Md Salim Bangladesh

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা অটুট থাকুক বাংলাদেশে: বললেন সেলিম

রাজ্য

—  মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শাহবাগ আন্দোলনের অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাংলাদেশের বুকে হারিয়ে যাবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রবিবার কোচবিহারে সিপিআই(এম)’র জেলা দপ্তরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, মানুষ যখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন, মিছিল অবরোধ করছেন, তখন পুলিশ মিলিটারি নামিয়ে গুলি দিয়ে, ট্যাঙ্ক দিয়ে তাদের মোকাবিলা করা উচিত নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনও নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না। আমরা চাই, বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা থাকুক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেন হারিয়ে না যায় বাংলাদেশ থেকে, এটা আমাদের দেশের জন্য এবং এই বাংলার জন্যও জরুরি।

এদিনই কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে যা বলার ভারত সরকার বলবে, আমি বলতে পারি না। কিন্তু বাংলাদেশে যদি আপনাদের কোনও পরিজন থাকে, কেউ পড়াশোনা বা চিকিৎসা করতে গিয়ে ফিরতে না পারে, যদি কোনও সহযোগিতা লাগে, আমরা দেবো। অসহায় মানুষ বাংলার দরজায় যদি খটখট করে, তবে আমরা তাদের আশ্রয় দেবো। এটা রাষ্ট্রসঙ্ঘের ঘোষণা আছে, কেউ উদ্বাস্তু হয়ে গেলে পার্শ্ববর্তী এলাকা তাকে আশ্রয় দেবে। বাংলাদেশ নিয়ে আমরা যেন কোনও প্ররোচনায় পা না দিই।

কিন্তু অতীতে মমতা ব্যানার্জিও বাংলাদেশ নিয়ে উসকানিমূলক ও প্ররোচনামূলক মন্তব্য করেছেন এরাজ্যের রাজনীতিতে ফায়দা তুলতে। আর বিজেপি ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের এবারের ঘটনা নিয়ে এরাজ্যে উসকানিমূলক প্রচার শুরু করেছে। মহম্মদ সেলিম এই প্রসঙ্গে বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আশ্রয় দেওয়ার কথা বলছেন? এই দেশের ভিতরেই আসাম থেকে যখন বাঙালি বিতাড়ন করা হচ্ছিল সেই সময় মমতা ব্যানার্জির সরকার কোচবিহার-আসাম সীমান্তে এবং আলিপুরদুয়ার-আসাম সীমান্তে পুলিশকে পাহারায় বসিয়েছিল বিতাড়িতদের বাধা দিতে। এরও আগে মমতা ব্যানার্জি বিরোধী থাকাকালীন দার্জিলিঙের পাহাড়ে যখন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন হয়েছিল তখন যুব কংগ্রেসের নেত্রী থাকাকালীন তিনি শিলিগুড়িতে বাঙালি-নেপালি বিভাজন করতে চেয়েছিলেন, সমতল থেকে কোনও পণ্যসামগ্রী পাহাড়ে পাঠানোর ক্ষেত্রে বাধা দিয়েছিলেন। বিজেপি ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি করে, মমতা ব্যানার্জিও পেছন থেকে আরএসএস’র রাজনীতিটাকেই চালানোর চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশের মানুষই ঠিক করবেন বাংলাদেশের রাজনীতি, তারাই সমাধান করবেন সেখানকার সমস্যার। এখান থেকে ওখানে বা ওখান থেকে এখানে প্ররোচনা দিতে কেউ কেউ ওত পেতে থাকে, সেটা কাম্য নয়। 

সেলিম বলেন, আমাদের একটাই বক্তব্য, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শাহবাগ আন্দোলনের চেতনা যেন নষ্ট না হয়। আমাদের প্রতিবেশী দেশে যদি হিংসা ছড়ায়, যদি আবার সেনা শাসন হয়, গণতন্ত্র যদি না থাকে, ধর্মনিরপেক্ষতা যদি না থাকে, তাহলে তার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ে। একসময় বাংলাদেশের এই শাহবাগে রাজাকার বাহিনী যারা পাকিস্তানের সেনা শাসনের পক্ষে তাদের শাস্তির দাবিতে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। সেই চেতনা যেন হারিয়ে না যায়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক, যে মৃত্যু মিছিল সেখানে ঘটেছে তার জন্য আমরা গভীর শোকাহত এবং আমাদের সবার শোকজ্ঞাপন করা দরকার। 

সংরক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের ব্যবস্থা আর ভারতের সংরক্ষণের ব্যবস্থা যে এক নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়ে সেলিম বলেছেন, ওখানকার তরুণ প্রজন্ম সংরক্ষণ ব্যবস্থার সংস্কার চেয়ে রাস্তায় নেমেছেন, সংরক্ষণ বিলুপ্তির কথা বলছেন না। আদিবাসী, মহিলা, সংখ্যালঘু কোনও ক্ষেত্রেই সংরক্ষণ বিলুপ্ত করার কথা বলছেন না তারা। সুতরাং এই আন্দোলনকে সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু রাজনীতি হিসাবে দেখানো অন্যায় হবে। তবে যারা ভারত বিরোধী, যারা এক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অন্য সম্প্রদায়কে লাগানোর চেষ্টা করে থাকে, তারা এই সমস্ত সুযোগকে কাজে লাগায়। ভারতেও যেমন আরএসএস প্রভাবিত বিভিন্ন সংগঠন বলার চেষ্টা করে যে তফসিলি জাতি ও আদিবাসী মানুষ কেন সংরক্ষণের সুযোগ পাবেন!  কিন্তু এদের সংরক্ষণের পিছনে যে একটি ঐতিহাসিক কারণ আছে, সামাজিক অর্থনৈতিক কারণ রয়এছে, সেটা আড়াল করে। বাংলাদেশের সংরক্ষণের সাথে ভারতের সংরক্ষণ ব্যবস্থার তুলনা কোনোভাবেই করা যায় না।


 

Comments :0

Login to leave a comment