংখ্যায় মৃত ভোটার ছাড়াই নাম বাদ গেছে বহু মানুষের। বিধানসভা ভিত্তিক সমীক্ষা করার সময় সবর ইন্সটিটিউটের গবেষকদের বক্তব্য, ‘‘এসআইআর শুরু হওয়ার আগে যেভাবে রাজনৈতিক দলের নেতারা খোলাখুলি অনুপ্রবেশকারীদের নাম বাদ যাবে। ২ কোটি মানুষের নাম বাদ যাবে বলে সংখ্যালঘুদের নিশানা করছিলেন, বাস্তবে তার সঙ্গে কোনো মিল নেই। বাদ পড়া ভোটারদের এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন অনুপ্রবেশকারী বলতে পারেননি। কমিশনের হিসাবে বাদ পড়া ভোটাররা হলেন মৃত, অনুপস্থিত ও পাকাপাকি ভাবে স্থানান্তরিত।

Comments :0

Login to leave a comment