Md Salim

গ্রাম জাগছে, তৃণমূলের ভয় বাড়ছে

রাজ্য

অনিল কুণ্ডু: সংগ্রামপুর
 

সারা বাংলা জুড়ে গ্রাম জাগছে। গ্রাম যত জাগছে তৃণমূলের ভয় তত বাড়ছে। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে। পুলিশ চোর ধরে না, চোরকে পাহারা দেয়। মানুষের লড়াই চলবে, লুটের টাকা গরিবকে ফিরিয়ে দিতে হবে। রবিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঢোলা এবং সংগ্রামপুরের দুটি জনসভায় এই আহ্বান জানিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
তিনি বলেন, তৃণমূলের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। তৃণমূল, বিজেপি’র বিরুদ্ধে যারা লড়তে চায় সে কংগ্রেস হোক আর আইএসএফ হোক, সবাই  মিলে আখ মাড়াইয়ের মতো করে দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরাদের পিষতে হবে। সব নিলাম করে গরিবের টাকা আমরা ফেরত দেব। লুটেরারা পুলিশ নিয়ে ঘুরছে। গ্রাম যতো জাগছে চোরেদের ধুকপুকুনি বাড়ছে। মানুষ এককাট্টা হলে সব হিসাব বুঝে নেব। 
মহম্মদ সেলিম বলেন, লাল ঝান্ডা দুর্বল হয়নি। মানুষকে নানান নাম করে আলাদা করেছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা লড়ছি। সাম্প্রদায়িকতার সুড়সুড়ি দিচ্ছে। হিন্দু, মুসলিম, জাতপাত, উচ্চবর্ণ, মতুয়া সবাইকে লাল ঝান্ডা ফুলের মালা গাঁথার মতো এক সুতোয় বাঁধছে। ঘাস ফুল আর পদ্মফুল এই দুই ফুল মিলে বাংলার মানুষকে এপ্রিল ফুল বানিয়েছে। এর বিরুদ্ধে গ্রাম, শহর জাগছে। ইনসাফের জন্য দুর্নীতির বিরুদ্ধে বামপন্থীরা লড়াই করছে। 
বিজেপি’র প্রচারকেও আক্রমণ করেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, ভাইপোকে জেরায় ডাকা হয়েছে। তা কি বিজেপি’র জন্য? মোটেই না। ২০১৪ থেকে দেশের সরকারে বিজেপি। রাজ্য একের পর এক দুর্নীতিতে জেরবার মানুষ। কারও শাস্তি হয়নি। ভাইপোকে জেরায় ডাকতে বলেছে হাইকোর্ট। পুলিশের ভূমিকার কড়া নিন্দা করে তিনি বলেন, উর্দি আছে, থানা আছে, বন্দুক আছে। কিন্তু চোর ধরে না, ধর্ষক ধরে না। উলটে তাদের পাহারা দেয়। তিনি বলেন, প্রতিবাদ করলেই মিথ্যা মামলা, জেল, জরিমানা হয়েছে। লাল ঝান্ডা তোলা যাবে না। লাল ঝান্ডার দপ্তর খোলা যাবে না। কিন্তু সব কিছুরই শেষ আছে। মানুষ লাল ঝান্ডা তুলে নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, রাজ্যে তৃণমূল সত্যকে মিথ্যা, মিথ্যাকে সত্য বলে চালাচ্ছে। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যাঙ্ক, বিমা, পোস্ট অফিস, রেল লাইন, রেল স্টেশন সব বিক্রি করছে। আর রাজ্যে বালি, খনি খাদান সব লুট করছে। তিনি বলেন, পরিবর্তনের নামে চোর, লুটেরা, ধর্ষক, খুনি তাদের পোয়াবারো হলো। তৃণমূলে থেকে ফুলে ফেঁপে ওঠার পর আবার বিজেপি-তে। এদের তৃণমূলে থাকলে পোয়াবারো আবার বিজেপিতে গেলে পোয়াবারো। এখানে পশ্চিবাংলায় সাব কন্ট্রাক্ট দিয়েছিল। মমতাকে আরএসএস দুর্গা বলে সাজিয়েছিল। এখন গোটা বাংলা জুড়ে লাল ঝান্ডা পতপত করে উড়ছে। লাল ঝান্ডা চিটফান্ডের টাকায় কেনা কোনও কাপড়ের টুকরো নয়। লড়াই করে কলিজার রক্ত দিয়ে লাল ঝান্ডা তৈরি হয়েছে। 
পুলিশের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুলিশের বেতন, পোশাক, বন্দুক, লাঠি সব গরিব মেহনতি মানুষের ট্যাক্সের টাকায় হয়। কোনও পিসি, ভাইপোর টাকায় হয় না। আলিপুরে টেবিলের তলায় লুকোতে হয়েছে। কালিয়াগঞ্জে কালিয়াচকে লুকোতে হয়েছে। আর কতদিন লুকিয়ে থাকবেন? এবার বাইরে আসুন। আনিস খানকে পুলিশ খুন করেছে, আজ পর্যন্ত তদন্ত করেনি। আনিস খুনের যেমন আমরা বিচার চাই তেমনি পুলিশ খুন হলে আমরা বলছি তদন্ত হোক। 
মহম্মদ সেলিম আরও বলেন, মমতা ব্যানার্জির সরকার দুর্নীতির নামে চিট ফান্ডের নামে সবার টাকা টেনেছে। সব টাকা উদ্ধার করতে হবে। জবকার্ডের টাকা লুট হয়েছে। আবাস যোজনার টাকা লুট হয়েছে। বিধবা ভাতা থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা লুট হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যে বকেয়া টাকা পাওনার বিষয়ে চাইতে আমরাও যাব। রাজ্যের হকের পাওনা বুঝে নিতে চাই আমরা। কিন্ত তার আগে হিসাব চাই। কত পেলে কত খেলে হিসাব দাও। 
শমীক লাহিড়ী বলেন, পশ্চিমবঙ্গের লুটেরাদের আগে হটাতে চাই। তারপর দিল্লির লুটেরাদের হটাতে চাই। চাকরি চুরি, পাথর, কয়লা চুরি, বালি চুরি সব চুরির সঙ্গে যুক্ত তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গেলে ধোয়া তুলসি পাতা হয়ে যাবে না। লুট করে এক পার্টি থেকে আর এক পার্টিতে যাচ্ছে। এই দুর্নীতিগ্রস্ত চোর, লুটেরাদের বিরুদ্ধে লাল ঝান্ডা লড়ছে। দিদি এবং মোদীর লুটের বিরুদ্ধে এককাট্টা লড়াইকে ভাঙতে ধর্মের ভাগাভাগি করছে। কেরোসিনের দাম একশো টাকা পার করেছে। গ্যাসের দাম পার করেছে হাজার টাকা। ধর্মের পরিচয়ে হিন্দু বলে কারও জন্য কেরোসিন বা গ্যাসের দাম কমে না। আসলে লুট হচ্ছে। গরিব সাধারণ মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। দেশে বা এ রাজ্যে হিন্দু বা মুসলিম বলা হয় লুটের বিরুদ্ধে লড়াইকে ভাঙার জন্য। তিনি বলেন,গরিব মানুষের টাকা লুট হবে আর দলবদল করে বেঁচে যাবে, তা চলতে পারে না। দিদি আর মোদী, দু’জনের লুটের বিরুদ্ধেই এই লড়াই চলবে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। 
বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, আদালতের লড়াই আর রাস্তার লড়াই দুটো এক হলে ওরা পালিয়ে বাঁচবে না। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অধিকার চাই। অধিকার রক্ষার এ লড়াইয়ে সকলকে জোটবদ্ধ হয়ে শামিল হতে হবে। তৃণমূল পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে ভেঙে দুর্বল করেছে। মানুষের অধিকার ভেঙে দিয়েছে। মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের জন্য লাল ঝান্ডা বেছে নিচ্ছেন মানুষ। তিনি বলেন, বগটুই, এগরায় পুলিশকে দেখলে মানুষ তাড়া করছে। গ্রামে গ্রামে মানুষ ক্ষেপে গেছে। চোর, দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় মানুষ প্রতিবাদে মুখর হচ্ছে। আমরা শিক্ষা চাই, আমরা রোজগার চাই। আমরা অধিকার চাই। সেই লড়াইয়ে বাংলার মানুষ জাগছেন। 
ঢোলার সমাবেশে মহম্মদ সেলিম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক শমীক লাহিড়ী, সাংসদ বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, প্রতীক ঊর রহমান, আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জি, মোনালিসা সিনহা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিআই(এম) নেতা কান্তি গাঙ্গুলি। এদিন তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সংশ্রব ত্যাগ করে তৃণমূলের নেতা, কর্মীসহ দেড় হাজার পরিবার সিপিআই(এম)’র সমাবেশে যোগ দেন। 
এদিন ঢোলার সমাবেশ থেকে এক প্রতিনিধিদল ঢোলাহাট থানায় ডেপুটেশন দিতে যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করা, বিরোধীদের উপর মিথ্যা মামলা পুলিশি জুলুম বন্ধসহ ৮ দফা দাবিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে দাবিসনদ পেশ করে তাঁরা আলোচনা করেন। 
এদিন সংগ্রামপুরের জনসভায় মহম্মদ সেলিম, শমীক লাহিড়ী, বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, প্রতীক ঊর রহমান, সব্যসাচী চ্যাটার্জি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন চন্দনা ঘোষদস্তিদার, শাহনওয়াজ মোকামী। সভাপতিত্ব করেন দীপক দাশ। 
 

Comments :0

Login to leave a comment