Md Salim

অধিকার ফিরে পেতে ভরসা লাল ঝান্ডাই: সেলিম

রাজ্য

স্বরূপ মুখার্জি: রানাঘাট

কৃষকদের বাঁচাতে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল হটাতে হবে, বিজেপি’কেও হারাতে হবে। লাল ঝান্ডাকে ফিরিয়ে কৃষকদের অধিকার রক্ষার আহবান জানিয়ে রবিবার রানাঘাটে কৃষক সমাবেশে একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কৃষকবিরোধী নীতি আর রাজ্য সরকারের চুরিতে কৃষির অবস্থা সঙ্গিন, কৃষকরা চরম বিপদে। বাংলার মাটিতে কৃষক সংগ্রামের ঐতিহ্যকে মনে রেখে লাল ঝান্ডা হাতেই কৃষকদের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। পঞ্চায়েতকে লুটেরামুক্ত করতে হবে। 
   সেলিম বলেছেন, কৃষিতে যুক্ত মানুষের সংখ্যা কমছে। কৃষকের ঘরের ছেলেমেয়েরা ক্রমশ শহরের দিকে চলে যাচ্ছে, ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছেন কাজের খোঁজে। কৃষকদের বাঁচাতে হলে কৃষকের জমিতে উৎপাদন বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে, ফসলের লাভজনক দাম নিশ্চিত করতে হবে, কৃষি ছাড়াও কাজের সংস্থান করতে হবে, গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নত করতে হবে। আর এইসব করতে হলে বামপন্থীদেরই শক্তিশালী করতে হবে। এরাজ্যে লাল ঝান্ডা হাতে উদ্বাস্তুরা, কৃষকরা খেতমজুররা অধিকার পেয়েছিলেন। এই লাল ঝান্ডা হটাতে তৃণমূল বিজেপি সব প্রতিক্রিয়াশীলকে একজোট করেছিল। মানুষের অধিকার কিন্তু বাঁচেনি, আজ মানুষের অধিকার ফিরে পেতে হলে লাল ঝান্ডাকে ফেরাতে হবে। ভবিষ্যৎ গড়তে হলে বামপন্থাই পথ। 
   শনিবার রানাঘাটে সারা ভারত কৃষকসভার নদীয়া জেলা ৩২তম সম্মেলন শুরু হয়েছে। এই উপলক্ষে রানাঘাটের রামনগর মোড়ে প্রকাশ্য কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, সভায় মহম্মদ সেলিম ছাড়াও ভাষণ দেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার, রাজ্য সভাপতি বিপ্লব মজুমদার, জেলা সম্পাদক মেঘলাল সেখ, জেলা সভাপতি চঞ্চল কর, অভ্যর্থনা কমিটির সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তী। প্রকাশ্য সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি অলকেশ দাস। তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক মানুষ সমাবেশে এসেছিলেন। মাঠ ছাড়িয়ে সমাবেশের ভিড় জাতীয় সড়কে চলে আসে।
সমাবেশে সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন এমনই খড়্গ হাতে দাঁড়িয়ে আছে যে গ্রামে কৃষকরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না, তৃণমূল নেতাদের থেকে কুপন নিয়ে এলে তবে সরকারি ব্যবস্থায় ফসল বিক্রি করতে পারবেন। রাজ্যে শিল্পকারখানা হচ্ছে না, সরকারি নিয়োগও হচ্ছে না, তাই কাজও পাচ্ছেন না। সব সিভিক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার প্রাপ্য দিয়ে নিয়োগ না করে ঠিকায় নিয়োগ করছে। রাজ্য পুলিশে সিভিক নিয়োগ করছে, কেন্দ্র সেনায় সিভিক নিয়োগ করতে চলেছে। প্রাপ্য বেতন দিতে পারে না, সিভিক পুলিশকে লাঠি দিয়ে মারতে পাঠাচ্ছে। হাইকোর্ট বলে দিয়েছে সিভিকের এমন ব্যবহার চলবে না। 
তিনি বলেন, স্কুল মাদ্রাসায় শিক্ষক নেই, বন্ধ হচ্ছে। নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি হচ্ছে। তৃণমূল যাঁরা করছেন তাঁরা পাঁচিল টপকাতে পারবেন তো? নিজের মোবাইল পুকুরে ফেলতে পারবেন তো? না হলে তৃণমূল করছেন কেন? এরাজ্যে কখনো এমন দুর্নীতি ভাবা যায়নি। কাক কাকের মাংস খায় না, কিন্তু দুর্নীতির ভাগ নিয়ে মারামারিতে তৃণমূল তৃণমূলকে খুন করছে। ইতিহাসে মৌর্য সাম্রাজ্যের কথা পড়েছেন, এরাজ্যে এখন চৌর্য সাম্রাজ্য চলছে।
বিজেপি’র হাত ধরে এর থেকে রেহাই মিলবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন সেলিম। তিনি বলেন, তৃণমূল বিজেপি’কে জব্দ করবে না, বিজেপি’ও তৃণমূলকে জব্দ করবে না। রাস্তা পারাপারের থেকেও দ্রুত এদল থেকে ওদলে পারাপার করে ওরা। গত দশ বছর ধরে এরাজ্যে তৃণমূল এবং বিজেপি বাংলার মানুষকে হিন্দু মুসলিমে ভাগাভাগি করছে। আসামে এইভাবে ভাগাভাগি করেছে। এখানে আদিবাসী, মতুয়া, বাঙালি অবাঙালি নানা কায়দায় ভাগের রাজনীতি করছে। যদি দুর্নীতি, দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে লড়তে হয়, যদি অধিকারের দাবিতে লড়তে হয় তবে শ্রমিক কৃষক খেতমজুর কর্মচারী ছাত্র যুব মহিলা সবাইকে একসঙ্গে লড়তে হবে সমস্ত লুটেরাদের বিরুদ্ধে। দেশভাগের পরে এই বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে লড়েছিল বলেই অধিকার অর্জন করতে পেরেছিল। এখন লাল ঝান্ডা হাতে লড়াই দেখে পুলিশ দিয়ে আক্রমণ করছে। কিন্তু লাঠিগুলি চালিয়ে আন্দোলন দমন করা যাবে না, যত মারবে মিছিল তত বাড়বে।  
রবিবারই রানাঘাটে শুরু হয়েছে সারা ভারত কৃষকসভার নদীয়া জেলা ৩২তম সম্মেলন। সম্মেলনস্থলের নাম দেওয়া  হয়েছে আশু ঘোষ নগর। মঞ্চের নামকরণ হয়েছে কমলেন্দু সান্যাল ও ননী মালাকার মঞ্চ। এদিন সম্মেলনের শুরুতে পতাকা উত্তোলন করেন জেলা সভাপতি চঞ্চল কর। শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন কৃষকসভার নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক কৃষক সভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদার। তিনি বলেন, রাজ্যের মানুষ এখন প্রতিরোধের মেজাজে। তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে, বিজেপি সম্পর্কে মানুষের মোহভঙ্গ ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে সব গ্রামে, সব  মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। সাম্প্রদায়িক বিজেপি’র বিভাজনের রাজনীতি ব্যর্থ করে, কর্পোরেট-সাম্প্রদায়িক আঁতাত চূর্ণ করতে চাই শ্রমিক-কৃষক ঐক্য। পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক বিজেপি ও লুটেরা তৃণমূলকে এক ইঞ্চিও জায়গা ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বিপ্লব মজুমদার বলেন, দেশব্যাপী কর্পোরেট লুটের বিরুদ্ধে শ্রমিক কৃষক খেতমজুর আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। শ্রেণি আন্দোলনেই চূর্ণ হবে বিভাজনকারী সম্প্রদায়িক শক্তি।
এদিন সম্মেলনে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক খসড়া রিপোর্ট উত্থাপন করেন কৃষকসভার জেলা সম্পাদক মেঘলাল সেখ। অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ নদীয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম সাদী, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক সুকুমার চক্রবর্তী। অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন এসএফআই’র নদীয়া জেলা কমিটির সম্পাদক সবুজ দাস। সম্মেলনে  মোট ৩৩৬ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা শুরু হয়েছে। 
 

Comments :0

Login to leave a comment